ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১

হাত বদলেই দাম বাড়ে সবজির

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট

প্রকাশিত: ২২:৪৪, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

হাত বদলেই দাম বাড়ে সবজির

সবজি

বাগেরহাটের যাত্রাপুর বা’ সিএন্ডবি বাজারে যে লাউ ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়, সেই লাউ মাত্র ৬-৭ কি:মি: দূরের পৌর শহরের খুচরা বাজারে ৬০-৭০ টাকা। মরিচ, বেগুন, সিম, কাকরোল, করোলা, সীম, সশা-সহ অন্যান্য সবজি ক্ষেত্রেও অনুরূপ দ্বিগুণ দাম। হাত বদল ও বেশী মুনাফা লোভীদের কারনে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। সংকট না থাকলেও অব্যবস্থাপনা ও তদারকির অভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলে ভোক্তারা মনে করছেন।

শনিবার বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, নানা অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক চড়া। যদিও গত সপ্তাহের তুলনায় দাম কিছুটা কমেছে। তবে উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে স্থানীয় বাজারেই সবজির দাম কেজিপ্রতি বাড়ছে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত।

বিক্রেতাদের ভাষ্যমতে, এখনও সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। তবে সামনের দিনগুলোতে বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ যত বাড়বে দাম ততই কমবে। গত সপ্তাহের চেয়ে প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা কমেছে। সামনে আরও কমবে। আর চাষি থেকে ভোক্তা পর্যায় পর্যন্ত কেজিপ্রতি দাম বৃদ্ধির পেছনে যাতায়াত ভাড়াসহ অন্য খরচ থাকে।
চিতলমারীর শ্যামপুর গ্রামের চাষি বলেন, গত সপ্তাহে বেগুন ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। কিন্তু খুচরায় শুনতে পাচ্ছি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এই চাষি মনে করেন, কার্যকর নজরদারি থাকলে কৃষক ভালো দাম পাবেন। ক্রেতারাও ঠকবেন না।

কাকরোল, মুলা, ঝিঙ্গা, চিচিংগা, শসা বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে। যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। বেগুন বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা কেজি, ঢ্যাঁড়স ও করলা ১২০ টাকা কেজি, লাউ ৬০-৭০ টাকা পিস, আলু ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি। এ ছাড়া কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ৩২০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা কেজি। 

গত সপ্তাহে বাজারে প্রতি কেজি ৩৬০ টাকা থেকে ৩৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে কাঁচামরিচ। এ ছাড়া পেঁয়াজ জাত ভেদে ৯০ থেকে ১১০ টাকা, আদা ২৮০ ও রসুন ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
বাগেরহাট পৌর সভার কাঁচা বাজারের সবজি বিক্রেতা বাচ্চু মোল্লা বলেন, সবজির দাম গত ২/৩ দিন থেকে কমের দিকে। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত শীতকালীন সবজি বাজারে আসবে। তখন দাম আরও কমবে। আর সরকারের নজরদারির প্রয়োজন আছে। নজরদারি না থাকলে অতি মুনাফালোভীরা সুযোগ নেয়।

এদিকে, বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগের বাড়তি দরেই বিক্রি হচ্ছে মুরগির মাংস ও ডিম। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০, দেশি মুরগি ৪৭০, সোনালি মুরগি ২৭০ ও পাতিহাঁস ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর ডিমের মধ্যে প্রতি হালি ফার্মের সাদা ডিম ৪৮, লাল ডিম ৫২, হাঁসের ডিম ৭০ ও দেশি মুরগির ডিম ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি পাঙ্গাশ ১৮০ থেকে ২০০, রুই মাছ ৩০০, সিলভার কার্প ২২০ থেকে ২৫০, মৃগেল ২৫০, কাতল ৩৫০, তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২২০, পাবদা ৫০০, দেশি কৈ ৭০০, বোয়াল ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল, ডাল ও তেল।

