ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১

যমুনায় বৈঠকের পর কর্মসূচি স্থগিত

আউটসোর্সিং কর্মীদের শাহবাগ অবরোধ

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:১৪, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

আউটসোর্সিং কর্মীদের শাহবাগ অবরোধ

আউটসোর্সিং, দৈনিক ভিত্তিক, মাস্টাররোল এবং প্রকল্পের কর্মচারীরা চাকরি স্থায়ী করার দাবি

চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের আউটসোর্সিং কর্মীরা। শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। একই দিন জাতীয় জাদুঘরের সামনে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর বিদ্যমান অনিয়ম, মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ যাবতীয় বৈষম্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ফার্মা জব সংস্কার আন্দোলন। গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি অবরোধের কারণে শাহবাগ ও এর আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

যার প্রভাব পড়ে নগরজুড়ে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে নগরবাসীকে। তবে সাত ঘণ্টা সড়ক অবরোধের পর যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারির সঙ্গে বৈঠক শেষে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে কর্মসূচি স্থগিত করেন আন্দোলনকারীরা। পরে এই এলাকার যান চলাচল স্বাভাবিক হলেও সারাদিনের যানজটের প্রভাব সড়কে থেকে যায় সন্ধ্যার পর পর্যন্ত।
দেখা যায়, শনিবার সকাল নয়টার পর থেকে আন্দোলনকারীরা শাহবাগে জড়ো হন। পরে তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। আন্দোলনের কারণে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পল্টন প্রেস ক্লাবগামী সব সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। টিএসসি, সায়েন্সল্যাব, মিরপুর রোড, প্রেস ক্লাবের দিকে থেকে আসা যানবাহন ঘুরিয়ে দিতে দেখা যায় আন্দোলনকারীদের। শাহবাগ মোড় অবরোধ করে আন্দোলনকারীদের ছোট-বড় ব্যানারে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

পুলিশ আন্দোলনকারীদের বোঝাতে গিয়েও ব্যর্থ হয়। একপর্যায়ে পুলিশের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আন্দোলনকারীরা। পরে পুলিশ পিছু হটে। তবে আন্দোলনকারীরা যাতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় যেতে না পারেন, সেজন্য বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। জলকামান, এপিসিসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি প্রস্তুত করে রাখে পুলিশ।  
আন্দোলনের সমম্বয়ক আব্দুর রাকিব সনেট বলেন, জনগণের সেবা প্রদানের জন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োজিত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে এটি আউটসোর্সিং নীতিমালা ২০১৮ -এর প্রতিষ্ঠিত, যা একটি কালো আইন। তিনি বলেন, এর দ্বারা সরকার এবং কর্মরতদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।

অন্যদিকে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো টেন্ডার ব্যবসার মাধ্যমে মূল্যবান অর্থ আত্মসাৎ করে যাচ্ছে। জনবল সরবরাহের নামে তারা কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তাই সরকারি অর্থ অপচয় না করে আউটসোর্সিং নীতিমালা বাতিল এবং এ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরি স্থায়ী করে রাজস্বভুক্ত করার দাবি জানান তিনি। 
বিকেল তিনটার দিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের সঙ্গে বৈঠক করতে আন্দোলনরত কর্মচারীদের সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল যমুনায় যায়। সেখানে তাদের জানানো হয়, যত দ্রুত সম্ভব তাদের দাবির বিষয়ে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরে সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে যমুনা থেকে বের হয়ে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে কর্মসূচি স্থগিত করেন তারা। 
আন্দোলনের সমন্বয়ক ও আউটসোর্সিং কর্মচারী সমিতির সভাপতি মাহবুবুর রহমান আনিস বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব আমাদের দাবি আদায়ে কাজ করবেন। সংস্কার কমিটির মাধ্যমে এটি করা হবে। ভবিষ্যতে আউটসোর্সিং কর্মচারীদের সঙ্গে বৈষম্য হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।’ তবে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে বৃহৎ আকারে রাজপথে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। 
একই দিন বেলা সোয়া ১১টার দিকে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন করেছেন ফার্মাসিউটিক্যাল কর্মীরা। 
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো আছে, এরা আমাদের নিয়োগ দিয়ে একটা বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। আমাদের দিয়ে তারা অমানবিক পরিশ্রম করায়। আমাদের এখানে কেউ কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না। কারণ এখানে কিছু হলেই চাকরি যাওয়ার ভয় থাকে। এসবের প্রতিবাদেই আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি। কোম্পানিগুলোতে সুনির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা নেই। সাপ্তাহিক ছুটি ও সরকারি ছুটি দেয় না। যখন-তখন চাকরিচ্যুত করা হয়। মার্কেটে চাহিদার অতিরিক্ত টার্গেট চাপিয়ে দেওয়া হয়।

রোগীর ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলতে বাধ্য করা, বাইক দিয়ে বিনিময়ে মাসে মাসে মোটা অংকের টাকা কেটে নেওয়া, বছর শেষে বেসিক ও গ্রোস সেলারি না বাড়ানো আমাদের সঙ্গে ঘটা নিত্যনৈমিত্তিক বৈষম্য।  শ্রম আইনের যথাযথ প্রয়োগ;  প্রতিষ্ঠানপুঞ্জের ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা এবং কোম্পানি কর্তৃক অনিয়ম, অনৈতিক ও অমানবিক কর্মকা- বন্ধ করার দাবি জানান তারা।  
শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, সকাল থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানের আউটসোর্সিং কর্মীরা চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে শাহবাগ এলাকায় রাস্তা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন। তাদের এই রাস্তা অবরোধের কারণে শাহবাগ ও এর আশপাশ এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্ট হয়েছে । পরে সন্ধ্যার দিক আগ মুহূর্তে তারা অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।  
টানা সাত ঘন্টার অবরোধে ঢাবি এলাকা, মৎস্যভবন, এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়, বাংলামোটর থেকে শাহবাগমুখী রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রভাবে রাজধানীজুড়ে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন এ পথে যাতায়াতকারী মানুষ। অনেকে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছেন। এই রুটের গাড়ি শাহবাগ মোড় এড়িয়ে আশপাশ সড়ক দিয়ে প্রবেশ করলে সেসব সড়কেও তীব্র যানজট তৈরি হয়। এর প্রভাব পড়ে মগবাজার, শান্তিনগর, হানিফ ফ্লাইওভারেও। সন্ধ্যা পর্যন্ত ফ্লাইওভারগুলো ওপরে গাড়ির জটলা দেখা যায়। ধীরগতিতে চলতে থাকে গাড়ি। সন্ধ্যার ঠিক আগ মুহূর্তে আন্দোলনকারীরা অবরোধ তুলে নিলে ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

×