ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১

বঙ্গভবনের সামনে নিরাপত্তা জোরদার

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:২৬, ২৩ অক্টোবর ২০২৪

বঙ্গভবনের সামনে নিরাপত্তা জোরদার

বঙ্গভবনের সামনে ব্যারিকেড ও কাঁটাতার বসিয়ে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে

বঙ্গভবনের সামনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ চেয়ে মঙ্গলবার রাতে বঙ্গভবনে প্রবেশের চেষ্টার ঘটনা ও পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার পরই  সেখানে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে দুই প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। বঙ্গভবনের প্রধান ফটকের সামনে সশস্ত্র অবস্থায় বিপুল সংখ্যক এপিবিএন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে এপিসি, জলকামানসহ রায়ট কার। রাতেও একই দৃশ্য দেখা গেছে।
বঙ্গভবন এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শাহরিয়ার আলী জানান, মঙ্গলবার রাতে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে। হামলায় ২৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তিনি জানান, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের ভিত্তিতে বুধবার সকালে থেকে বঙ্গভবন এলাকায় আরও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত আন্দোলনকারী বা বিক্ষুব্ধ জনতাকে দেখা যায়নি। তবে আমরা সতর্ক আছি। 
এ ব্যাপারে বিজিবি সদর দপ্তরের উপমহাপরিচালক (মিডিয়া) কর্নেল মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী বঙ্গভবন এলাকায় দুই প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তারা অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সহযোগিতা করবেন।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, ডিএমপির নির্দেশনা অনুযায়ী বুধবার সকাল থেকে বঙ্গভবন এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি ও যান চলাচল স্বাভাবিক।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বঙ্গভবন এলাকায় বুধবার সকাল থেকে বিক্ষুব্ধ জনতা বা আন্দোলনকারীদের কাউকে না দেখা গেলেও নিরাপত্তা জোরদারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাধিক বাহিনীর সদস্যরা সশস্ত্র অবস্থায় পাহারা দিচ্ছিলেন। সেখানে বিষয়টি ছিল স্পষ্ট। গতকালের উদ্ভূত পরিস্থিতির ঘটনার পর আজ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গণমাধ্যমকর্মীদের বাড়তি উপস্থিতি দেখা গেছে। সেখানে সেনা সদস্যদের সংখ্যা ছিল চোখের পড়ার মতো। পাশে ছিল সারি সারি সাঁজোয়া যান।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। তিনি পালিয়ে যাওয়ার পরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি।
তবে সম্প্রতি মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি জানান, তিনি শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র নেই। রাষ্ট্রপতি বলেন, বহু চেষ্টা করেও (পদত্যাগপত্র সংগ্রহ করার) আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়তো সময় পাননি।
এরপর নতুন করে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সরকার পতনে নেতৃত্বদানকারীরা। সোমবার দিনগত রাতে ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেন  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
 পোস্টের ক্যাপশনে তিনি লেখেন, সন্ত্রাসী ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ও ফ্যাসিবাদের দোসর রাষ্ট্রপতি চুপ্পুর পদত্যাগের দাবিতে ছাত্র-জনতার গণজমায়েত। এর পর মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে বিভিন্ন ব্যানারে বিক্ষুব্ধ জনতা বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে স্লোগান দেন।
মঙ্গলবার রাত ৮টা পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিকই ছিল। তবে এর পর আন্দোলনকারীদের একটি দল বারবার বঙ্গভবনে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে। ব্যর্থ হয়ে বঙ্গভবনের সামনের নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন একদল বিক্ষোভকারী। তবে সেনাবাহিনী ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কঠোর অবস্থানের ফলে তারা কেউ ভেতরে ঢুকতে পারেননি।
পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিক থেকে এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। এর পর রাত ১০টার দিকে পুলিশের ওপর এবং পুলিশের গাড়িতে হামলা করেন আন্দোলনকারীরা। হামলায় বেশ কয়েক পুলিশ সদস্য আহত হন। ডিএমপি সূত্র জানায়, বিক্ষোভকারীদের হামলায় ২৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে।

×