এ অবস্থায় ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারে প্রতিটা ক্ষেত্রে অসাধু সিন্ডিকেট কাজ করছে। কিন্তু সরকার এই সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না। এ কারণে দাম বেশী।

বাজার করতে আসা সাহানা বেগম বলেন, বাজারে এখন ৫০ টাকার নিচে কোনও সবজি মিলছে না। কয়েক বছর আগে ৩০০ টাকায় ব্যাগ ভর্তি হলেও এখন দ্বিগুণ টাকাতেও হচ্ছে না। প্রত্যেকটা পণ্যের মূল্য কয়েকগুণ বাড়ছে। দাম কমার তো কোনও সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। নিয়মিত বাজার তদারকি করে যেন দামটা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা হয়।
সবজির বাজারে আসা আলফাজ হোসেন বলেন, আমি শহরে থাকি। কিন্তু আমার গ্রামের বাড়িতে সবজি আবাদ হয়। এত শ্রম ও কষ্ট করার পর যে দামে সবজি বিক্রি করি, শহরের বাজারে তার দাম কখনও দ্বিগুণেরও বেশি। এটা সম্পূর্ণ নজরদারির ব্যর্থতা। আর এর ফলে আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষের জীবনকে কষ্ট হচ্ছে।

সবজি বিক্রেতা সোহরাপ আলী বলেন, শুক্রবার যে সবজি ৮০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে তা বুধবারে ৭০ টাকাতে পাওয়া গিয়েছিল। আবার আগামী পরশু দিন দামও আরও বাড়তে পারে। আমাদের এভাবেই কিনে নিয়ে এসে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে আমাদের তেমন লাভ হচ্ছেনা।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শংকর কুমার মজুমদার বলেন, এবার কয়েকদফা অতিবর্ষণের ফলে কিছু সবজির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সেটা খুব বেশি না। আশা করছি, শীতকালীন সবজির আবাদটা বাজারে এলেই দাম কমবে।

খড়মখালী গ্রামের সবজি চাষি আলমগীর তরফদার, কৃষক সুধাংশু মন্ডল, বিপুল হাজরা, দেবেন মন্ডল, কুড়ালতলার অনাদী বিশ্বাস, পাটরপাড়ার মুজিবর বিশ্বাস, দড়িউমাজুড়ি গ্রামের সুধান্ন ঘরামী, গরীবপুরের প্রকাশ ঘরামীসহ অসংখ্য চাষি অভিন্ন সুরে জানান, স্থানীয় ইজারাদারদের অরিরিক্ত খাজনা আদায়, মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত থেকে রেহাই এবং উৎপাদিত ফসলের বাজারজাতকরণের পরিধি বাড়লে কৃষক নায্যমূল্য পাবেন।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে টাস্কফোর্স কমিটি তদারকি শুরু করেছে। এই কমিটির নেতৃত্বদানকারী বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অরবিন্দ বিশ্বাস বলেন, আমরা পাইকারি বাজার ও আড়ত সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি, প্রতিটি ব্যবসায়ীকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। ৩ দিন আগে জেলা প্রশাসক স্যার নিজে সরেজমিনে বাজার পরিদর্শন করে ভোক্তা ও বিক্রেতাদের সাথে কথা বলেছেন। ক্রয় রশিদ সংরক্ষণ ও বিক্রয় মূল্য টাঙ্গানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখে এবং সহনীয় লাভ করে। ব্যবসায়ীরা নিয়ম মেনে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, আমরা নিয়মিত বাজার তদারকি করছি।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বাগেরহাট জেলার সভাপতি বাবুল সরদার ও সাধারণ সম্পাদক অরিন্দম দেবনাথ বলেন, সমন্বিত উদ্যোগে আমরা প্রায় বাজার মনিটরিং করছি। সরকার টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করে দিয়েছে। সব ব্যবসায়ীদের নিয়ে সভা হয়েছে। সরেজমিনে জেলা প্রশাসক নির্দেশনা দিয়েছেন। 

শহিদ

×