ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০ কার্তিক ১৪৩১

কক্সবাজারের ন্যাড়া পাহাড়

আগর বাগানের গাছ বিক্রি করে দিচ্ছে রোহিঙ্গারা

​​​​​​​এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার

প্রকাশিত: ০০:২০, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

আগর বাগানের গাছ বিক্রি করে দিচ্ছে রোহিঙ্গারা

কক্সবাজারের ন্যাড়া পাহাড়ে আগর বাগানের গাছ কেটে বিক্রি করা হচ্ছে

ন্যাড়া পাহাড়ে বন সাজানোর দায়িত্ব নিয়ে উপকারভোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কতিপয় বনকর্মীর সহযোগিতায় তাদের রোপণ বহু যত্নে বড় করা গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে অবৈধ দখলদার রোহিঙ্গারা। কলাতলী বড় ছড়ার সরকারি আগর বাগানসহ সুফল প্রকল্পের বাগানের গাছ কেটে রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে বসবাস করছে সেখানে। ইতোমধ্যে ৬৫ পরিবার বাগান সাবাড় করে বসতি গেড়েছে।

জানা যায়, বর্তমানে রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ পাহাড় শ্রেণির জায়গা দখল করে শহর শহরতলীতে বসবাস করে চলেছে। তাদের পতিরোধ করতে চাইলে স্থানীয়দের বিরুদ্ধে মামলা টুকে দেয়ার হুঙ্কার দেওয়া হয়। পৌরসভার ঝিলংজার প্রতিটি ওয়ার্ডে রোহিঙ্গা বসতি রয়েছে। ওইসব এলাকায় জমি কিনে কেউ কেউ বহুতল ভবণ নির্মাণ আবার অনেকে সরকারি পাহাড় দখল করে অবৈধভাবে বসবাস করে যাচ্ছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে ভাড়া বাসাসহ রোহিঙ্গাদের একটি অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ওইসব পাহাড়ি এলাকা হচ্ছে শহরের চিহ্নিত পকেটমার ছিনতাইকারীদের আশ্রয়স্থল। তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে এসে বসতি স্থাপন করতে শুরু করেছে এসব জায়গায়। তবে প্রতিমাসে ওই রোহিঙ্গারা আশ্রয় ক্যাম্প থেকে রেশনও উত্তোলন করছে নিয়মিত।

জানা যায়, সুফল প্রকল্পের আওতায় ২০১০-২০১১ সালের স্থানীয় প্রান্তিক মানুষের মাঝে দেওয়া সরকারি আগর বাগানের গাছ কেটে ফেলছে কতিপয় বনকর্র্মী রোহিঙ্গারা। রাতে এসব মূল্যবান আগর গাছ কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। সেখানে এবং তার আশপাশের সুফল প্রকল্পের বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করা হচ্ছে। আবার রোহিঙ্গা বসতি গড়ে তুলতে সহায়তা করছে দায়িত্বরত ওই অসৎ বনকর্মীরা। ইতোমধ্যে ৬৫টি রোহিঙ্গা পরিবার সরকারি ওই পাহাড়ে স্থান করে নিয়েছে। এতে এক দিকে চরম আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বনবিভাগের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়া উপকারভোগীরা।

অন্যদিকে সরকারের মূল্যবান বনজসম্পদ (জমি) বেহাত হচ্ছে। তাই দ্রুত বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়াসহ জড়িত প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে আগর বাগান প্রকল্পের উপকার ভোগীরা।

