ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১

ব্যবসায়ীদের অনীহায় মৎস্য আহরণোত্তর পরিচর্যা কেন্দ্র পরিত্যক্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা,দাউদকান্দি॥

প্রকাশিত: ১৪:১৬, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

ব্যবসায়ীদের অনীহায় মৎস্য আহরণোত্তর পরিচর্যা কেন্দ্র পরিত্যক্ত

মৎস্য আহরণোত্তর পরিচর্যা কেন্দ্র নির্মাণের প্রায় পাঁচ বছরেও চালু হয়নি।

কুমিল্লার দাউদকান্দিতে মৎস্য ব্যবসায়ীদের অনীহার কারণে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত নির্মিত মৎস্য আহরণোত্তর পরিচর্যা কেন্দ্র নির্মাণের প্রায় পাঁচ বছরেও চালু হয়নি। প্রায় ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনটি কোনো কাজে আসছে না। উদ্বোধনের প্রায় পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও শেওলা আর জং ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আর সন্ধ্যা হলে মাদকসেবীদের দখলে চলে যায়। স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ীদের দাবি, নির্মিত মৎস্য আহরণোত্তর কেন্দ্রটির স্থান নির্বাচন ভুল ছিল এবং অপর্যাপ্ত জায়গার কারণে ব্যবসায়ীরা সেখানে যেতে নারাজ। 

উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে দাউদকান্দির দোনারচর এলাকায় মৎস্য অধিদপ্তর ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে আধুনিক সুযোগ- সুবিধা সংবলিত মৎস্য আহরণোত্তর পরিচর্যা কেন্দ্রটি নির্মাণ করে। পরের বছর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। ৮ শতাংশ ভূমির ওপর নির্মিত হয়েছে এটি। ভবনের চারদিকে সীমানাপ্রাচীর, অকশন শেড, প্যাকিং শেড, আটটি আড়ত ঘর, কোয়ালিটি কন্ট্রোলার, গভীর নলকূপ, আইস ক্রাশারসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় নির্মিত মৎস্য আহরণোত্তর

কেন্দ্র নির্মাণের প্রায় পাঁচ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো কোনো ব্যবসায়ী অবতরণ কেন্দ্রে ব্যবসা করতে আসছেন না। অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি মেঘনা-গোমতী সেতুর দক্ষিণ পাশে নতুন ফেরিঘাট নামে পরিচিত পুরনো নৈশকালীন মৎস্য বাজারে আড়ত রয়েছে প্রায় ৫০টি। প্রতিটি আড়তের সঙ্গে মাছ রাখার পর্যান্ত জায়গা ও প্রসেসিং করার মতো নানা সুযোগ-সুবিধা রয়েছে বলে আড়তদাররা জানান।

মৎস্য আড়তের মালিক হাজি মো. কাউসার আলম ও মো. ওমর আলী বলেন, বর্তমানে আমরা যেখানে আছি, সেটি আমাদের পুরনো মৎস্য আড়ত। প্রায় ৫০ বছর ধরে আমাদের বাবার আমল থেকেই এখানে আড়তদারি ব্যবসা। সরকার দাউদকান্দির মৎস্য ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য প্রায় পাঁচ বছর আগে নতুন একটি ভবন তৈরি করেছে। সেখানে ব্যবসায়ীদের যাওয়ার জন্য দাওয়াত দিয়েছে, কিন্তু আমরা পুরনো মৎস্য আড়তেই ভালো আছি।

তাঁরা আরো বলেন, নির্মিত মৎস্য আহরণোত্তর পরিচর্যা কেন্দ্রে মাছ রাখা বা প্রসেসিং করার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই। যদিও আগের মতো মিঠা পানির মাছ এখন আড়তগুলোতে আসে না। তবু পুরনো মৎস্য আড়তের চার-পাঁচজনের আড়তে যে পরিমাণ মাছ আসে সে পরিমাণ মাছ দিয়ে নির্মিত পুরো ভবনের জায়গা ভরে যাবে।

দাউদকান্দি উপজেলা মৎস্য আড়ত সমবায়
সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুম মিয়া বলেন, সরকার মৎস্য ব্যবসায়ীদের জন্য যে ভবনটি তৈরি করেছে, সেটিতে আমাদের সব ব্যবসায়ীর জায়গা হবে না। আবার আরেকটি সমস্যা হলো, আমাদের আড়তে মাছের ক্রেতা- বিক্রেতা সবাই রাতে আসেন, তাঁদের সঙ্গে টাকা পয়সা থাকে বিধায় তাঁরা মহাসড়কের পাশে ছাড়া অন্য কোথাও কোনো আড়তে মাছ কিনতে বা বেচতে যান না। আর এটি নির্মাণের সময় আমাদের সমিতির আগের নেতারা মহাসড়কের

পাশে যে জায়গাটি দেখিয়েছিলেন, সেখানে নির্মাণ করা হলে হয়তো এখন সেটি আমরা ব্যবহার করতে পারতাম। এ ছাড়া পাইকার ও শ্রমিকদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই ব্যবসায়ীরা মৎস্য আহরণোত্তর পরিচর্যা কেন্দ্রে যেতে চান না।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন,আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত নির্মিত মৎস্য আহরণোত্তর পরিচর্যা কেন্দ্রে ব্যবসায়ীদের নেওয়ার জন্য কয়েক দফা বৈঠক করেছি তাঁদের সঙ্গে। বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে তাঁরা সেখানে যাচ্ছেন না। তাই পরিচর্যা কেন্দ্রেটি এখন তালাবদ্ধ রয়েছে।

দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাঈমা ইসলাম বলেন,আমি এ উপজেলায় যোগদান করেছি মাত্র এক মাসের কাছাকাছি এ বিষয়ে এখনো ও অবগত নই৷তবে সংশ্লিষ্ট মৎস্য কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে এটি যাতে ব্যবহার করা হয় এ জন্য আমি সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।

 

টুম্পা

×