ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১

প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা অরক্ষিত

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফটিকছড়ি

প্রকাশিত: ০০:৪০, ২০ অক্টোবর ২০২৪

প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা অরক্ষিত

প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র ও বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ  হালদা নদীতে অবাধে মাছ শিকার

এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র ও বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ  হালদা নদীতে কোনো পাহারাদার না থাকায় গত দুই মাস যাবৎ পাইকারি হারে মৎস্য শিকার চলছে। এ ছাড়া মৎস্য শিকারিদের খপ্পরে পড়ে এ নদীর জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির সম্মুুখীন। সরকারি ভাবে কোনো নজরদারি না থাকায় হালদা ক্রমশ অরক্ষিত হয়ে পড়ছে।
গেল এক বছরের মধ্যে মারা গেছে তিনটি গাঙ্গেয় ডলফিন। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের লাল তালিকাভুক্ত (অতি বিপন্ন প্রজাতি) জলজপ্রাণী ডলফিন। বিশ্বের বিভিন্ন নদীতে বিপন্ন প্রজাতির ডলফিন আছে মাত্র ১ হাজার ১০০টি। এর মধ্যে শুধু হালদাতেই ছিল ১৭০টি। গত  ৬ বছরে হালদায় ৩৮টি ডলফিন মারা যায়। সূত্রমতে, মারা যাওয়া মৃত ডলফিনগুলোর মধ্যে বেশির ভাগেরই শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এমনকি কিছু ডলফিনের চর্বি কেটে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ ছাড়া জালে জড়িয়ে যাওয়ায় অনেকগুলো ডলফিন পিটিয়ে মারা হয়েছে- এমন প্রমাণও পাওয়া গেছে। আবার গেল  বর্ষা মৌসুমে হালদায় কাক্সিক্ষত পরিমাণে ডিমও ছাড়েনি মা মাছ। সব মিলে, হালদার জীববৈচিত্র্য এখন অনেকটাই অরক্ষিত।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে হালদা নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, হালদা থেকে কেউ আর মাছ এবং জলজপ্রাণী শিকার করতে পারবে না বলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও তা মানা হচ্ছে না। হালদা বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার হালদার ব্যাপারে সহনশীল হলেও দুর্বৃত্তদের কারণে কারেন্ট জাল ব্যবহার এবং মা মাছ নিধন বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। হালদা নদীতে দুর্বৃত্তদের অপকর্ম ঢাকতে সিসিটিভি লাগানো হলেও কার্যত কোনো সুফল মিলছে না।
হালদা হচ্ছে বাংলাদেশের একমাত্র দেশী নদী। প্রায় ৯৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ নদীর উৎপত্তি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার রামগড় উপজেলার পাতাছোড়া ইউনিয়নের হালদাছড়া থেকে এবং সমাপ্তি চট্টগ্রামের উপকণ্ঠে কর্ণফুলী নদীতে। এটি শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীরও একমাত্র জোয়ার-ভাটা নদী, যা অন্যতম বৃহৎ রুই জাতীয় মাছের (রুই, কাতলা, মৃগেল এবং কালিগনি) প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র এবং দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র, যেখান থেকে সরাসরি রুই জাতীয় মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা যায়। কিছু মা মাছ স্থায়ীভাবে হালদায় বাস করে, বাকিগুলো মূলত কর্ণফুলী থেকে হালদায় আসে। বাংলাদেশের অন্যান্য নদী থেকে হালদা নদীর বিশেষ পার্থক্য প্রধানত পরিবেশগত।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে হাইকোর্ট হালদা নদীর ডলফিন রক্ষায় একটি কমিটি গঠন করেন। সেখানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সদস্য রাখা হয়। নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হলেও কারেন্ট জালের ব্যবহার কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না। দৃশ্যত, মনুষ্যসৃষ্ট বিবিধ হস্তক্ষেপের ফলে প্রধানত হালদা নদী নিজস্ব বৈশিষ্ট্য হারাতে বসেছে। অবৈধভাবে জাল ও বিষ ব্যবহার করে মাছ ধরা, দূষণ, পলি জমাট ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হালদার বাস্তুতন্ত্র মাছ ও ডলফিনের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠছে। ফটিকছড়ি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম বলেন, জনবল সংকটের কারণে অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। 
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, হালদার সুরক্ষার জন্য সরকার বদ্ধপরিকর। মৎস্য শিকার বন্ধে হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হবে। হালদা গবেষক অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া জনকণ্ঠকে বলেন, হালদাকে নিরাপত্তাহীনতায় রাখা খুবই দুঃখজনক। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দেশ নিরপেক্ষ সরকার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, সেই হিসেবে হালদাকে অরক্ষিত রাখার কোনো সুযোগ নেই।

×