জানা গেছে, লিংক রোড় বিট স্টেশন কাম চেক স্টেশনের আওতায় কক্সবাজার রেঞ্জের ঝিলংজা মৌজার কলাতলী বড়ছড়া কাইন্দা ভাঙ্গায় স্থাপিত ২০১০-২০১১ সালে সফুল প্রকল্পের আওতায় ১৫ হেক্টর জমিতে আগর বাগান গড়ে তুলে বন বিভাগ। চুক্তির ভিত্তিতে সেখানে স্থানীয় ৩৮ জন উপকারভোগীকেও যুক্ত করা হয়। যাদের মধ্যে চুক্তিনামা সম্পাদন হয়- যাতে তৎকালীন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বিপুল কৃষ্ণ দাশ, সহকারী বন সরংক্ষক কাজল তালুকদার, রেঞ্জ অফিসার সজল কান্তি পালসহ ঊর্ধ্বতন পক্ষ স্বাক্ষর করেন। প্রায় ১৩ বছর বাগান পরিচর্যা করে আগর গাছ বিক্রি করার সময় হলে বর্তমানে উক্ত বাগানের কর্মচারী ওয়াচার কাইছার আহামদ, রফিক, ছৈয়দ আলমসহ কয়েকজন মিলে রেঞ্জ কর্মকর্তার ইন্ধনে মূলবান আগর গাছ কেটে সাবাড় করা হচ্ছে।

কলাতলী এবং কস্তরাঘাট বিট অফিসার কেচিংউ মারমা বলেন, আগর বাগানে নতুন করে কোন বনায়ন হচ্ছে না। হলেও সেটা অনেক যাচাই বাছাইয়ের পরে হবে। তবে আগর গাছ উঠেনি। কয়েকটি গাছ থাকতে পারে।

কারণ আগর গাছ সহজে হয় না। এখানে কোনো অনিয়মে কেউ জড়িত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কক্সবাজার রেঞ্জ অফিসার সমীর রঞ্জন বলেন, আগর বাগান বা তার আশপাশে সম্প্রতি কেউ কেউ জঙ্গল পরিষ্কার করছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। সে জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। একজন ঘর তৈরি করেছিল- সেই ঘরও ভেঙে দিয়েছি। গাছ কাটার কোনো খবর সত্য নয় দাবি করেন তিনি। আমাদের কেউ কোনো অপরাধে জড়ালে প্রমাণ সাপেক্ষে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

উপকারভোগী সালাউদ্দিন, নুরুল আলম মনু, আনোয়ার হোসেন, মো. আলাউদ্দিন, ইউচুফসহ অনেকে জানান, আমরা বহু কষ্ট অনেক টাকা খরচ করে আগর গাছ বড় করেছি। চুক্তি অনুযায়ী এখন আমরা গাছ বিক্রি করে লভ্যাংশ পাওয়ার কথা, কিন্তু আমরা জেনেছি বর্তমানে মূলবান আগর গাছ কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। এতে প্রকাশ্য কাইছার আহামদ, রফিক, ছৈয়দ আলম মিলে রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে গাছ কাটছে। শামসু মাঝি নামে এক রোহিঙ্গা মাঝির মাধ্যমে রাতের আঁধারে তারা সেখান থেকে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের নেতৃত্বে কলাতলী হতে শুকনাছড়ি, বড়ছড়া, কাইন্ধাভাঙ্গা এলাকায় পর্যন্ত ৬৫টি রোহিঙ্গা পরিবারকে বসানো হয়েছে। তারা প্রত্যেক রোহিঙ্গাদের বনের জমি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বর্তমানে আগর বাগানের গাছ কেটে আমাদের বিপুল টাকার ক্ষতি করছে তারা।

একাধিক উপকারভোগী সূত্রে জানা গেছে, কায়সারকে কয়েক বছর আগে অন্যত্র বদলি করা হলেও বদলিকৃত স্টেশনে না গিয়ে এখানে অপরাধের সাম্রাজ্য বানিয়েছে। বনের জমিতে থাকা রোহিঙ্গা পল্লীতে অবাধে ইয়াবা অস্ত্র এবং নানান অপরাধ কর্মকান্ড চলছে। বিষয়ে আমরা বন বিভাগকে মৌখিকভাবে জানালেও কোনো কাজ হচ্ছে না। কলাতলী বিট অফিসের কর্মচারী কায়সার আহামদ জানান, আগর বাগান এখন নাই বললেও চলে। কয়েকটি গাছ আছে মাত্র। আর এখানে বন বিভাগ নতুন করে বনায়ন করছে। আর সেখানে কোনো রোহিঙ্গা নেই বলেও দাবি করেন তিনি। তবে কিছু ঘর বসেছে বলে স্বীকার করেন বনকর্মচারী কাইছার।

×