ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১

কেশবপুরে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতায় দুই হাজার হেক্টর জমির আমন নষ্ট

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেশবপুর, যশোর

প্রকাশিত: ২৩:২৯, ২২ অক্টোবর ২০২৪

কেশবপুরে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতায় দুই হাজার হেক্টর জমির আমন নষ্ট

দুই হাজার হেক্টর জমির আমন নষ্ট

এবারের দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় যশোরের কেশবপুরে এক হাজার ৮শ৩০ হেক্টর আমনের খেত এবং ৩শহেক্টর সবজি খেত পানিতে তলিয়ে গেছে এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬০ কোটি টাকা জলাবদ্ধতার কারণে খেতের ফসল, ঘরবাড়ি, পুকুর ঘের পানিতে তলিয়ে যাওয়া সর্বহারা কৃষকের বুকফাটা হাহাকারে কেশবপুরের বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবারের অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় কেশবপুরের ১৪৪টি গ্রামের মধ্যে ১০৪টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায় মাস যাবত দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতায় হাজার ৮শ৩০ হেক্টর জমির আমন ধান, ২শ৩৯ হেক্টর সবজি, ১৮.৫০ হেক্টর মরিচ, ১৮ হেক্টর হলুদ, ১২. হেক্টর পান, ৪৫ হেক্টর তরমুজ, . হেক্টর আখ, হেক্টর তুলা হেক্টর  পেঁয়াজের খেত তলিয়ে ফসল নষ্ট হওয়ায় কৃষকের মধ্যে হায়হায় রব বিরাজ করছে হিসেব মতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬০ কোটি টাকায় এই ঘাটতি কোনোভাবেই কৃষকের কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা নেই বছর আমনের আবাদ করা হয়েছিল হাজার ৮শহেক্টর জমিতে এরমধ্যে ধানের খেত নষ্ট হয়েছে হাজার ৮শ৩০ হেক্টর

মধ্য আগস্ট থেকে শুরু করে চলতি মাসেও মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে থেমে থেমে অতিবৃষ্টির কারণে কেশবপুর পৌর সদরসহ উপজেলার অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে স্থায়ী জলাবদ্ধতায় সৃষ্টি হয়েছে নদী মরে যাওয়ায় বদ্ধ পানি সরছে না গত তিন মাস যাবত পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় দেড় লাখ মানুষ মাঝেমধ্যে রোদে কিছুটা পানি কমলেও টানা বৃষ্টির ফলে আবারও পানি বৃদ্ধি পেয়ে জনদুর্ভোগ বেড়ে যাচ্ছে নদ-নদী, খাল-বিলসহ নিচু এলাকার উপচে পড়া পানিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে গিয়ে বসতঘরের মধ্যে হাঁটু পানি জমে রয়েছে

এরইমধ্যে যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের কেশবপুর সদরের মধ্যকুল এলাকায় সড়কের দুধারে টংঘর বেঁধে আশ্রয় নিয়েছে দেড় শতাধিক পরিবার ছাড়া বিভিন্ন উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে আরও তিন শতাধিক পরিবার অন্যরা তাদের বসতঘরের মধ্যে মাচান তৈরি করে সেখানে বসবাস করছেন তাদের চলাচলের একমাত্র বাহন হলো কলার ভেলা

উপজেলার জলাবদ্ধ গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে, কেশবপুর পৌর সদরের মধ্যকুল খানপাড়া, বিশ্বাসপাড়া, মোড়লপাড়া, সরদারপাড়া, সাহাপাড়া, মাঝেরপাড়া, হাবাসপোল, কেশবপুর সদরের সাহাপাড়া, ভবানীপুর, আলতাপোল, বালিয়াডাঙ্গা, ব্রম্যকাটি, সাগরদাঁড়ি, বগা, নেহালপুর, রেজাকাটি, বড়মহাদেবপুর, শুড়িঘাটা, গৌরীপুর, মজিদপুর, গৌরিঘোনা, চুয়াডাঙ্গা, পাঁজিয়া, গড়ভাঙা, নেহালপুর, বাঁকাবর্শি, ভেরচি, সরসকাটি, ভোগতি নরেন্দ্রপুর, ভরত ভায়না, রামচন্দ্রপুর গ্রামসহ ১০৪টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গত তিন মাস যাবত স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে গ্রামগুলোর মধ্যে কোনো কোনো গ্রাম আংশিক এবং অন্য গ্রামগুলো সম্পূর্ণভাবে পানিতে প্লাবিত হয়েছে

দীর্ঘ তিন মাস ধরে বন্যার পানিতে গ্রামগুলো তলিয়ে থাকায় বিশুদ্ধ পানি খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে এদিকে গরু রাখার জায়গা না থাকায় এবং গোখাদ্য সংকটের কারণে খামারিরা তাদের পশু পানির দামে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছে এতে লোকসানের মুখে পড়েছে খামারিরা এই পর্যন্ত সরকারিভাবে তেমন কোনো সহায়তা না পেয়ে সড়কের পাশে টংঘর বেঁধে আশ্রয় নেওয়া লোকজন কচুর পাতা সংগ্রহ করে তরকারির চাহিদা মেটাচ্ছে শিশুরা পচাবাসী খাদ্য খেয়ে ডায়রিয়া আমাশাসহ বিভিন্ন পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে

পানিবন্দি মানুষেরা জানান, পানিতে চলাফেরা করায় তারা জ্বর, কাশি, ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এই পর্যন্ত সরকারিভাবে চিকিৎসার জন্য কোনো মেডিক্যাল টিম পানিবন্দি এলাকায় পাঠানো হয়নি বলে তাদের অভিযোগ এদিকে বন্যার পানিতে ১৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠায় সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে এতে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে বলে শিক্ষকরা জানান

উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যা দুর্গত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে শতাধিক মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে অন্যদের তালিকা করা হচ্ছে ওই তালিকা হাতে পেলে তাদের মধ্যে চাল বিতরণ করা হবে তবে জলাবদ্ধ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে জানা যায়, জলাবদ্ধ অধিকাংশ পরিবার এখনো সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো সাহায্য  তারা পায়নি

কেশবপুর উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রোস্তম আলি বলেন, এবারের বন্যায় কেশবপুর উপজেলায় হাজার ৮শ৩০ হেক্টর অমনের খেত এবং ৩শহেক্টর সবজি খেত তলিয়ে গেছে এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬০ কোটি টাকা তবে আমন উৎপাদনে ক্ষতি হলেও কেশবপুরে খাদ্যের কোনো ঘাটতি হবে না

কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী সুমন শিকদার বলেন, এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে মৎস্য ঘের নির্মাণ এবং আফার ভদ্রা, বুড়িভদ্রা হরিহর নদীতে পলি জমে নদী ভরাট হওয়ার ফলে সম্প্রতি অতিবৃষ্টিতে কেশবপুরে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে উপজেলার অধিকাংশ গ্রামগুলো জলাবদ্ধ পানি নিষ্কাশনের জন্য এরই মধ্যে আফার ভদ্রা, বুড়িভদ্রা হরিহর নদীতে ভাসমান ড্রেজার দিয়ে খনন কাজ শুরু করা হয়েছে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পানি কমতে শুরু করবে বলে তিনি আশা করছেন

কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন জানান, কেশবপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে এই পর্যন্ত শতাধিক মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে বাকিদের তালিকা হাতে পেলে তাদেরও ত্রাণ দেওয়া হবে সরকারি সহায়তার কোনো অভাব নেই

×