ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১

নির্যাতন, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও দখলে তৎপর ছিল হেলমেট ও হাতুড়ি বাহিনী

সাড়ে ১৫ বছর কাদের মির্জার কাছে জিম্মি ছিল কোম্পানিগঞ্জবাসী

নিজস্ব সংবাদদাতা, নোয়াখালী

প্রকাশিত: ২২:২৭, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

সাড়ে ১৫ বছর কাদের মির্জার কাছে জিম্মি ছিল কোম্পানিগঞ্জবাসী

সাবেক মেয়র আব্দুল কাদের মির্জা

বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে প্রায় চার বছর আগে দেশজুড়ে আলোচনায় এসেছিলেন নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র আব্দুল কাদের মির্জা। তাঁর এমন বক্তব্য ‘সত্য বচন’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল।
এদিকে বড় ভাই ওবায়দুল কাদের ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে কাদের মির্জা ক্রমাগত কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিতে থাকলে তার প্রতিবাদে মাঠে নেমেছিল দলের একাংশ। ২০২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি চাপরাশিরহাটে প্রতিপক্ষের মিছিলে হামলা চালায় কাদের মির্জার বাহিনী। গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান স্থানীয় সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন ওরফে মুজাক্কির। এ ঘটনায় মামলা হলেও কারও নাম উল্লেখ করার সাহস পায়নি মুজাক্কিরের পরিবার।
কোম্পানীগঞ্জে এক সময়ের কর্মরত গণমাধ্যমকর্মী প্রশান্ত সুভাষ চন্দ, বর্তমানে ঢাকায় একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সাব-এডিটর হিসেবে কর্মরত, তিনি শনিবার দুপুরে জনকণ্ঠকে বলেন, মির্জা বাহিনীর সদস্যরা তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে কুপিয়ে জখম করে প্রশান্ত, তাঁর মা ও ছেলেকে এবং এরই জের ধরে আত্মসম্মান-মর্যাদার ভয়ে তিনি প্রিয় জন্মস্থানে অবস্থান করতে না পেরে অবশেষে ঢাকায় এসে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর মির্জা বাহিনীর সদস্যরা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার আরেক সাংবাদিক নাজিম উদ্দিনকে পিটিয়ে আহত করে। পরে কাদের মির্জার এক অনুসারী বাদী হয়ে নাজিমের বিরুদ্ধে উল্টো মাদক আইনে মামলা করেন।
বিগত সরকার আমলে কোম্পানীগঞ্জে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এলাকায় থাকতে পারেননি। কাদের মির্জার কারণে নিয়মিত হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন।
উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাহমুদুর রহমান বলেন, কাদের মির্জার অত্যাচার-নিপীড়নের ঘটনা সবকিছুকে হার মানাবে। তাঁদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১০৩টি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল। গত বছরের ২৮ অক্টোবরের পর কোম্পানীগঞ্জে ৬৯ জন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীর বাড়িতে হামলা চালায় মির্জার হেলমেট বাহিনী। এই বাহিনীর অত্যাচারে বসুরহাট বাজারের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে।
বসুরহাট পৌরসভা ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষ ছিল মেয়র কাদের মির্জার টর্চার সেল। দলীয় কিংবা দলের বাইরে কারও সঙ্গে বনিবনা না হলে ধরে নিয়ে নির্যাতন চালাতেন বাহিনীর সন্ত্রাসীরা। ২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ব্যবসায়ী রূপক মজুমদারকে (৪২) বসুরহাট বাজারের জিরো পয়েন্ট থেকে ধরে নিয়ে যায় কাদের মির্জার সাঙ্গপাঙ্গরা। প্রায় সাত ঘণ্টা পৌর ভবনের গোপন কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। দখলেও পিছিয়ে ছিলেন না।
উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের মুছাপুর ক্লোজার এলাকায় কাদের মির্জা ৬০০ একরের বেশি খাসজমি দখল করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দখলের পর ভুয়া ভূমিহীন সাজিয়ে ওই জমি আবার বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন।
বাসিন্দারা জানান, মুছাপুর ক্লোজার এলাকার ছোট ফেনী নদী থেকে গত তিন বছরে কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হয়। বিষয়টি দেখভাল করতেন মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী। দল ক্ষমতা ত্যাগের পর তিনিও পলাতক।
আব্দুল কাদের মির্জার বড় পরিচয় তিনি সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার সাবেক এই মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। বড় ভাই ওবায়দুল কাদের মন্ত্রী হওয়ার কারণে টানা সাড়ে ১৫ বছর দল ক্ষমতায় থাকাকালে কাদের মির্জার কাছে জিম্মি ছিল গোটা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নিরীহ জনগণ। ২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারির পৌরসভা নির্বাচনে কাদের মির্জা টানা তৃতীয়বারের মতো বসুরহাট পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি।
দল ক্ষমতায় থাকাকালে নিজ দলের প্রতিপক্ষ এবং বিরোধী দলের কাছে মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছিলেন কাদের মির্জা। তাঁর বাহিনীর অত্যাচার-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বিএনপি-আওয়ামী লীগ দুই দলেরই নেতাকর্মীরা। এমনকি ব্যবসায়ী, শ্রমজীবী, পেশাজীবী মানুষ। পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য এবং গালমন্দ করা ছিল কাদের মির্জার নিয়মিত অভ্যাস। গঠন করেন হেলমেট বাহিনী ও হাতুড়ি বাহিনী।
ঠিকাদারি কাজে চাঁদাবাজি, সরকারি বিভিন্ন নিয়োগে তদবির-বাণিজ্য, শিশুপার্কের নামে কারখানা দখল, আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিপণিবিতান ভাঙচুর, বিপণিবিতান বন্ধ করে দেওয়া, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়সহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
প্রায় চার বছর আগে দলের এমপিরা পালানোর দরজা খুঁজে পাবেন না বলে উপহাস করা কাদের মির্জা সরকার পতনের পর নিজেই পালিয়েছেন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে বড় ভাই ওবায়দুল কাদের মতো কাদের মির্জারও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ জন্য তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ও বসুরহাট পৌরসভায় যেকোনো উন্নয়নকাজ করতে গেলে কাদের মির্জাকে নির্দিষ্ট অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো ঠিকাদারদের। 

