ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ অক্টোবর ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১

কেশবপুরে দীর্ঘ স্থায়ী জলাবদ্ধতায় প্রায় ৩ হাজার হেক্টর আমন আবাদের ক্ষতি

নিজস্ব সংবাদদাতা,কেশবপুর,যশোর

প্রকাশিত: ০০:১৭, ২১ অক্টোবর ২০২৪

কেশবপুরে দীর্ঘ স্থায়ী জলাবদ্ধতায় প্রায় ৩ হাজার হেক্টর আমন আবাদের ক্ষতি

এবারের দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় যশোরের কেশবপুরে ১ হাজার ৮শ'৩০ হেক্টর আমনের ক্ষেত এবং ৩শ' হেক্টর সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান প্রায় ৬০ কোটি টাকা।

 

 


কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবারের অতি বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় কেশবপুরের ১৪৪টি গ্রামের মধ্যে ১০৪টি পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রায় ৩ মাস যাবত দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতায় ১৮৩০ হেক্টর জমির আমন ধান, ২৩৯ হেক্টর সবজি, ১৮.৫০ হেক্টর মরিচ, ১৮ হেক্টর হলুদ, ১২.৩ হেক্টর পান, ৪৫ হেক্টর তরমুজ, ৩.৫ হেক্টর আখ, ৩ হেক্টর তুলা ও ১ হেক্টর পিয়াজের ক্ষেত তলিয়ে নষ্ট হওয়ায় কৃষকের মধ্যে হায়হায় রব বিরাজ করছে।

 

 

হিসেব মতে ক্ষয় ক্ষতির পরিমান দাঁড়িয়েছে ৬০ কোটি টাকায়। এই ঘাটতি কোনভাবেই কৃষকের কাটিয়ে উঠার সম্ভাবনা নেই। এ বছর আমনের আবাদ করা হয়েছিল ৯ হাজার ৮শ' হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে ধানের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে ১ হাজার ৮শ'৩০ হেক্টর।


মধ্য আগষ্ট থেকে শুরু করে চলতি মাসেও মৌসুমি বায়ূর প্রভাবে থেমে থেমে অতি বৃষ্টির ফলে কেশবপুর পৌর সদরসহ অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে স্থায়ী জলাবদ্ধতায় সৃষ্টি হয়েছে। নদী মরে যাওয়ায় বদ্ধ পানি সরছে না। গত তিন মাস যাবত পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় দেড় লাখ মানুষ।

 

মাঝেমধ্যে রোদে কিছুটা পানি কমলেও টানা বৃষ্টির ফলে আবারও পানি বৃদ্ধি পেয়ে জন দুর্ভোগ বেড়েছে যাচ্ছে। বন্যার পানিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে গিয়ে বসত ঘরের মধ্যে হাটু পানি উঠাই এরই মধ্যে যশোর সাতক্ষীরা সড়কের কেশবপুর সদরের মধ্যকুল এলাকায় সড়কের দু‘ধারে টংঘর বেঁধে আশ্রয় নিয়েছে দেড় শতাধিক পরিবার। এছাড়া বিভিন্ন উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে আরও তিন শতাধিক পরিবার। অন্যরা তাদের বসত ঘরের মধ্যে মাচান তৈরী করে সেখানে বসবাস করছেন। তাদের চলাচলের একমাত্র বাহন হলো কলার ভেলা।

 

