সাতক্ষীরায় সেচপাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা
গত দুইমাস ধরে বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না পানিবন্দি অসহায় মানুষগুলো। হাজার হাজার পরিবারে দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। ঘরে খাবার নেই। রান্না করার জায়গা নেই। কাঁচা আর আধাপাকা ল্যাট্রিনগুলো পানিতে ডুবে আছে। বাড়ির উঠানে এখনো হাঁটু পানি। নলকূপগুলো ডুবে আছে। বাথরুম করতে পারছে না। গোসল করার ব্যবস্থা নেই। কাঁচা-পাকা পায়খানাগুলো পানিতে মিলে মিশে একাকার। খেটে খাওয়া মানুষের কাজ নেই। মানুষের মনে স্বস্তি নেই। গ্রাম থেকে শুরু করে শহরের যোগাযোগের মাধ্যম প্রধান সড়ক জুড়ে এখনো পচা আর গন্ধযুক্ত পানি।
নৌকা, ভেলা আর বাঁশের সাঁকো বানিয়ে চলছে ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত। বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় ও বেড়িবাঁধে আশ্রয় নেওয়া অসহায় পরিবারগুলোতে চলছে বোবা কান্না। এই অসহায় আর বিপর্যয়ের চিত্র দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরা, খুলনা ও যশোর জেলার ছয়টি উপজেলার ৪১টি ইউনয়নের প্রায় ৩শ’ ৮টি গ্রাম জুড়ে।
এই বিপর্যয় শুরু হয় সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের ভারি বৃষ্টিতে। প্লাবিত হয় সাতক্ষীরা সদর ও তালা উপজেলার শতাধিক গ্রামের বিস্তীর্ণ জনপদ। সাতক্ষীরার তালা ও সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের ১শ’ ৪০টি গ্রাম, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ৭২টি গ্রাম, যশোরের কেশবপুর, মনিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলার ২৬টি ইউনিয়নের ১শ’ ৬৮টি গ্রামে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। এলাকার ফসল, মাছের ঘের আর বসত বড়ি সবই এখন ২ থেকে ৩ ফুট পানিতে তলিয়ে আছে। গ্রামে কাজ নেই।
ঘরে খাবার নেই। প্রসূতি মায়েদের থাকার নিরাপদ জায়গা নেই। বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। পচা আর বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে প্রায় প্রতিটি পরিবারের সদস্যরা চর্মরোগসহ পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। আর এই জলাবদ্ধতা এখন স্থায়ী রূপ নেওয়ার এলাকায় হাজার হাজার পরিবারে দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়।
সাতক্ষীরায় বৃষ্টির পানির সঙ্গে বেতনা নদীর ভেঙে যাওয়া বেড়ি বাঁধের পানিতে গ্রাম জনপদের মাছের ঘের ও পুকুরগুলো একাকার হয়ে যায়। পানি নিষ্কাশনের সংযোগ নদী বেতনা ও মরিচ্চাপ নদী ভরাট থাকায় এলাকাগুলো পরিণত হয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধ অঞ্চলে। জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গত ২৪ দিন ধরে সদর উপজেলার শ্যাল্যে এলাকায় বসানো হয়েছে আটটি সেচ পাম্প। পানি তুলে ফেলা হচ্ছে বেতনা নদীতে। এলাকাবাসী জানান, পাম্পের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের কারণে কিছু পানি কমলেও এর সঙ্গে গত দুইদিনের ভারি বৃষ্টিতে ফের পানি বেড়েছে জলাবদ্ধ এলাকাগুলোতে।
গত ৪০ দিন ধরে পানিবন্দি এসব পরিবারে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিলেও পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পানিবন্দি এ সব পরিবারের সদসরা এখন নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কাজ না থাকায় এ সব পরিবারে এখন খাদ্য সংকটে পড়েছে। অনেক পরিবারের সদস্যরা আশ্রয় নিয়েছেন বেড়িবাঁধে আর সড়কের ওপর ।
এদিকে বৃষ্টি ও বাঁধভাঙা পানিতে সাতক্ষীরা পৌরসভাসহ ৪টি ইউনিয়নের ৬৩টি গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। সদরের লাবসা, বল্লি, ব্রহ্মরাজপুর, ধূলিহর ইউনিয়নসহ এলাকার পানি নিষ্কাশন খালগুলো কাজ না করায় এবং অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ করায় নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এমনকি পৌরসভার নিষ্কাশন চ্যানেলগুলো দখল করে মাছ চাষ করায় এমন বিপর্যয় বলে মনে করছেন নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দ।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়াইব আহমাদ সোমবার জনকণ্ঠকে বলেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য বেতনা নদীতে খনন কাজের জন্য দেওয়া প্রায় ২৪টি ক্রসড্যাম কেটে দেওয়া হয়েছে। আটটি সেচ পাম্প দিয়ে পানি তুলে নদীতে ফেলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পানি কমতে শুরু করেছে জানিয়ে নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ব্যাপক বৃষ্টিপাত না হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জলাবদ্ধ এলাকায় পানি কমবে বলে তিনি আশা করেন।