ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১

২৮ গ্রামের মানুষের ভোগান্তি

কদমতলী-হাসনাবাদ সেতুর কাজ কবে শেষ হবে

নিজস্ব সংবাদদাতা, দাউদকান্দি, কুমিল্লা

প্রকাশিত: ০০:৩৮, ২০ অক্টোবর ২০২৪

কদমতলী-হাসনাবাদ সেতুর কাজ কবে শেষ হবে

উপজেলার সদর উত্তর ইউনিয়নের গোমতী নদীর ওপর ৪ বছর যাবত নির্মাণ করা হচ্ছে সেতু

দাউদকান্দি উপজেলার সদর উত্তর ইউনিয়নের গোমতী নদীর ওপর ৫৮ কোটি ৭৪ লাখ ৬৫ হাজার ৬শ’ ৩১ টাকা ব্যয়ে ৫৭০ মিটার কদমতলী-হাসনাবাদ সেতু ৪ বছর অতিবাহিত হলেও কাজ হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতায় ৫৭০ মিটারের সেতুর কাজ সম্পূর্ণ হতে সময় বেশি লাগছে বলে অভিযোগ স্থানীয় গ্রামবাসীর। এছাড়াও সেতুটির মেরামতের কাজ কবে শেষ হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। ৪ বছর আগে থেকে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করে ১৫২টি পাইলের মধ্যে ১৪১টির কাজ শেষ হলেও আরও ১১টি পাইলের নির্মাণ কাজ বাকি রয়েছে। ফলে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ২৮ গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক বাসিন্দার।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সেতুর অভাবে অর্ধলক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতে কষ্ট ও ভোগান্তি বাড়ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, দাউদকান্দি উপজেলা সদর থেকে উত্তর ইউনিয়ন এবং তিতাস ও মেঘনা উপজেলার কিছু অংশে যেতে নির্ভর করতে হয় খেয়া নৌকার ওপর। এতে সময় অপচয় হওয়ার পাশাপাশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য, ব্যবসায়ীদের মালামাল আনা-নেওয়ায় মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই।

বাহেরচর ফজলুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল আলিম জানান, গ্রামের লোকজন ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরদের যাতায়াতের জন্য সেতুটি দ্রুত নির্মাণ করা খুবই জরুরি। কদমতলী ও দুধঘাটা গ্রামের পাঁচ বাসিন্দা বলেন, সেতুর অভাবে দাউদকান্দি সদর উত্তর ইউনিয়নসহ তিতাস ও মেঘনা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এর মধ্যে দাউদকান্দি উপজেলার হাসনাবাদ ভিটিকান্দি, কান্দারগাঁও, বাহেরচর, বাজরা, বটতলী ও গঙ্গাপ্রসাদ, তিতাস উপজেলার দুধঘাটা, দড়িগাঁও, চরকাঁঠালিয়া, কাকিয়ালী, মোহনপুর, উজিরাকান্দি, সাতানী, চারআনি, নন্দীরচর, মঙ্গলকান্দি, বারকাউনিয়া, কালীরবাজার, ভুঁইয়ারবাজার, নন্দনপুর, বালুয়াকান্দি, জগতপুর ও চরকুমারিয়া এবং মেঘনা উপজেলার আলীপুর, বিনোদপুর, চরবিনোদপুর ও হিজলতলী গ্রামের মানুষ নৌকা নিয়ে গোমতী নদী পারাপার করে।
বাহেরচর গ্রামের কৃষক ছাদেক মিয়া ও শুক্কুর আলী বলেন, ‘ব্রিজের লাইগ্যা ফসলও ওপারে (দাউদকান্দি উপজেলা সদর বাজার) নিয়ে বেচতে পারি না। নৌকায় কি আর সব নেওয়া যায়।
মোহনপুর গ্রামের ব্যবসায়ী নাসির মুন্সী বলেন, সেতু না থাওনে মালামাল পার করা খুবই ঝামেলা। নৌকায় পইসাও বেশি লাগে। সেতু না থাকায় নৌকায় নদী পার হতেই চলে যায় আধা ঘণ্টা। ঠিকমতো নৌকা পাওয়া কঠিন। সেতুটা হলে আমাদের জন্য যে কত ভালো হতো। চারআনী হাসনাবাদ গ্রামের সাবেক মেম্বার মনু মিয়া জানান, এ সেতু নির্মিত হলে উপজেলা সদর উত্তর ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ২৮ গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক বাসিন্দার যাতায়াতের অসুবিধা দূর হবে। দাউদকান্দি সদরে গিয়ে ঢাকায় যাতায়াত সহজ হবে, সাশ্রয় হবে অর্থ ও সময়ের।
দাউদকান্দি উপজেলা (এলজিইডি) প্রকৌশলী ¯েœœহাল রায় বলেন, ৫৮ কোটি ৭৪ লাখ ৬৫ হাজার ৬ শত ৩১ টাকা ব্যয়ে ওই নদীতে ৫৭০ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণের জন্য কাজের দায়িত্ব পায় কুমিল্লার মঈনউদ্দিন বাশী লিমিটেড ও মেসার্স জাকির এন্টার প্রাইজ (জেভির)। যৌথ কনস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিকে সেতু নির্মাণ কাজের দায়িত্ব দিলে কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ২০২০ সালে জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত করোনাকালে কাজ বন্ধ থাকার কারণে প্রতিষ্ঠানটি দায়িত্ব পেয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই মাস থেকে কাজ শুরু করে।

দরপত্রের চুক্তি অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের মে মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরবর্তী পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটিকে সেতুর কাজ সম্পন্ন করার জন্য ২০২৫ সালের মধ্যে সময় বেঁধে দেওয়া হলেও তারা সঠিক সময়ে কাজ সম্পন্ন করতে পারবে কিনা তার নিশ্চয়তা নেই। ফলে সেতু নির্মাণ কাজের এই ধীরগতির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকার বাসিন্দারা।

×