ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১

ভোগান্তি চরমে ২৮ গ্রামের বাসিন্দা

৪ বছরেও শেষ হয়নি গোমতী নদী উপর নির্মিত কদমতলী-হাসনাবাদ সেতু

নিজস্ব সংবাদদাতা,দাউদকান্দি, কুমিল্লা

প্রকাশিত: ১৭:৩৪, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

৪ বছরেও শেষ হয়নি গোমতী নদী উপর নির্মিত কদমতলী-হাসনাবাদ সেতু

গোমতী নদী উপর নির্মিত কদমতলী-হাসনাবাদ সেতু

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার সদর উত্তর ইউনিয়নের গোমতী নদীর উপর ৫৮ কোটি ৭৪ লাখ ৬৫ হাজার ৬ শত ৩১ টাকা ব্যয়ে ৫৭০ মিটার নির্মিত কদমতলী-হাসনাবাদ সেতু দীর্ঘ ৪ বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত তা শেষ হয়নি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফলতি ও স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতায় ৫৭০ মিটারের সেতুর কাজ সম্পূর্ণ হতে সময় বেশি লাগছে বলে অভিযোগ স্থানীয় লোকজন ও গ্রামবাসীর।

তাছাড়াও সেতুটির মেরামতের কাজ কবে শেষ হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। ৪ বছর আগে থেকে সেতুটির নির্মান কাজ শুরু করে ১৫২টি পাইলের মধ্যে ১৪১টি পাইলের কাজ শেষ হলেও আরো ১১টি পাইলের নির্মান কাজ বাকি রয়েছে।ফলে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ২৮ গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক বাসিন্দার৷

এলাকাবাসীর অভিযোগ,সেতুর অভাবে অর্ধলক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতে কষ্ট ও ভোগান্তি বাড়ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, দাউদকান্দি উপজেলা সদর থেকে উত্তর ইউনিয়ন এবং তিতাস ও মেঘনা উপজেলার কিছু অংশে যেতে নির্ভর করতে হয় খেয়া নৌকার ওপর। এতে সময় অপচয় হওয়ার পাশাপাশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত৷ কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য, ব্যবসায়ীদের মালামাল আনা-নেওয়ায় মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই।

বাহেরচর ফজলুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল আলিম জানান, গ্রামের লোকজন ও কলেজের ছাত্রছাত্রীরদের যাতায়াতের জন্য সেতুটি দ্রুত নির্মান করা খুবই জরুরি।

কদমতলী ও দুধঘাটা গ্রামের কমপক্ষে পাঁচজন বাসিন্দা বলেন, সেতুর অভাবে দাউদকান্দি সদর উত্তর ইউনিয়নসহ তিতাস ও মেঘনা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এর মধ্যে দাউদকান্দি উপজেলার হাসনাবাদ ভিটিকান্দি,কান্দারগাঁও, বাহেরচর, বাজরা, বটতলী ও গঙ্গাপ্রসাদ; তিতাস উপজেলার দুধঘাটা, দড়িগাঁও, চরকাঠাঁলিয়া, কাকিয়ালী, মোহনপুর, উজিরাকান্দি, সাতানী, চারআনি, নন্দীরচর, মঙ্গলকান্দি, বারকাউনিয়া, কালীরবাজার, ভুঁইয়ারবাজার, নন্দনপুর, বালুয়াকান্দি, জগতপুর ও চরকুমারিয়া এবং মেঘনা উপজেলার আলীপুর, বিনোদপুর, চরবিনোদপুর ও হিজলতলী গ্রামের মানুষ নৌকা নিয়ে গোমতী নদী পারাপার করে।

বাহেরচর গ্রামের কৃষক ছাদেক মিয়া ও শুক্কুর আলী বলেন, ‘ব্রিজের লাইগ্যা ফসলও ওপারে (দাউদকান্দি উপজেলা সদর বাজার) নিয়ে বেচতে পারি না। নৌকায় কি আর সব নেওয়া যায় !

মোহনপুর গ্রামের ব্যবসায়ী নাসির মুন্সী বলেন, সেতু না থাওনে মালামাল পার করা খুবই ঝামেলা। নৌকায় পইসাও বেশি লাগে। সেতু না থাকায় নৌকায় নদী পার হতেই চলে যায় আধা ঘণ্টা। ঠিকমতো নৌকা পাওয়া কঠিন। সেতুটা হলে আমাদের জন্য যে কত ভালো হতো। 

চারআনী হাসনাবাদ গ্রামের সাবেক মেম্বার মনু মিয়া জানান, এ সেতু নির্মিত হলে উপজেলা সদর উত্তর ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ২৮ গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক বাসিন্দাদের যাতায়াতের অসুবিধা দূর হবে। দাউদকান্দি সদরে গিয়ে ঢাকায় যাতায়াত সহজ হবে, সাশ্রয় হবে অর্থ ও সময়ের৷

দাউদকান্দি উপজেলা (এলজিইডি) প্রকৌশলী স্নেহাল রায় বলেন, ৫৮ কোটি ৭৪ লাখ ৬৫ হাজার ৬ শত ৩১ টাকা ব্যয়ে ওই নদীতে ৫৭০ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণের জন্য কাজের দায়িত্ব পায় কুমিল্লার মঈনউদ্দিন বাশী লিমিটেড ও মেসার্স জাকির এন্টার প্রাইজ (জেভির) যৌথ কনস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিকে সেতু নির্মাণ কাজের দ্বায়িত্ব দিলে কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ২০২০ সালে জানুয়ারী থেকে জুন মাস পর্যন্ত করোনাকালীন সময় কাজ বন্ধ থাকার কারনে প্রতিষ্ঠানটি দায়িত্ব পেয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই মাস থেকে আবারও কাজ শুরু করে। 

দরপত্রের চুক্তি অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের মে মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরবর্তী পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটিকে সেতুর কাজ সম্পন্ন করার জন্য ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ করার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হলেও তারা সঠিক সময়ে কাজ সম্পন্ন করতে পারবে কিনা তা নিশ্চয়তা নেই৷ফলে সেতু নির্মান কাজের এই ধীর গতির কারনে ভোগান্তিতে পড়েছে অত্র এলাকার বাসিন্দারা৷

শহিদ

×