ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩১

ঝিনাইদহে কর্মী সম্মেলনে জামায়াত আমির

বিগত সরকারের সিন্ডিকেটই এখন বাজার অস্থির করছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঝিনাইদহ

প্রকাশিত: ২২:৪৬, ১৭ অক্টোবর ২০২৪

বিগত সরকারের সিন্ডিকেটই এখন বাজার অস্থির করছে

ঝিনাইদহ জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যারা সিন্ডিকেট করে বাজারে দাম বাড়িয়েছিল এখনো তারা সিন্ডিকেট পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ করেছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহ শহরের উজির আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে জেলা জামায়াত আয়োজিত কর্মীসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বিগত সরকারের অত্যাচার-নির্যাতনের কথা তুলে ধরে বলেন, সকলকে দেশে ফিরিয়ে এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আগামীদিনে জামায়াত রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে নারীদের সর্বোচ্চ সম্মানের সঙ্গে সমাজ উন্নয়নে কাজে লাগানো হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতের  কেন্দ্রীয় নির্বাহী  পরিষদের সদস্য মোবারক হুসাইন ও মাওলানা আজিজুর রহমান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন, ড.  মোস্তাফিজুর রহমান, মো. হারুন উর রশিদ, ড. মাওলানা মোজাম্মেল হক, অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হাই, আব্দুল আলীম, মাওলানা আবু তালিব, ড. মাওলানা হাবিবুর রহমান, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুল আওয়াল, ড. মোস্তাফিজুর রহমান, মাওলানা মতিউর রহমান, মো. বাবুল হোসেন, মো. মতিয়ার রহমান, মাওলানা ওলিয়ার রহমান, মো. আজিজুর রহমান, ফারুক আহমেদ, শহীদ ইবনুল পারভেজের পিতা মাস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরি সভাপতি এইচএম আবু মুসা, ছাত্র শিবিরের ঝিনাইদহ শহর সভাপতি মেহেদী হাসান রাজুু, জেলা সভাপতি মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান সরকারের বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলার আহবান জানিয়ে বলেন, বিগত জালিম সরকারের সময় যারা সিন্ডিকেট গঠন করেছিল তারাই এখনো সিন্ডিকেট পরিচালনা করছে। সিন্ডিকেট ভেঙে তছনছ করে দিন। জনগণকে স্বস্তি দিন। স্বস্তি দেওয়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করুন। ভালো কাজে এগিয়ে যান। জনগণের কাক্সিক্ষত সংস্কার সাধন করুন। জনগণের ৩৭ কোটি হাত আপনাদের সাহায্য করবে। আপনারা ভুল করলে আমরা শুধরিয়ে দেব।

