স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভিতরে পানি ও স্যাঁতস্যাতে পরিবেশ
মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা ব্যবস্থার বেহাল দশা চলছে। সেখানে যারা চিকিৎসা নিতে আসেন তাদের বেশিরভাগ রোগীই বাড়ি ফিরছেন মুখ ভার করে। পিরোজপুরের অন্যতম বড় উপজেলা মঠবাড়িয়ায় ১টি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন রয়েছে। উপজেলার প্রায় ৪ লাখ মানুষের জন্য ৫০ শয্যার এই সরকারি উপজেলা হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নতিকরণের কাজ চলমান থাকায় হাসপাতারের বাউন্ডারির মধ্যেই একটি পরিত্যক্ত বিল্ডিংয়ে চলছে খুব খারাপ অবস্থায় ভর্তি রোগী ও জরুরি চিকিৎসা সেবা।
কিন্তু অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম, চিকিৎসক সংকট ও ওষুধ বিপণন প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্যে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত ও রোগীদের বিড়ম্বনার অভিযোগ অহরহই পাওয়া যায়। এদিকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের নির্মাণাধীন কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, সরকারি এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য চিকিৎসা যন্ত্রপাতিসহ সবকিছুর জোগান সরকার দিলেও দায়িত্বরত চিকিৎকদের উদাসীনতা ও আন্তরিকতার অভাবে পাচ্ছে সঠিক চিকিৎসা সেবা। অনিয়মিত চিকিৎসা সেবা দেওয়ায় রোগীরা ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে রোগীদের অভিভাবকদের। সরকারের দেওয়া উন্নতমানের যথেষ্ট যন্ত্রপাতি থাকলেও নেই কোনো প্যাথোলজি সেবা। এক সময় অপারেশন থিয়েটারে প্রতিদিন নিয়মিত অপারেশন হলেও এখন নেই কোনো অপারেশনের ব্যবস্থা। সরকারের দেওয়া কোটি টাকা মূল্যের ডিজিটাল এক্সরে মেশিন থাকলেও রোগীরা পাচ্ছে না কোনো এক্সরে সেবা।
দায়িত্বরত চিকিৎসকদের কেউ কেউ আবার হাসপাতাল সম্মুখে বিভিন্ন ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে নিয়মিত রোগী দেখেন এবং সেখানেই রোগীদের পরীক্ষা নীরিক্ষা করান। জরুরি বিভাগে বিনা প্রয়োজনে বরিশালে রোগী প্রেরণের অভিযোগও রয়েছে এ হাসপাতালের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও হাসপাতালের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ডায়গোনেস্টিক সেন্টারের দালালের দৌরাত্ম্য। গত কয়েকদিন সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের টয়লেটের বেহাল অবস্থা, ভর্তি রোগীদের রুমগুলো অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্নতায় ভরা, ময়লাভর্তি বালতি পড়ে আছে ২-৩ দিন ধরে।
সাপলেজা ইউনিয়নের বাদুড়তলী গ্রামের রোগী আবু জাফর রাকিব (২৪) বলেন, হাসপাতালের রোগীকে দেওয়ার খাবার খুবই নি¤œমানের যা খাওয়ার উপযোগী নয়। আমদের বাইর থেকে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে। পৌর শহরের স্থানীয় বাসিন্দা সিদ্দিকুর রহমান জানান, সরকারি হাসপাতালে কাক্সিক্ষত সেবা না পেয়ে রোগীরা যে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে তা বোঝা যায় বেসরকারি ক্লিনিকের বাড়বাড়ন্ত দেখে। উপজেলা সদরে বেশ কয়েকটি বড় বড় ক্লিনিক গড়ে উঠেছে, রোগীও পাচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাসপাতালের পরিবেশ নেই। ভেতরে-বাইরে নোংরা, আবর্জনা। যেখানে সেখানে অব্যবহৃত, নষ্ট হওয়া জিনিসপত্রের স্তূপ। কোনো কোনো জায়গা মাসের পর মাস পরিষ্কার করা হয়নি।
মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কাজী এ. কে.এম রাসেল কিছু অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কথা স্বীকার করে বলেন, ২০০৬ সালে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নতিকরণের কারণে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলমান থাকায় কোনো রকম একটি আবাসিক ভবনে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন হাসপাতালে ৩০ জন ডাক্তারের পদ থাকলেও বর্তমানে ৯ জন চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পদ ৪ জন থাকলেও বর্তমানে আছেন একজন। অপরদিকে রুম সংকটের কারণে এক্সরে মেশিনসহ অন্য সচল যন্ত্রপাতির সঠিক ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না।