ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১

দৌলতদিয়ার যৌনপল্লীতে বসবাসরত ছয় শতাধিক শিশু ঝুঁকিতে

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাজবাড়ী

প্রকাশিত: ১৮:৪১, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

দৌলতদিয়ার যৌনপল্লীতে বসবাসরত ছয় শতাধিক শিশু ঝুঁকিতে

রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া দেশের বৃহত্তর যৌনপল্লী হিসেবে পরিচিত এই যৌনপল্লীতে মায়ের কোল থেকে শুরু করে ১৮ বছরের নিচে বেড়ে ওঠা প্রায় ছয় শতাধিক শিশু ঝুঁকিতে রয়েছে যৌনপল্লীতে বসবাস করার কারণে মায়ের পেশায় মেয়েশিশু ছেলেরা মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জরিয়ে যাচ্ছে  যৌনপল্লীতে কয়েকটি এনজিও কাজ করলেও সরকারি তেমন কোনো উদ্যোগ নেই শিশুদের রক্ষার্থে

সরেজমিন দৌলতদিয়া যৌনপল্লী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, স্কুল চলাকালীন দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর প্রতিটি গলিতে ১৮ বছরের নিচে মেয়ে ছেলেশিশুরা  ঘোরাঘুরি করছে অনেকে পান-সিগারেট দোকান, মুদি দোকান, চায়ের দোকান, হোটেল বাংলা মদের দোকানে এক মুঠো খাবারের জন্য কর্মরত রয়েছে স্কুলগামী ছেলেমেয়েরা ছুটি শেষে মায়ের কাছে যৌনপল্লীতে ফিরে যাচ্ছে এর পর মধ্যরাত পর্যন্ত যৌনপল্লীর বিভিন্ন জলসায় উপস্থিত থাকছে ঘুরছে বিভিন্ন অলিগলিতে মাঝরাতে মায়ের পাশে গিয়ে ঘুমাচ্ছে অনেক শিশু জায়গার অভাবে বিভিন্ন দোকানে এবং আশপাশে ঘুমিয়ে পড়ছে সকল  মৌলিক সেবা  থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই এলাকার শিশুরা 

যৌনপল্লীতে বসবাসরত একাধিক নারী বলেন, যৌনপল্লীতে শিশু বাচ্চা ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও সুযোগ-সুবিধা না থাকায় শিশু বাচ্চাদের সঙ্গে রাখতে হচ্ছে অর্থের অভাব এবং উপযুক্ত নিরাপদ জায়গা না থাকায় আমাদের সঙ্গে থাকছে ছেলে   মেয়েশিশুরা কাস্টমার থাকলে বাধ্য হয়ে শিশু বাচ্চাদের ঘরের বাইরে যেতে হচ্ছে

 যৌনকর্মীদের নিজস্ব সংগঠন অসহায় মহিলা শিশু উন্নয়ন সংস্থার সভানেত্রী ফরিদা পারভীন বলেন, উপযুক্ত জায়গা না থাকায় বাধ্য হচ্ছে সঙ্গে রাখতে তবে শিশু বাচ্চাদের সঙ্গে রাখা চরম ঝুঁকি শিশু বাচ্চা সঙ্গে রাখলে একটি সময় মায়ের পেশায় লিপ্ত হচ্ছে মেয়েশিশু এবং ছেলেরা মাদকাসক্তসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে

 খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে সামাজিক সংগঠনপায়াক্ট বংলাদেশ’, কর্মজীবী কল্যাণ সংস্থা, গণস্বাস্থ্য, শাপলা, মুক্তি মহিলা সমিতি, অসহায় মহিলা শিশু উন্নয়ন সংস্থা, অসহায় নারী ঐক্য সংগঠন হাব বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠন কাজ করছে সংগঠনগুলো কিছু শিশুকে নিয়ে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করলেও বিকেলে শিশুদের মায়ের কাছে যেতে হচ্ছে

 

এর মধ্যে সামাজিক সংগঠনপায়াক্ট বাংলাদেশনিজস্ব অর্থায়নে ১৩ শিশু ২৪ ঘণ্টা অবস্থান করে সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছে এর পূর্বে পায়াক্ট বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে ১০ মেয়েকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে বিয়ে দিয়েছে কর্মজীবী কল্যাণ সংস্থায় ৩০ মেয়েশিশু অবস্থান করে লেখাপড়া করছেন অন্য শিশুরা মায়ের কাছে থাকছে বাধ্য হয়ে

 

ইউনিসেফের অর্থায়নে মহিলা অধিদপ্তর ৩টি হাব তৈরি করেছে প্রতিটি হাবে ৩৫ শিশু রয়েছে ৩টি হাবে ১০৫ শিশু সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অবস্থান করে হাবে দুইবার খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে কিন্ত বিকেল ৫টার পর এই সকল শিশু পুনরায় মায়ের কাছে ফিরে যাচ্ছে

 যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা এনজিও সূত্রে জানা যায়, দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে প্রায় ১৫শযৌনকর্মী রয়েছে অবসরপ্রাপ্ত যৌনকর্মী রয়েছে প্রায় ২শ বাড়ি রয়েছে ২৮০টি, আর শিশু রয়েছে প্রায় শতাধিক

সামাজিক সংগঠনপায়াক্ট বাংলাদেশদৌলতদিয়াঘাট শাখার ম্যানেজার মজিবুর রহমান জুয়েল জানান, দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে অবস্থানরত শিশুদের রক্ষা করতে অবশ্য সেফ হোমের বিকল্প নেই গর্ভবতী মায়েদের সুচিকিৎসা ব্যবস্থা এবং গর্ভে সন্তান থাকাকালীন নিরাপদ ব্যবস্থা রাখা অবশ্যই প্রয়োজন তিনি আরও বলেন, শিশুদের নিরাপদ গর্ভবতী মায়েদের নিরাপদ না রাখতে পারলে মায়ের পেশায় লিপ্ত হবে মেয়েশিশু এবং মাদকাসক্তসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে যাবে ছেলেশিশুরা যা বর্তমান চলমান রয়েছে  

×