ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০ কার্তিক ১৪৩১

চৌমুহনী বাজারের ব্যবসায়ীরা ঝোপ বুঝে কোপ মারছেন

নোয়াখালীতে বেড়েছে চালের দাম

নিজস্ব সংবাদদাতা, নোয়াখালী

প্রকাশিত: ২১:৪৮, ২৫ অক্টোবর ২০২৪

নোয়াখালীতে বেড়েছে চালের দাম

.

বৃহত্তর নোয়াখালীর প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র চৌমুহনীসহ  পাশর্^বর্তী এক সময়ের নোয়াখালী জেলাধীন লক্ষ্মীপুর ফেনী পৌর এলাকার চালের বড় আড়ৎগুলোর অসাধু ব্যবসায়ীরা বন্যার অজুহাত  দেখিয়ে চালের দাম - টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন, যা খুচরা বাজারে -১০ টারও বেশি বাড়তি হয়েছে। বুধবার সরেজমিন চৌমুহনীর মহেষগঞ্জ রোড, কলেজ রোড, আড়ৎপট্টি এবং খাদ্যগুদাম সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, চাল ব্যবসায়ীরা ঝোপ বুঝে কোপ মারছেন।

অপরদিকে লক্ষ্মীপুর পৌর শহর এবং ফেনী পৌর শহরের হিন্দু মুসলিম বড় বড় চাল ব্যবসায়ীরা এভাবেই ঝোপ বুঝে কোপ মারছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে দোলাচল পরিস্থিতিতে রয়েছে প্রশাসন। অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস পার হতে চলেছে। প্রশাসনে শৃঙ্খলা অনেকটা ফিরে এসেছে। তবু অসাধু চাল ব্যবসায়ী মিল-মালিকরা পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও গত দেড় মাসে মানুষের খাদ্যের প্রধান অনুষঙ্গ চালে প্রতি কেজিতে অন্তত সাত টাকা দাও মেরেছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে সাধারণত তিন ক্যাটাগরির চাল পাওয়া যায়। মোটা চালের মধ্যে রয়েছে স্বর্ণা, চায়না ইরি ব্রি-২৮। মাঝারি চালের জাতগুলো হচ্ছে পাইজাম, লতা পারিজা এবং সরু চালের মধ্যে রয়েছে নাজির, কাটারিভোগ মিনিকেট। সাধারণ মানুষের চাহিদার বা পছন্দের মোটা জাতের চালের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিলাররা চালের মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন। ফলে বাজারে সরবরাহ কমেছে। অধিকাংশ চালের আড়তের মালিকের কাছে চাল না থাকারও প্রভাব পড়ছে। মোটা জাতের চালের দাম দ্রুত বাড়ছে। মৌসুম না থাকাকেও দাম বাড়ার কারণ মনে করছেন তারা। বিভিন্ন খুচরা বাজারে মোটা জাতের চাল পাওয়া গেলেও পাইকারি বাজার ঘুরে মোটা চাল তেমন দেখা যায়নি। হাতেগোনা কিছু দোকানে স্বর্ণা জাতের চাল পাওয়া গেলেও সেগুলো আগের কেনা চাল। সরেজমিন অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই মুহূর্তে খুচরা বাজারে সবচেয়ে কম দামে পাওয়া ব্রি-২৮ পাইজাম জাতের চাল।

