ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ অক্টোবর ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১

রাণীশংকৈলে পতিত জমিতে ৪৫ হাজার বস্তায় আদা চাষের রেকর্ড

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাণীশংকৈল, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ১১:৪৪, ২১ অক্টোবর ২০২৪

রাণীশংকৈলে পতিত জমিতে ৪৫ হাজার বস্তায় আদা চাষের রেকর্ড

ব্যাগিং পদ্ধতিতে আদার চাষ।

রাণীশংকৈল উপজেলায় এ বছরে রেকর্ড পরিমাণ ৪৫ হাজার বস্তায় ব্যাগিং পদ্ধতিতে আদার চাষ হয়েছে। খাদ্যের স্বাদ বৃদ্ধি করা জনপ্রিয় এক মশলাজাতীয় ফসল হলো আদা। ভেষজ গুণে ভরপুর আদা কাঁচা ও শুকনো দু'ভাবেই ব্যবহার করা যায়। তাই সারাবছর ক্রেতাদের কাছে এর চাহিদাও থাকে বেশি। 

নিজ বাড়ির আঙ্গিনায়, বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে এবং  আম বাগানে ব্যাগিং পদ্ধতিতে বস্তায় মাটি ভরাট করে আদা চাষ করা হচ্ছে। উপজেলায় বাচোর ইউনিয়নের কৃষক ওসমান গণি ৩০ হাজার, ধর্মগড় ইউনিয়নের আহসান হাবীব শান্ত ৫ হাজার ও নন্দুয়ার ইউনিয়নের দুলাল ৪ হাজার বস্তায় আদা লাগিয়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে মোট ৪৫ হাজার বস্তায় আদা চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ। 

কৃষি কর্মকর্তারা বলছে, বস্তায় আদা চাষ কম পরিশ্রমে লাভজনক একটি ফসল। গতবছর কিছু কৃষক কেউ পরীক্ষামূলকভাবে আবার কেউ শখের বশে ১০০/২০০ বস্তায় চাষ করে। ফলন ভালোর পাশাপাশি দাম ভালো পাওয়ায় এবছর উপজেলায় আদাচাষিরা বাড়ির পাশে পতিত জায়গা জমিতে ও আম বাগানের ভিতরে প্রায় ৪৫' হাজারের অধিক বস্তায় আদার চাষাবাদ করেছে। গাছগুলোতে এখন থোকায় থোকায় গজিয়েছে আদা। একেকটি বস্তায় এক থেকে দেড় কেজির বেশি আদা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা মেলে আদা চাষের প্রদ্ধতি। এ সময় বাচোর ইউনিয়নের মহলবাড়ী গ্রামের কৃষক ওসমান গণি বলেন, গতবছর আমি পরীক্ষামূলকভাবে ১২০ টির মতো বস্তায় আদা চাষ করি। আদার ফলন ভালো হওয়ায় এবারে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে আবার বড় পরিসরে আদার চাষ শুরু করি। প্রথমেই ছাই, জৈব সার ও বালু মিশিয়ে মাটি প্রস্তুত করা হয়। আম বাগানের ভিতরে ৭ বিঘা জমিতে ৩০ হাজার হাজার বস্তায় মাটি ভরাট করে টবের মতো করেন তিনি। প্রতিটি বস্তায় তিন থেকে চারটি করে আদার চারা রোপণ করেন। 

ওসমান গণি আরো আরও বলেন, ৭ বিঘা জমিতে তাঁর ঘেরা সহ আদা চাষে আমার ২০-২২ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। বাজারে ভালো দাম পেলে ৭ বিঘা জমি থেকে প্রায় ৮০-৯০ লক্ষ টাকার আদা বিক্রি করতে পারব।

ধর্মগড় ইউনিয়নের কাউন্সিল গ্রামের কৃষক আহসান হাবীব শান্ত বলেন, প্রথমে তিনি ইউটিউব দেখে আদা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেন। এরপর উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে ৫'হাজার বস্তায় আদার চাষ শুরু করেন। এভাবে আদা চাষে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, পতিত জমিতে খুবই সীমিত খরচ আর অল্প শ্রমে চাষ করা সম্ভব। আমার এখানে একেকটি বস্তায় প্রায় দুই কেজি পর্যন্ত আদা পাওয়া যাবে।

নন্দুয়ার ইউনিয়নের ভন্ডগ্রামের গ্রামের কৃষক দুলাল বলেন, এই বছর ৪ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছি। যদি লাভ ভালো হয়, তাহলে আগামীতে আরও বড় পরিসরে আদা চাষ করব। একটি বস্তায় চারা রোপণ করতে মোট খরচ প্রায় ৩০ টাকা। কিন্তু একেকটি বস্তায় আদা পাওয়া যাবে প্রায় দেড় থেকে দুই কেজি। বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি আদার বাজার মূল্য ৩০০ টাকার বেশি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, আদা একটি অর্থকরী ফসল। এ পদ্ধতিতে আদা চাষে জমির চেয়ে রোগবালাইয়ের আক্রমণ হয় কম। বস্তায় আদা চাষে কিটনাশক এবং পানি লাগে অনেক কম। ফলে যে কোনো স্থানে এভাবে আদা চাষ করা সম্ভব। পাশাপাশি কেউ চাইলে বাসার ছাদে, ব্যালকোনিতে এবং বাড়ির সামনে পরিত্যক্ত স্থানেও চাষ করা যায়। স্বল্প পরিসরে এ চাষের মাধ্যমে নিজেদের আদার চাহিদা মেটানো সম্ভব।

এম হাসান

×