গত ১৫ বছরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ও বসুরহাট পৌরসভায় মোট উন্নয়নকাজ হয়েছে প্রায় ৫৭৩ কোটি টাকার। এর মধ্যে পৌরসভায় উন্নয়নকাজ হয়েছে প্রায় ৯৭ কোটি টাকার। আর বাকি উন্নয়নকাজ উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করে। প্রতিটি কাজে ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে কমিশন নিতেন কাদের মির্জা। সেই হিসাবে কমিশনের টাকার অঙ্ক প্রায় ৩০ কোটি।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বেশিরভাগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন কাদের মির্জার ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। প্রাপ্ত কাজের ঠিকাদার গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, কাদের মির্জার এক লোক তাদের পৌরসভা কার্যালয়ে ডেকে নিত। সেখানে ৫ শতাংশ কমিশনের বিষয়ে নিষ্পত্তি হতো। বাধ্য হয়ে ৫% টাকা দিতে হতো কাদের মির্জাকে।
বসুরহাট পৌরসভার অধীনে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাস্তবায়িত হয় রাজাপুর স্কুল রোড বাইলেন রাস্তাসংলগ্ন পুকুরে প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণ এবং রাজাপুর স্কুল সড়কে প্যালাসাইটিং প্রকল্প। সরেজমিন দেখা যায়, পুকুরে নির্মাণ করা প্রতিরোধ দেয়ালটির বেশির ভাগ অংশ ভেঙে পড়েছে পুকুরে। প্রতিরোধ দেওয়াল ভেঙে পড়ার কারণে সড়কেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। সড়কের কিছু কিছু অংশ এরই মধ্যে ভেঙে পড়েছে। এ কাজে উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের। 
প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও কাজে আসছে না পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চৌধুরীর হাট-বসুরহাট সড়কের পশ্চিম পাশে (ইয়াকুব মার্কেটের উত্তরে) পুটিয়া খাল পর্যন্ত ৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত নালা ও বসুরহাট বাজারের দিঘির চারপাশে নির্মিত নালা। 
বসুরহাট বাজারের কিছু সংখ্যক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ী কাদের মির্জার হামলা-নির্যাতনের শিকার হন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হলো সাত্তার ব্রাদার্স (সাত্তার বেকারি), ফখরুল ক্লথ স্টোর, হুমায়ূন টিম্বার, ফিরোজ অ্যান্ড ব্রাদার্স, ফেন্সি হোটেল, আজমির হোটেল, গাজী অ্যান্ড সন্স, ছায়েদ ম্যানশন (৬ তলা বিপণিবিতান ও আবাসিক ভবন), মাওলা শপিং সেন্টার, মডার্ন হাসপাতাল, ডায়াবেটিক হাসপাতাল, হেলাল হার্ডওয়্যার, সেলিম স্টোর, মেহরাজ প্লাজা। নানা অজুহাতে এগুলো বিভিন্ন সময় বন্ধ করে দেওয়া হয়। 
২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বসুরহাট বাজারের আমিন মার্কেটের মালিক আশিক-ই-রসুলকে কাগজপত্র নিয়ে পৌরসভা কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে যান কাদের মির্জা। পৌরসচিব কাদের মির্জার নামে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে ওই মার্কেটের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন কাদের মির্জা। আশিক-ই-রসুল গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, টাকা দেওয়ার পর তাঁর মার্কেটের তালা খুলে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি এমন ছিল যে প্রতিকার পাওয়ার জন্য কারও কাছে যাওয়ার সুযোগ ছিল না।
এ ছাড়া পৌর এলাকার রূপালী চত্বরে আবু ছায়েদ নামের এক লন্ডন প্রবাসীর চার ও ছয়তলার দুটি ভবন পাঁচ বছর আগে দখল করে নেন কাদের মির্জা। চারতলা ভবনটি কাদের মির্জা তাঁর স্ত্রীর নামে লিখে নেন। এসব ভবনের নিচে দোকান ও ওপরে আবাসিক ফ্ল্যাট। ছয়তলা ভবনটি থেকে পৌরসভার নামে ভাড়া তুলতেন কাদের মির্জা। তবে সম্প্রতি ভবনটি দখলমুক্ত করেছেন আবু ছায়েদ।
বসুরহাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল মতিন ওরফে লিটন বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে কাদের মির্জা নানা অজুহাতে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা নিতেন। তাঁর অত্যাচারে জেলার অন্যতম একটি ব্যবসাকেন্দ্রের ব্যবসায়ীরা অনেকটা পথে বসার উপক্রম হয়েছিলেন।
