ঋণ নেওয়ার আশায় বৃহস্পতিবার সকালে সবাই এসেছিলেন সংস্থাটির কার্যালয়ে কিন্তু এসে দেখেন তার আগেই পালিয়েছে সংস্থার কর্মকর্তারা। নিয়ে গেছে তাদের জমানো কোটি টাকার মতো সঞ্চয়। মাত্র ১০ হাজার টাকা জমা দিলেই সহজশর্তে ঋণ পাবেন এক লাখ টাকা। আর তা পরিশোধ করতে পারবেন দুই বছর ধরে। এমন নানা প্রলোভন দেখিয়ে কয়েকশ’ মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে উধাও হয়েছে একটি চক্র। ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুর শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রঘুনন্দনপুরে।
বৃহস্পতিবার ঋণ দেওয়ার কথা থাকলেও মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অফিসের শীর্ষ পদের কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিরা গোপনে চলে গেলেও নিচু পদের দুই কর্মীকে আটকে রাখেন গ্রাহকরা। পরে খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাতেই তাদের উদ্ধার করে পুলিশ।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা জানান, মাত্র এক মাস আগে রঘুনন্দনপুরে ফরিদপুর হাউজিং স্টেটে ছায়াবীথি-মমতা ভবনে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে ‘প্রত্যাশা সমাজ কল্যাণ সংস্থা’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) পরিচয়ে কার্যক্রম শুরু করে। তারা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ১০০ টাকার বিনিময়ে সদস্য সংগ্রহ করে। এর পর পাঁচ হাজার টাকা জমা দিলে এক লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হবে এবং তা দুই বছরে পরিশোধ করার প্রলোভন দেখায়। তাদের প্রলোভনে অনেকেই বিশ্বাস করে টাকা জমা দেন।
এভাবে এক মাস ধরে হাবেলি গোপালপুর, গোয়ালচামট, রঘুনন্দনপুরসহ বিভিন্ন স্থানে সমিতি গঠন করে ঋণ দেওয়ার নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। ঋণ পাওয়ার আশায় অনেকে ধার করে টাকা দেন। কিন্তু টাকা নিয়ে চম্পট দেওয়ায় এখন বিপাকে পড়ছেন এসব পরিবার।
আটকে রাখা দুই কর্মচারী জানান, কর্মকর্তারা পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের আটকে রাখা হয়। তারাও ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের দ্বারা প্রতারিত। নানা প্রলোভনে তাদের চাকরি দিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে টাকা। প্রতিষ্ঠানটির সাইনবোর্ডে রেজিস্ট্রেশন নম্বর ২৭৪/১৯৯৮ ইং লেখা থাকলেও সেটি কোন প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
ভুক্তভোগী মিনারা বেগম জানান, প্রতারক চক্র বৃহস্পতিবার ঋণ দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এছাড়া ঋণ গ্রহণ বাবদ অগ্রিম ১০ শতাংশ টাকা গ্রহণ করে তারা। এদের মধ্যে আফরোজা বেগমের ৩০ হাজার ৬০০ টাকা, নুরুন্নাহারের ২০ হাজার ৬০০ টাকা, ও রুবিনা বেগমকে ৭ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা বলে ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এভাবে অনেকের কাছ থেকে টাকা নেয় চক্রটি। এ বিষয়ে মঙ্গলবার বিকেলে তিনজনের নাম উল্লেখসহ কয়েকজনকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করা হয়।
এরমধ্যে ‘প্রত্যাশা সমাজ কল্যাণ সংস্থা’র চেয়ারম্যান বাবুল আকতার, ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম, সিনিয়র মাঠকর্মী ফেরদৌস আরাসহ প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কর্মচারী প্রতারণার সঙ্গে জড়িত বলে থানায় অভিযোগ করা হয়। দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান ভুক্তভোগীরা। কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আশরাফ জানান, খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে আটককৃতদের কোতোয়ালি থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে।