ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১

নিরাপদ সড়ক দিবসের আলোচনায় উপদেষ্টা ফাওজুল কবির

তরুণদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ নতুন করে পথ দেখিয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৩৫, ২২ অক্টোবর ২০২৪

তরুণদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ নতুন করে পথ দেখিয়েছে

ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি কাজ করছে শিক্ষার্থীরাও।

‘ছাত্র-জনতার অঙ্গীকার, নিরাপদ সড়ক হোক সবার’ প্রতিপাদ্য নিয়ে মঙ্গলবার সারাদেশে পালিত হয়েছে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস। সরকারি ও বেসরকারিভাবে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করা হয় দিবসটি। কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। আলোচনা সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা বলেন, ‘২০১৮ সালের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান ও পরবর্তীতে সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষার্থে তরুণ সমাজের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ আমাদের নতুন করে পথ দেখিয়েছে। এ সময় তিনি বলেন, তরুণদের নির্দেশনা নিরাপদ সড়ক গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।’
সড়ক দুর্ঘটনাকে কেবল পরিসংখ্যানের মাধ্যমে তুলনা না করে মানবিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘সকল মৃত্যুই বেদনার। কোনো মৃত্যুই ক্ষতিপূরণ দিয়ে মাপা যায় না। তাই নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে পরিবহন মালিক, শ্রমিক, যাত্রী, পথচারী নির্বিশেষে সবার এ সংক্রান্ত আইন ও বিধিবিধান জানা ও মেনে চলা দরকার।’ এ সময় নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকল্পে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার পাশাপাশি নিরাপদ সড়ক কার্যক্রম এগিয়ে নিতে ও যানজট নিরসনে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যখন একটি স্বৈরাচারী সরকার ছিল, তখন মনে করেছিলাম, এর শেষ দেখে যেতে পারব না। কিন্তু জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেখিয়ে দিয়েছে স্বৈরাচারেরও পতন সম্ভব। আমরা জাতি হিসেবে একটি সন্ধিক্ষণে আছি। সন্ধিক্ষণ বলার কারণ হচ্ছে, একটি সময় থেকে অন্য আরেকটি সময়ে উত্তরণের বেগে আছি। আমরা মনে করি, আমাদের প্রজন্ম অনেক কিছুতে ব্যর্থ হয়েছে। এর বড় দৃষ্টান্ত সড়কের ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে না পারা।
সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান অযোগ্য ২৫ হাজার চালককে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার জন্য তালিকা দিয়েছিলেন বলে অনুষ্ঠানে জানান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘২০০৩ বা ২০০৪ সালের দিকে সড়ক নিরাপত্তাবিষয়ক একটি বৈঠকে আমি ছিলাম। সেখানে একজন বিশেষ ব্যক্তি ছিলেন, তিনিও একমত হলেন সড়ক আমাদের নিরাপদ করতে হবে। ড্রাইভারদের খুব ভালো মানের ড্রাইভার হতে হবে। এরপর আমি যখন বিআরটিএর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পেলাম, তখন সেই ভদ্রলোক ২৫ হাজার চালকের একটি তালিকা নিয়ে এসে বললেন, এদের সবাইকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হবে। তার নাম শাজাহান খান।
ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, শাজাহান খান শেষ হয়ে গেছে এটা মনে করার কোনো কারণ নাই। শাজাহান খান এখনো আছে। আমি শুধু একটা নাম হিসেবে শাজাহান খান বললাম, যারা অযোগ্য মানুষকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার জন্য চেষ্টা করে যান। সেদিন শাজাহান খান বললেন, রাস্তায় ড্রাইভার যদি গরু আর বলদ চিনে তাহলেই হবে। মানুষ চেনার কোনো দরকার নাই। এটা যদি একজন সড়ক খাতের নেতার বক্তব্য হয় শেষ পর্যন্ত পরিণতি কী হবে সেটা আমরা অনুমান করতে পারি।
জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশের ছাত্ররা পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু একটা কাজ করে অর্থ উপার্জন করবে বা কিছু কাজ করে বাবা-মায়ের বোঝা লাঘব করবে সেই সুযোগটা নেই। আমরা চেষ্টা করছি ট্রাফিক দিয়ে শুরু করতে। আমরা ৩০০ জন শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সড়ক নিরাপত্তার কাজে আনতে চাই। এতে অন্তত সড়কটা নিরাপদ হোক এবং তারা কিছু পয়সা উপার্জন করুক। তারা নিজেদের আংশিক খরচ নিজেরা মেটাতে পারবে।
অনুষ্ঠানে ২০১৮ সালের ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের’ সদস্য সচিব, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি তানজিদ মো. সোহরাব রেজা তার বক্তব্যে সড়ক ব্যবস্থাপনা খাতে নৈরাজ্যের নানা পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা কোনোভাবেই দৈবাৎ ঘটনা নয়। প্রতিদিন গাড়ি চাপা দিয়ে মানুষ মেরে ফেলাকে আমি বলব অবকাঠামোগত হত্যা। এখানে পলিসি লেভেলের ভুল তো রয়েছেই, সঙ্গে রয়েছে প্রায়োগিক দুর্বলতা।’
অনুষ্ঠানে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্র্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ সরকারের করা সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাতিলের দাবি জানান শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি নিশিতা জাহান। এছাড়া পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন।
এদিকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে রাজধানী ঢাকার ২৫টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে দিনব্যাপী (সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত) জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে জেস টায়ার। মঙ্গলবার ‘সড়কের নিরাপত্তা আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রয়াস’ এই লক্ষ্য সামনে রেখে জেস টায়ারের ৩০০ জন কর্মী এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। মহাখালী রেলগেট, যাত্রাবাড়ী মোড়, শনিরআখড়া-চিটাগাং রোড, ফার্মগেট, বনানী চৌরাস্তাসহ রাজধানীর ২৫টি পয়েন্টে এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

×