কোম্পানীগঞ্জের মানুষের কাছে সবচেয়ে আতঙ্কের ছিল কাদের মির্জার হেলমেট ও হাতুড়ি বাহিনী। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দলের নেতা-কর্মীদের দমন এবং প্রবাসী, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের জন্য এই বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন তিনি। এর মধ্যে ২০২১ সালের ১৩ মে বসুরহাট পৌরসভার করালিয়া এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুরের অনুসারীদের দিকে তাঁর গুলি ছোড়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে গ্রেপ্তার হলেও কাদের মির্জার তদবিরে কিছুদিন পরই রাসেল জামিনে ছাড়া পান।
কাদের মির্জার এই বাহিনীর হামলার শিকার হন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরনবী চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি খিজির হায়াত খান, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাহমুদুর রহমান ওরফে রিপনসহ অনেকে।
কোম্পানীগঞ্জ থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্ব পালনকারী এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমানকে চলন্ত গাড়ির ভেতর কুপিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যার পরিকল্পনা ছিল কাদের মির্জার। ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। ওই সময় মামলা কিংবা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নেওয়ারও সুযোগ ছিল না।
মিজানুর রহমান বলেন, কোম্পানীগঞ্জে কাদের মির্জার কথার বাইরে যাওয়ার সুযোগ ছিল না প্রশাসনের। তাঁর অপকর্মের কথা বলে শেষ করা যাবে না।
গত বছরের ৩১ জুলাই কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে কাদের মির্জার ভাগনে রামপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আইয়ুব আলীর মধ্যে হট্টগোল ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
২০২১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পৌরসভার কলালিয়া এলাকায় কাদের মির্জার নেতৃত্বে হুমায়ূন টিম্বার মার্চেন্ট অ্যান্ড স মিলে হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। দুটি এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে ভেতরের বিভিন্ন মালামাল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে মেয়রের অনুসারীরা সেখানে ‘শিশুপার্কের জন্য নির্ধারিত স্থান’ লেখাসংবলিত একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন।
হুমায়ূন টিম্বার মার্চেন্ট অ্যান্ড স মিলের মালিক ফিরোজ আলম বলেন, ক্রয়সূত্রে তাঁরা জায়গার মালিক। কিন্তু হঠাৎ ওই জমি ‘খাস’ দাবি করে তাঁদের স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। মামলার পর আদালতের রায়ও অমান্য করেন কাদের মির্জা। পরে তিনি আবার আদালতে গেলে কাদের মির্জা দখল ছাড়েন।
কাদের মির্জার বিরুদ্ধে খাসজমি দখলের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, কোম্পানীগঞ্জের চর এলাহী ও মুছাপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকার খাসজমি দখলকারীদের তালিকা তৈরির কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। দখলকারী যাঁরাই আছেন, তাঁদের উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বড় ভাই ওবায়দুল কাদের প্রভাবশালী হওয়ায় কাদের মির্জার কাছে প্রশাসন ছিল অসহায়। কাদের মির্জার শত অপকর্ম জানার পরও জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
ওবায়দুল কাদেরের নামে বরাদ্দ হওয়া টিআর, কাবিখা চাল/গম নিজের খেয়ালখুশিমতো প্রকল্প দেখিয়ে হাতিয়ে নিতেন কাদের মির্জা। উন্নয়নকাজের ঠিকাদারিও কাদের মির্জার একক নিয়ন্ত্রণে ছিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনোয়ার হোসাইন পাটোয়ারী বলেন, বসুরহাট পৌরসভাকেন্দ্রিক যত উন্নয়নকাজ, তার সবই নিয়ন্ত্রণ করতেন কাদের মির্জা। প্রতি মুহূর্তে প্রচ- চাপে থাকতে হতো তাঁকে। একটু এদিক-সেদিক হলে তাঁকেও গালমন্দ করতেন। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বিগত সরকার পতনের খবরের সঙ্গে সঙ্গে মির্জা তাঁর স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে নিয়ে পালিয়ে যান।

পালিয়ে যাওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই তাঁর বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। কাদের মির্জা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা কোথায় আছেন, তা এলাকার কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। তবে কাদের মির্জা তাঁর পরিচিত ব্যক্তিদের হোয়াটসঅ্যাপে ফোন দিয়ে এলাকা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন বলে জানা গেছে। সরকার পতনের পর কাদের মির্জার বিরুদ্ধে হত্যাসহ পাঁচটি মামলা হয়েছে।

×