জলাবদ্ধ গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে, কেশবপুর পৌর সদরের মধ্যকুল খানপাড়া, বিশ্বাসপাড়া, মোড়লপাড়া, সরদারপাড়া, সাহাপাড়া, মাঝেরপাড়া, হাবাসপোল, কেশবপুর সদরের সাহাপাড়া, ভবানীপুর, আলতাপোল, বালিয়াডাঙ্গা, ব্রম্যকাটি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া উপজেলার সাগরদাঁড়ি, বগা, নেহালপুর, রেজাকাটি, বড়মহাদেবপুর, শুড়িঘাটা, গৌরীপুর, মজিদপুর, গৌরিঘোনা, চুয়াডাঙ্গা, পাঁজিয়া, গড়ভাঙ্গা, নেহালপুর, বাঁকাবর্শি, ভেরচি, সরসকাটি, ভোগতি নরেন্দ্রপুর, ভরত ভায়না, রামচন্দ্রপুর গ্রামসহ ১০৪টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গত দুই মাস যাবত স্থায়ী জলাব্দতার রুপ নিয়েছে। গ্রামগুলোর মধ্যে কোন কোন গ্রাম আংশিক এবং অন্যগ্রাম গুলো সম্পূর্নভাবে প্লাবিত হয়েছে। 
দীর্ঘ তিন মাস ধরে বন্যার পানিতে গ্রাম গুলি তলিয়ে থাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এদিকে গরু রাখার জায়গা না থাকায় এবং গোখাদ্য সংকটের কারনে খামারীরা তাদের পশু পানির দামে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। এতে লোকশানের মুখে পড়েছে খামারীরা। 

 


এই পর্যন্ত সরকারিভাবে তেমন কোন সহায়তা না পেয়ে সড়কের পাশে টংঘর বেঁধে আশ্রয় নেয়া লোকজন কচুর পাতা সংগ্রহ করে তরকারির চাহিদা মেটাচ্ছে এবং শিশুরা পচাবাসী খাদ্য খেয়ে ডাইরিয়া আমাশাসহ বিভিন্ন পেটের পিড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। পানিবন্দি মানুষেরা জানান, পানিতে চলাফেরা করায় তারা জ্বর, কাশি,ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হলেও এই পর্যন্ত সরকারিভাবে চিকিৎসার জন্য কোন মেডিকেল টিম পানিবন্দি এলাকায় পাঠানো হয়নি জলে অভিযোগ।
এদিকে বন্যার পানিতে ১৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠায় এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ব্যহত হচ্ছে বলে শিক্ষকরা জানান। 

 


উপজেলা প্রশাসন জানায়, এরই মধ্যে শতাধিক মেট্রিকটন চাল বন্যা দুর্গত এলাকায় বিতরন করা হয়েছে। অন্যদের তালিকা করা হচ্ছে। ওই তালিকা হাতে পেলে তাদের মধ্যে চাল বিতরন করা হবে। তবে জলাবদ্ধ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে জানা যায়, জলাবদ্ধ অধিকাংশ পরিবার এখনও পর্যন্ত সরকারি বেসরকারিভাবে কোন সাহায্য পায়নি।  


কেশবপুর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রোস্তম আলি বলেন, এবারের বন্যায় কেশবপুর উপজেলায় ১৮৩০ হেক্টর অমনের ক্ষেত এবং ৩০০ হেক্টর স্ববজি ক্ষেত ভেসে গেছে। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬০ কোটি টাকা। তবে আমন উৎপাদনে ক্ষতি হলেও কেশবপুরে খাদ্যের কোন ঘাটতি হবেনা। 


কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী সুমন শিকদার বলেন, এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে মৎস্য ঘের নির্মাণ এবং আফার ভদ্রা, বুড়িভদ্রা ও হরিহর নদীতে পলি পড়ে ভরাট হওয়ার ফলে, সম্প্রতি অতিবৃষ্টির কারনে কেশবপুরে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে উপজেলার অধিকাংশ গ্রামগুলো। জলাবদ্ধ পানি নিস্কাশনের জন্য এরই মধ্যে আফার ভদ্রা, বুড়িভদ্র ও হরিহর নদীতে ভাসমান ড্রেজার দিয়ে খনন কাজ শুরু করা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পানি কমতে শুরু করবে বলে আশা করছি। 

কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন জানান, কেশবপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে এই পর্যন্ত শতাধিক মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে। বাকীদের তালিকা হাতে পেলে তাদেরকেও ত্রান দেয়া হবে। সরকারী সহায়তার কোন অভাব নেই।
 

ফুয়াদ

×