ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১

মুন্সীগঞ্জে নদী ও খাল দখল সন্ত্রাসের কবলে পড়ে বিপন্নের পথে

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৮:৫২, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

মুন্সীগঞ্জে নদী ও খাল দখল সন্ত্রাসের কবলে পড়ে বিপন্নের পথে

মুন্সীগঞ্জের নদী খাল দখলসন্ত্রাসের কবলে পড়ে ক্রমেই ছোট হচ্ছে, বিপন্নের পথে  মেঘনা, ধলেশ্বরী, ইছামতী, কাজলরেখা, রজতরেখা পদ্মা নদীতে দখলোৎসবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ জীববৈচিত্র্য নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত জানিয়েছেন, দখলদারদের উচ্ছেদে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হবে পরিবেশবিদরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই দখল প্রক্রিয়া চলছে সরকার আসে সরকার যায় কিন্তু দখল বন্ধ নেই আর দখলদাররাও নানাভাবে পার পেয়ে যায় মেঘনা নদীর বিশাল এলাকা দখল হয়ে গেছে গজারিয়া উপজেলার নয়ানগর মৌজার বিশাল নদী এখন শিপইয়ার্ডের পেটে দখলদার চিহ্নিত হওয়ার পরও বালু ফেলে ভেকু মেশিন ব্যবহার করে প্রকাশ্যে দখল করা হয় নদী দখলের ফলে মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ মুন্সীগঞ্জ-সদরঘাট নৌপথ যেমন সরু হচ্ছে, একই সঙ্গে পরিবেশে পড়ছে নানা রকম নেতিবাচক প্রভাব

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মিরেশ্বরাই মৌজায় ক্রমেই ছোট হচ্ছে ধলেশ্বরী বড় হচ্ছে দখলদারদের সিমেন্ট কারখানা নদী রক্ষা কমিশনের ওয়েবসাইটে নদী দখলকারীদের তালিকা প্রকাশের পরও থামছে না তাদের দখলসন্ত্রাস বরং দখলের পরিধি বাড়ছেই শীতলক্ষ্যা, ইছামতী, কাজলরেখা, রজতরেখা পদ্মা নদীতেও চলছে একই রকম দখলের রাজত্ব

মুন্সীগঞ্জের সদর, গজারিয়া, টঙ্গীবাড়ি লৌহজং উপজেলায় জেলা প্রশাসনের সবশেষ তালিকায় ১১৩ দখলদারের নাম রয়েছে দীর্ঘদিনেও উচ্ছেদ না হওয়ায় বিপর্যস্ত জীববৈচিত্র্য

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপার) মুন্সীগঞ্জের সভাপতি অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান বলেন, এখনই নদী রক্ষায় কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার

নদী দখলের মহোৎসব চলার ফলে জীবন-জীবিকা, আবহাওয়া, যোগাযোগ সবকিছু মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন ধলেশ্বরীতে বিভিন্ন কারখানা বর্জ্য ফেলায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে জলজ প্রাণী, মাছ মরে ভেসে উঠছে ছাড়া অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে গ্রামের পর গ্রাম বিলীন হচ্ছে পদ্মা-মেঘনা-ধলেশ্বরী আমাদের আশীর্বাদ, কিন্তু দখলদারদের কবলে পড়ে প্রকৃতি বিরূপ

১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ রজতরেখা নদীর উৎসমুখ খুলে দিয়ে নদীর জীবন ফিরিয়ে আনতে গত ২৫ জুন স্বেচ্ছাশ্রমে খনন শুরু হয় তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবুজাফর রিপন এর উদ্বোধন করেন এতে অংশ নেয় মুন্সীগঞ্জ সদর টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বহু স্বেচ্ছাসেবক জেলা প্রশাসনের ডাকে সারা দিয়ে নদীটির পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে বীর মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, রোভার স্কাউটস, স্কাউটস, বিএনসিসি যুব রেডক্রিসেন্টসসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ওড়া-কোদাল নিয়ে মাঠে নামেন

ঐতিহ্যবাহী নদিটির পানি প্রবাহ চালু করে জীবন ফিরিয়ে আনতে যা যা প্রয়োজন সবই করার ঘোষণাও আসে নদী রক্ষার কার্যকরী তৎপরতায় চারদিকে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে এরপরও খনন এগোয়নি বিআইডব্লিউটিএর লাল ফিতায় বন্দি হয়ে যায় তাই ক্ষুব্ধ সবাই

রজতরেখা নদীর মুখে মুন্সীগঞ্জের দিঘিরপাড় বাজার সংলগ্ন শিলইয়ের পূর্বরাখি গ্রামে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে প্রবাহ বন্ধ করায় অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ে নদিটি একদা খরস্রোতা নদীটির দুই তীর থেকে চলে দখলের প্রতিযোগিতা

নদীটি ছিল প্রায় ৪৮০ ফুট প্রশস্ত আর এখন কোন কোন স্থানে অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর পদ্মার সঙ্গে সংযুক্তির পথে বাঁধ দিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি, নদিটির বুকে স্থাপন করা হয় দিঘিরপাড় বাজারের একটি বড় অংশ বাকি অংশটি পরিণত করা হয়েছে বাজারের ময়লা ভাগাড়ে নদীটির এই করুণ অবস্থায় নৌ যোগাযোগ বন্ধ ছাড়াও দুই উপজেলার বিস্তীর্ণ জমির আলুসহ অন্যান্য চাষাবাদের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে জমির উর্বরতা হ্রাস, পানি নামতে দেরি হওয়ায় ফসল রোপণে জো আসতে বিলম্ব আর বৃষ্টিতে জমিগুলোতে জলবদ্ধতায় ফসলের ক্ষতি ব্যাপক এসব কারণে আলু উৎপাদনে অন্যতম শীর্ষ জেলাটিতে এবার উৎপাদন কম হয়েছে পদ্মা থেকে ধলেশ্বরী পর্যন্ত প্রবাহিত এই নদী আলদি-মাকহাটি এলাকায় কাজলরেখা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে আর এই কাজলরেখাকে বলা হয় রজতরেখার বোন দুই নদীর জননী বলা হয় পদ্মা নদীকে দুই উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন একটি পৌরসভার বুকচিরে প্রবাহিত নদিটি ছিল এই অঞ্চলের প্রাণ আর নারায়ণগঞ্জে যাতায়াত শরীয়তপুরের মানুষের কাছেও নদীটি ছিল সহজ নৌপথ বড় বড় পাটের পালতোলা নৌকার বিচরণ ছিল অনেক আকর্ষণীয় আর লঞ্চ-স্টিমার চলাচল ছিল নিয়মিত এই প্রতিবেদকের সংবাদ প্রকাশের পর তৎকালীন জেল প্রশাসক উৎসমুখের বাঁধ অপসারণসহ নদীটির জীবন ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন এর পর উৎসমুখের অবৈধ বাঁধ অপসারণ করা হয় কিন্তু খনন না হওয়ায় আর প্রাণ ফিরেনি বিআইডব্লিউটিএ খননের দায়িত্ব নিয়েও আর কোনো কাজ করেনি তাই ক্ষুব্ধ রজতরেখা নদী সংশ্লিষ্ট লাখো মানুষ

×