বর্ণা প্রতি কেজি খুচরায় ৫৭-৫৮ পাইজাম চাল প্রতি কেজি ৫৮-৬০ টাকা। সরু চালের মধ্যে রয়েছে নাজির কাটারিভোগ। খুচরা বাজারে প্রতি কেজিমিনিকেটনামধারী চাল ৭০-৭৫ এবং নাজির বা কাটারি ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পর্যাপ্ত মজুত থাকলেও সংকটের অজুহাতে কেজিতে টাকা বাড়তি মুনাফা ব্যবসায়ীদের। নোয়াখালীর বৃহত্তম বাণিজ্যিক কেন্দ্র চৌমুহনী বাজারের এক চাল ব্যবসায়ী বলেন, ‘ আগস্টের পর একটি কুচক্রী অসাধু ব্যবসায়ী মহল বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। সরু জাতের চালের দাম নতুন করে তেমন একটা না বাড়লেও মোটা জাতের সব ধরনের চালের দাম কেজিতে - টাকা বেড়েছে। স্বর্ণা জাতের ৫০ কেজির এক বস্তা চালে ২০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে হাজার ৩০০, ২০০ টাকা বেড়ে প্রতি বস্তা পাইজাম বিক্রি হচ্ছে হাজার ৫৫০ সব থেকে বেশি ৩০০ টাকা বেড়ে প্রতি বস্তা ব্রি-২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে হাজার টাকায়। চালের দাম বাড়ার জন্য ব্যবসায়ীরা মিলারদের দুষলেও মিলাররা দুষছেন করপোরেট চাল ব্যবসায়ীদের। এসিআই, তীর, আকিজ, রূপচাঁদা, শেরপুরের আলাল গ্রুপ, মজুমদার প্রোডাক্টস লিমিটেড, সুমন অটোরাইস প্রোডাক্টসসহ বেশ কয়েকটি করপোরেট চাল কোম্পানির কারসাজিতে বাজারে মোটা চালের সংকট তৈরি হয়েছে। কোম্পানিগুলো মৌসুমের শুরুতে মাঠ থেকে ধান সংগ্রহ করে তাদের সুবিধামতো চাল করে বাজারজাত করে। এসব কোম্পানি কৃত্রিম সংকট তৈরি করলে বাজারে চালের দাম বেড়ে যায়।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা আমন মৌসুমের জাত। চাল বাজারে আসতে শুরু করে নভেম্বরের শেষে। আমন বোরো মৌসুমে হাইব্রিড জাতের কিছু মোটা ধান থাকলেও সেগুলো কৃষক মিল মালিকরা সাধারণত সরকারের কাছে বিক্রি করে দেন। কিছু মোটা চাল সরকারিভাবে আমদানি করা হয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিতরণের জন্য। বছরের এপ্রিল থেকে কোনো চাল আমদানি করা হয়নি। সরকারিভাবে আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত আমদানির পরিকল্পনা নেই। আবার কৃত্রিম সংকটে দেশের বৃহত্তম চাল সরবরাহকারী মোকামগুলোয় এখন মোটা চালের সরবরাহ নেই। স্থানীয় মিলার করপোরেট চাল ব্যবসায়ীদের মজুত-কারসাজির কারণে বাজারে মোটা জাতের সব ধরনের চালের সরবরাহ কমেছে। মাঠপর্যায়ে খাদ্য অধিদপ্তর অভিযান না চালানোয় সরবরাহ সংকট আরও তীব্র হয়েছে। ফলে মোটা জাতের চালের দাম কেজিতে - টাকা দাম বেড়েছে।  মৌসুমের সময়ে মোটা জাতের চালের দামটা একটু বেশি থাকে। কারণ অফ সিজন হওয়ায় ধান পাওয়া যায় না। কৃষক পর্যায়ে কিছু ধান থাকলেও তা মণপ্রতি ৪০০ টাকা বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। স্থানীয় মিলারদের কাছে ধান না থাকায় একচেটিয়া করপোরেট চাল ব্যবসায়ীদের ফায়দা। চালের বাজার অস্থির হওয়ার কারণ করপোরেট চাল ব্যাবসায়ীদের মজুত-কারসাজি। বাজারে চালের সংকট নেই।

কিন্তু বড় কোম্পানিগুলো হাট থেকে এজেন্টদের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করে এবং চালের বস্তার গায়ে মোড়ক বসিয়ে তারা ইচ্ছা অনুযায়ী চালের দাম নির্ধারণ করে। তা ছাড়া বছর জুড়ে চলা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযান গত দুই মাস ধরে বন্ধ। এই সুযোগ নিচ্ছে বহু মিলার। তাদের জন্যই চালের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। বাজারে নতুন ধান আসতে শুরু করেছে। এক মাসের মধ্যে চালের দাম থাকবে না। খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছেদেশব্যাপী আমাদের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চলমান রয়েছে। এগুলো চলমান থাকলে চালের দাম বাড়বে না। তার পরও যদি চালের দাম বাড়ে, তা হলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।

×