আপনারা একগুঁয়েমি করলে আমরা প্রতিবাদ করব। আপনাদেরকে একগুঁয়েমি করতে দেওয়া হবে না। অতীতের জালিমরা যা করেছে আমরা কেউ যেন তা না করি। মানুষের ওপর জুলুম করলে তার পরিণতি কি হয় কেবলই তা চোখের সামনে আমরা দেখে নিলাম। এখান থেকে সবাইকে শিক্ষা নিতে হবে। কেউ যদি একই পথে চলে তারও একই পরিণতি হবে কোনো ব্যতিক্রম হবে না। 
তিনি বলেন, যারা একদিন গর্ব করে বলতেন এই দেশ আমার বাপ-দাদার এদেশ ছেড়ে আমরা কোথাও পালাব না। তারা কি জাতির সঙ্গে দেওয়া কথা রক্ষা করেছেন? তাদের কর্মীদের সঙ্গে দেওয়া কথা রক্ষা করেছেন? তারা কারো সঙ্গে দেওয়া কথা রক্ষা করতে পারেননি। কারণ তারা আল্লাহকে ভয় করতেন না। তারা নফসের পূজা করতেন। এসব অপকর্মের ভয়ে এই দেশে দাঁড়িয়ে স্থির থাকার দুঃসাহস তাদের হয়নি। আমরা তাদের বিচার চাই। এদরেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। যে যেখানেই থাকুক তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। এবং ন্যায়বিচারের মাধ্যমে তাদের উপযুক্ত পাওনাটা তাদেরকে দিয়ে দিতে হবে। 
প্রধান অতিথি আরও বলেন রাসুলে করীম (সা) মা-বোনদেরকে রাষ্ট্রীয় কাজে লাগিয়েছেন, পরামর্শ করেছেন, যুদ্ধের ময়দানে সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধ করেছেন। শিক্ষার ক্ষেত্রে মায়েরা আলো ছড়িয়েছেন। আমাদের মায়েদের যাদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও মেধা আছে তারাও সমাজে সম্মানের সঙ্গে অবদান রাখবেন। তাদের কাউকেই আমরা গৃহবন্দি করে রাখব না। সমাজ উন্নয়নে ইজ্জতের সঙ্গে ইসলামের বিধান অনুযায়ী তারা ভূমিকা পালন করবেন। 
দীর্ঘ দেড়যুগ ঝিনাইদহ জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। তাই নেতাকর্মীদের মাঝে ছিল ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। সকাল থেকেই বিভিন্ন জেলা, উপজেলা থেকে খ- খ- মিছিল নিয়ে ঝিনাইদহ শহরের ওয়াজির আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে জড়ো হয় নেতাকর্মীরা। পরে বিকেল ৩টার পর কর্মী সম্মেলনে যোগ দেন আমিরে জামায়াত ডা: শফিকুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। 
দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত জামায়াতের এই কর্মী সমাবেশে সম্মেলন স্থল কানায় কানায় ভরে যায়। সে সময় দলের নেতা-কর্মীরা বাসা-বাড়ির ছাদসহ বিভিন্ন স্থান থেকে এই কর্মী সম্মেলনে অংশ নেন। 
নিজস্ব সংবাদদাতা, মাগুরা  থেকে জানান, বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর  কেন্দ্রীয় আমির  ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, একটি মানবিক দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী । প্রহরার প্রয়োজন হবে না। মসজিদে প্রহরার প্রয়োজন না হলে মন্দিরে প্রহরার প্রয়োজন হবে না। মন্দিরের লোকেরা স্বস্তির সঙ্গে তাদের ধর্মকর্ম পালন করবে। মসজিদে কেউ মাইক কেড়ে নিতে পারবে না। খতিবকে যেন অপদস্থ করতে না পারে তা নিশ্চিত করা হবে। মানুষের মধ্যে কোনো  বৈষম্য থাকবে না। যে যার ন্যায্য পাওনা হাতে পেয়ে যাবে। যুবকদের কাজ তুলে দেওয়া হবে ।

জাতি গঠনে যুবকরা ভূমিকা রাখবে । বেকারত্বের অভিশাপে একটা যুবককে আত্মহত্যা করতে হবে না। কারো কাছে যেতে হবে না।  চাকরি পাওয়ার জন্য কোনো দুষ্ট লোকের কাছে ঘুষ দিয়ে চাকরি নিতে হবে না। বিচারের জন্য কাউকে কারো দয়ার জন্য তাকিয়ে থাকতে হবে না। ধনী ও দরিদ্ররা সম্মানের সঙ্গে বসবাস করবে।  মেয়েরা থাকবেন মায়ের মর্যদায় । মেয়েরা থাকবে মেয়ের মর্যাদায়। তাদের ইজ্জতের ওপর হাত দেওয়ার সাহস কোনো দুষ্ট কোনো লম্পটের হবে না।  

তাদের ইজ্জতের ওপর কেউ হাত দিতে পারবে না। একটি মানবিক দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী । গোটা দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করি । তিনি আজ বৃহস্পতিবার সকালে শহরের ভায়না এলাকায় এক সমাবেশে এ কথা বলেন। 
সমাবেশে সভাপত্বি করেন জেলা জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিসে সুরার সদস্য অধ্যাপক এম বি বাকের । জেলার বিভিন্ন এলাকার বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন।

×