ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১

যশোরে টানা বৃষ্টিপাত

অতি বৃষ্টির কারণে এবার শীতের আগাম সবজি সরবরাহে বিলম্ব

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস

প্রকাশিত: ০০:২৫, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

অতি বৃষ্টির কারণে এবার শীতের আগাম সবজি সরবরাহে বিলম্ব

দেশের চাহিদার সিংহভাগ সবজি সরবরাহ করে যশোরের চাষিরা

দেশের চাহিদার সিংহভাগ সবজি সরবরাহ করে যশোরের চাষিরা। তবে টানা বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবজির খেত ও বীজতলা। কয়েক দফায় সবজির চারা রোপণ করেও বাঁচানো যায়নি। দেরিতে রোপণ করায় শীতের আগাম মৌসুমি সবজি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়াতে প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারগুলোতে। ফলে সব ধরনের সবজির দাম বেশ ঊর্ধ্বমুখী।
চাষিরা বলছেন, বেশ কয়েকবার টানা বৃষ্টির কারণে সবজির খেত নষ্ট হওয়ায় উৎপাদন কমেছে। এতে খরচ উঠাতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা। সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী বাজারে দ্রুতই সবজি সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে ক্রেতাদের নাগালের থাকবে সবজির দাম।
যশোর সদরের চুড়ামনকাটি, বারিনগর হৈবতপুর এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে বিস্তৃর্ণ মাঠ জুড়ে সবজি থাকার কথা সেখানে মাঠে সবজি কম। মাঠ জুড়ে সবজি চাষ হলেও সেগুলোতে ফলন নেই। কিছু কিছু খেতে সবজি দেখা গেলেও সেগুলো পর্যপ্ত না। আবার কিছু কিছু জায়গায় সবজি চাষ করার জন্য খেত প্রস্তুত করতেও দেখা গেছে।
 হৈবতপুর গ্রামের কৃষক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘যে সময়ে জমিতে সবজির থাকার কথা, সেই সময়ে সবজির চাষ শুরু করছি। এতদিন বৃষ্টির কারণে আবাদ করতে পারেনি। দুই মাস ধরে জমি ফেলানো। জমিতে চাষ দিলেই বৃষ্টিতে জমির জো (মাটির উর্বরতা) নষ্ট করে দেয়। পাশেই জুম্মন আলীর জমি। তিনি বলেন, দেড় বিঘা জমিতে মুলা লাগিয়েছি, প্রথমবার বীজ রোপণের সপ্তাহখানিক পর হাঁটু পানি জমে। এতে প্রথমবার সব মার। দ্বিতীয়বার লাগালাম, সেইবারও বৃষ্টি। পরে লাগানোর পর চারা বেঁচে আছে। সেই মুলা অল্প অল্প করে বাজারে বিক্রি করছি। আমার মতো মাঠে সবজি নষ্ট হওয়াতে বাজারে চাহিদা অনুযায়ী সবজি তুলতে পারছি না।’
দেশের অন্যতম বৃহৎ সবজি বাজার যশোরের সাতমাইল-বারীনগর। যশোর শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে এই সবজি হাট। বর্তমানে প্রতিদিন বসে হাটটি। তবে রবিবার ও বৃহস্পতিবার চাঙা।
রবিবার সরেজমিনে দেখা যায়, ছয় থেকে সাতটি ট্রাকে সবজি ওঠানোর কাজে ব্যস্ত ব্যাপারী ও শ্রমিকেরা। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অন্য বছরের এই সময় হাটের দিনে ৩০ থেকে ৩৫টি ট্রাকে সবজি ওঠানো হতো। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলা শহরে এই সবজি পাঠানো হতো। এ বছর সেখানে সবজির সরবরাহ কমে গেছে।

আলমগীর হোসেন নামে এক কৃষক বলেন, ‘এবার দুই বিঘা জমিতে বেগুন, দেড় বিঘা জমিতে মুলা আর আধা কাঠা জমিতে মরিচ চাষ করেছি। অতি বৃষ্টির কারণে চার দফা এই সবজির গাছগুলো রোপণ করতে হয়েছে। বারবার সবজির চারা রোপণ করায় সবজির গাছ বড় হতে দেরি হয়েছে। এই সময়ে বাজারে ভরপুর সবজি থাকার কথা থাকলেও উৎপাদন কম হওয়াতে বাজারে সবজি নেই। চাহিদা মতো সবজি উৎপাদন না হওয়াতে বাজারে সবজির দাম বেশি।’
বাজারের ব্যাপারী মতিয়ার হোসেন বলেন, এক মাস ধরে বাজারে সবজির সরবরাহ কম। বছরের এ সময় প্রতি হাট থেকে ৫০-৬০ ট্রাক সবজি দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হতো। আর এখন যাচ্ছে ১০ থেকে ১২ ট্রাক সবজি। বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দামও চড়া। কৃষক সোলাইমান মুন্সী বলেন, প্রতিটি সবজি চাষে অন্তত ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ খরচ বেড়েছে। ফসল মারা যাওয়ার সঙ্গে গত বছরের তুলনায় এ বছর সার, কীটনাশক, সেচ ও শ্রমিকের খরচ বেড়েছে। আবহাওয়ার কারণে ফসলের উৎপাদন কম হয়েছে। ফলে বাজারে যতটুকু সবজি উঠছে, তার দাম চড়া হয়ে যাচ্ছে।’
এ ছাড়া গত মাসের দুই দফা অতি বৃষ্টিতে এ বছর যশোরে গ্রীষ্মকালীন টমেটো খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টিতে গত মাসে জেলায় জমির বেশির ভাগ টমেটো গাছ মরে গেছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের চিহ্নিত করে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাছান আলী বলেন, চলতি মৌসুমে যশোর সদর উপজেলার কৃষকরা সাধ্যমতো টমেটো চাষ করে। ফলনও দেখা দেয় ভালো। কিন্তু গত মাসে দুই দফার অতিমাত্রার বৃষ্টিপাতে অধিকাংশ খেতের টমেটো নষ্ট হয়ে গেছে।

×