ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১

ভবদহ এলাকায় তিন মাস ধরে জলাবদ্ধতা

মণিরামপুরে দুর্বিষহ জীবন

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস

প্রকাশিত: ২১:৩৯, ২২ অক্টোবর ২০২৪

মণিরামপুরে দুর্বিষহ জীবন

যশোরের কেশবপুরে পানিতে তলিয়ে যাওয়া জমি  ও মণিরামপুরে রাস্তার ধারে শৌচাগার ও পানিতে ডুবে যাওয়া নলকূপ

মণিরামপুরের পানিবন্দি ভবদহ এলাকার তিন ইউনিয়নের বেশিরভাগ গ্রাম পানিতে তলিয়ে যাওয়ায়  শৌচাগার ও বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এতে করে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে ভুক্তভোগীরা। দিন কয়েক পূর্বে কিছু ল্যাট্রিন ও নলকূপ স্থাপন করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। উপজেলার কুলটিয়া, নেহালপুর ও দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নে সম্প্রতি ভারী বৃষ্টিতে বাড়ি ঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এলাকার হাজারো মানুষ ঠাঁই নিয়েছেন রাস্তার উপর ও বিভিন্ন স্কুলের কক্ষে।

মঙ্গলবার দুর্গত এলাকার মণিরামপুর উপজেলার কুলটিয়া ইউনিয়নের লখাইডাঙ্গা, কুলটিয়া, সুজাতপুর, হাটগাছা, বাজেকুলটিয়া, মহিষদিয়া, আলীপুর, পোড়াডাঙ্গা ও পদ্মনাথপুর, নেহালপুর ইউনিয়নের পাঁচাকড়ি, বালিধা ও নেহালপুর এবং দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের কুশখালী, আসাননগর, বাহিরঘরিয়া, দত্তকোনা, কাজিয়াড়া, বাজিতপুর, কামিনীডাঙ্গা গ্রাম ঘুরে এসব চিত্র চোখে পড়ে। ওই এলাকার অধিকাংশ বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। শৌচাগার ও নলকূপগুলোর বেশিরভাগ পানির নিচে। কেউ কেউ বাঁশ ও চট দিয়ে পানির উপর ঝুলন্ত শৌচাগার  তৈরি করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শৌচকার্য করতে বাধ্য হচ্ছেন।
অপরদিকে ঘরবাড়িহারা এসব দুর্গত মানুষ বসতভিটা ছেড়ে নেহালপুর-কালিবাড়ী টু নওয়াপাড়া সড়কের ওপর টংঘর বানিয়ে গবাদিপশুর সঙ্গে মিলে বসবাস করছেন। ঘরের এক পাশে গরু-ছাগল আরেক পাশে চৌকি বানিয়ে রাত যাপন করছেন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই চলছে রান্না, খাওয়া-দাওয়া। হাটগাছা গ্রামের মিলন  বৈরাগী, ফুগী ম-ল, মান্দারী মল্লিক, অধীর ম-ল, ক্ষুদিরাম বিশ্বাস, মালতি বালাসহ একাধিক ভুক্তভোগীরা প্রশ্ন করেন, আমাদের দুর্দশা কি কোনোদিন যাবে না?  জলই আমাদের শেষ করে ফেলল। হাটগাছা গ্রামের শিমুল  বৈরাগী জানান, টয়লেট আর খাবার পানির সংকট দেখা দেওয়ায় চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছেন এলাকার মানুষ।
কুলটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র রায় পানিবন্দি মানুষকে বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী জয়দেব দত্ত জানান, সংকট নিরসনে এ পর্যন্ত দুর্গত এলাকায় ১০ টিউবওয়েল ও ৪০ অস্থায়ী ল্যাট্রিন স্থাপনসহ ৫ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট (হ্যালোজেন) বিতরণ করা হয়েছে। 

কেশবপুরে দুই হাজার হেক্টর জমির আমন নষ্ট
নিজস্ব সংবাদদাতা, কেশবপুর, যশোর থেকে জানান, এবারের দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় যশোরের কেশবপুরে এক হাজার ৮শ’ ৩০ হেক্টর আমনের খেত এবং ৩শ’ হেক্টর সবজি খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬০ কোটি টাকা। জলাবদ্ধতার কারণে খেতের ফসল, ঘরবাড়ি, পুকুর ঘের পানিতে তলিয়ে যাওয়া সর্বহারা কৃষকের বুকফাটা হাহাকারে কেশবপুরের বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবারের অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় কেশবপুরের ১৪৪টি গ্রামের মধ্যে ১০৪টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রায় ৩ মাস যাবত দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতায় ১ হাজার ৮শ’ ৩০ হেক্টর জমির আমন ধান, ২শ’ ৩৯ হেক্টর সবজি, ১৮.৫০ হেক্টর মরিচ, ১৮ হেক্টর হলুদ, ১২.৩ হেক্টর পান, ৪৫ হেক্টর তরমুজ, ৩.৫ হেক্টর আখ, ৩ হেক্টর তুলা ও ১ হেক্টর  পেঁয়াজের খেত তলিয়ে ফসল নষ্ট হওয়ায় কৃষকের মধ্যে হায়হায় রব বিরাজ করছে। হিসেব মতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬০ কোটি টাকায়। এই ঘাটতি কোনোভাবেই কৃষকের কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা নেই। এ বছর আমনের আবাদ করা হয়েছিল ৯ হাজার ৮শ’ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে ধানের খেত নষ্ট হয়েছে ১ হাজার ৮শ’ ৩০ হেক্টর।
উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যা দুর্গত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে শতাধিক মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে। অন্যদের তালিকা করা হচ্ছে। 
ওই তালিকা হাতে পেলে তাদের মধ্যে চাল বিতরণ করা হবে। তবে জলাবদ্ধ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে জানা যায়, জলাবদ্ধ অধিকাংশ পরিবার এখনো সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো সাহায্য  তারা পায়নি। কেশবপুর উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রোস্তম আলি বলেন, এবারের বন্যায় কেশবপুর উপজেলায় ১ হাজার ৮শ’ ৩০ হেক্টর অমনের খেত এবং ৩শ’ হেক্টর সবজি খেত তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬০ কোটি টাকা।

×