ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০ কার্তিক ১৪৩১

২০ বছরেও পুনর্নির্মাণ হয়নি সেতু

বাঁশের সাঁকোয় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার ১৩ গ্রামের মানুষ

নিজস্ব সংবাদদাতা, দাউদকান্দি, কুমিল্লা

প্রকাশিত: ১৫:৩৪, ২৫ অক্টোবর ২০২৪

বাঁশের সাঁকোয় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার ১৩ গ্রামের মানুষ

বাঁশের সাঁকোয় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করে মানুষ।

কুমিল্লার তিতাসে ভেঙে পড়ার ২০ বছর পরও নির্মাণ করা হয়নি সেতু। সেতুর ভেঙে পড়া অংশের ওপর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে ১৩ গ্রামের মানুষ যাতায়াত করছে। দুই পাড়ের গ্রামবাসীর উদ্যোগে প্রতি বছর বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

জানা যায়, উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের তাড়িয়াকান্দি থেকে সোনাকান্দা হয়ে নয়াকান্দি গ্রাম পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। সড়কটির মাঝ বরাবর একটি অর্ধভাঙা পাকা সেতুর ওপর বাঁশের সাঁকো রয়েছে। ভাঙা সেতুর দুটি অংশের মাঝখানে বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রায় ১৩ গ্রামের লোকজন ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে। নয়াকান্দি, ভাটিবন্দ, সোনাকান্দা, তড়িয়াকান্দি,বালুয়াকান্দি গ্রামের ফসলি জমির বর্ষার পানি ওই খালটি দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গোমতী নদীতে গিয়ে পড়ে।

জানা যায়, ১৯৯২ সালে জিয়ারকান্দি ইউনিয়ন নারান্দিয়া ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত ছিল। তৎকালীন জিয়ারকান্দি গ্রামে ইউনিয়ন পরিষদের অফিস থাকায় নারান্দিয়া ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামের লোকজনকে তাড়িয়াকান্দি-সোনাকান্দা ভায়া নয়াকান্দি সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হতো। তখনকার নারান্দিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন সেলিম চেয়ারম্যান সোনাকান্দা গ্রামসংলগ্ন খালে একটি পাকা সেতু নির্মাণ করেন। এরপর ২০০৪ সালের বন্যায় পাকা সেতুটি ভেঙে যায়।

বিগত ২০ বছরেও সেতুটি সংস্কার বা নতুন করে নির্মাণে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বর্তমানে ভেঙে পড়া সেতুর অংশের ওপর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে খালটি পারাপার হচ্ছে মানুষ।

নারান্দিয়া ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর বর্ষার আগে খালের ওপর ভাঙা সেতুর অংশে নয়াকান্দি ও সোনাকান্দা গ্রামবাসীর উদ্যোগে বাঁশের সাঁকো দেওয়া হয়। সেতুটি নির্মাণ না হওয়ায় নয়াকান্দি থেকে ভাটিবন্দ হয়ে তাড়িয়াকান্দি দিয়ে প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে সোনাকান্দা গ্রামে মালামাল আনতে হয়।

নয়াকান্দি ও সোনাকান্দা গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, নারান্দিয়া ইউনিয়নের কাল হলো গোমতী নদী । রাজনীতি ক্ষেত্রে এ নদী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। নদীর ওপারে চেয়ারম্যান হলে এপারের গ্রামগুলোর উন্নয়ন বন্ধ থাকে আবার এপারে চেয়ারম্যান হলে ওপারের গ্রামগুলো উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত থাকে। মূলত প্রতিহিংসার জনসেবার কারণে দীর্ঘ ২০ বছর সেতুটি পুনর্নির্মাণ করা হয়নি। 

নারান্দিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুজ্জামান খোকা জানান, ইউনিয়নের মধ্যে এটি একটি জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক। পাকিস্তান আমল থেকে এ সড়কটি মানুষ যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করে আসছে। আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর অর্ধেক রাস্তা তাড়িয়াকান্দি থেকে সোনাকান্দা আব্দুল হকের বাড়ি পর্যন্ত পাকাকরণ করা হয়েছে। খালের ওপর সেতু নির্মাণ ও বাকি অংশ পাকাকরণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

তিতাস উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, তাড়িয়াকান্দি থেকে নয়াকান্দি পর্যন্ত ১ হাজার ৮৫০ মিটার সড়ক রয়েছে। এটি এলজিইডির তালিকাভুক্ত রাস্তা। রাস্তাটির তাড়িয়াকান্দি থেকে সোনাকান্দা আব্দুল হকের বাড়ি পর্যন্ত ৭৫০ মিটার সড়কের পাকাকরণ কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া সড়কের ওপর ভেঙে পড়া সেতুটি নির্মাণের জন্য প্রাক্কলন ব্যয় নির্ধারণ করে তালিকা পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই একটা সুব্যবস্থা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এসআর

×