এখনো ঘরে ফ্যান চলানোর অবস্থা না
কাটলেও উত্তরে ভোরের কুয়াশা আর ক্ষেত ও ঘাসের ওপর পড়ে থাকা শিশির জানান
দিচ্ছে শীতের আগমন অতি নিকট।কার্তিকের তো শুরু হয়েছে অগ্রহায়ও
বেশি দুর নয়। নতুন সবজি ফসল সবকিছুরই আবেশি সৌর্ন্দয্য ছড়াবে।
আর শীতের আগমনী বার্তার মধ্যে শীতকালীন সবজি আবাদে কৃষকদের
ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে। কেউ আগাম সবজি আবাদ করছেন কেউ বা শীতের
স্বাভাবিক সময়ের সবজি। আর এজন্য তো প্রয়োজন চারা। বগুড়া শুধু সবজি
প্রধান এলাকাই নয়। এখন এর পরিচিতি সবজি থেকে চারা উৎপাদনেও একই
ভুমিকা হয়ে উঠেছে। সবজির চারা উৎপাদনে জেলায় দীর্ঘ দিন ধরেই চলছে
এক নিরব বিপ্লব। বগুড়া থেকে বিভিন্ন ধরনের সবজির চারা উত্তরের জেলা
গুলো ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ হচ্ছে। এর মধ্যে আলাদা ভাবে
সবজির চারা গ্রাম হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে জেলার শাজাহানপুর
উপজেলার শাহানগর। সেখানকার আরো কয়েকটি গ্রামে সবজির চারা
উৎপাদন হলেও শাহানগর সবজির চারা তৈরীর বিশেষ একটি নাম হয়ে ওঠার সঙ্গে
সবজির চারা তৈরীর আতুর ঘর বা সবজির চারা গ্রাম হিসাবে পরিচিত ।
শাহানগর গ্রামের আমজাদ হোসেন তখন স্কুল ছাত্র বাবা মারা যাওয়ার অনেক
কিছু না ভেবেই বাড়ির নিকট মাত্র অর্ধেক শতাংশ জমিতে সবজির চারা
উৎপাদন শুরু করার যাত্র শুরু করেছিলেন।লেখাপড়া আর না এগুলেই চারা উৎপাদের
নার্সারি ব্যবসা নিয়ে আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। লেখাপড়া শেষ
করেছিলেন ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে। তবে নার্সারি ব্যবসা তাকে নিয়ে গেছে
সাফল্যের চুড়ায়। অর্ধ শতাংশ জমিতে চারা রোপন দিয়ে যে নার্সারি শুরু
করেছিলেন তা এক সময়ে ৫/৬ বিঘায় পৌঁছে। এখন আমজাদ হোসেন
একজন প্রতিষ্ঠিত বীজ ব্যবসায়ী। নার্সারি করে বছরে তিনি ৭/৮ লাখ
টাকা আয় করলেও এখন তিনি নার্সারির সঙ্গে বীজ আমদানি করে বীজের
নিজস্ব এ্যাগ্রো ফার্ম দিয়েছেন। বছরে ২ কোটি টাকার বেশি
বেচাকেনা হলেও নার্সারি ব্যবসা ছাড়েননি। এখন আধুনকি পদ্ধতির
একটি পলিশেডে কোকোপিটের মাধ্যমে চারা উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছেন।
আমজাদ হোসেনের পর শাজাহানপুরে ভাই ভাই নার্সারির আলাল দুলাল ও আল
আমিনের কথা ছোট বড় নার্সারি মালিকদের মখে ুখুখে। তাদের পথ ধরেই
সবাজির চারা উৎপাদনে সাড়া জাগিয়ে উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম
আলোকিত করে তুলছেন সবজির চারা উৎপাদনকারী শজাহানপুরের নার্সারির
কৃষকরা। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ও আলোকত কৃষিগ্রাম হয়ে
উঠছে শাহানগর। একগ্রামেই সবাজির চারা উৎপদনের নার্সারি রয়েছে
প্রায় ১শ ৩০/৪০টি। আর পুরো শাজাহানপুরে এর সংখ্যা আড়াই শ’
ছাড়িয়েছে। এর সংখ্যাও প্রতিদিন বাড়ছে। শুধু শাজাহানপুর নয় বগুড়া ও
সদর গাবতলিসহ জেলার অন্য উপজেলাতেও সবজি তৈরীর নার্সারি গুলোও
সমানতালে চলছে। এসব নার্সারর কিছতে আবার ফলু হয়।
কথা হলে কৃষক লাল মিয়ার সঙ্গে ফুলকপি বাধাকপি, টমোটো সহ বিভিন্ন
সবজির চারা তৈরী করছেন। নিজের দেড় বিঘা জমির সঙ্গে পত্তনি নিয়েছেন
আরো দেড় বিঘা জমি। নার্সারি করছেন প্রায় ১৪ বছর ধরে। ৪/৫ মাসের
মৌসুমে তিনি ৫ লাখ টাকা ব্যয় করে বিক্রি করেন ১০ লাখ টাকার সবজির
চারা। কার্তিক মাস পর্যন্ত চারা কেনা বেচা করে একই জমিতে আবার
সবজি আবাদ করেন। রংপুর দিনাজপুর সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে
কৃষক ও ব্যবসায়ীরা এসে সবিজির চারা নিয়ে যান। শাহানগর গ্রামের
আব্দুল লতিফ ২ শতক জমির ওপর চারা তৈরীর নার্সারি গড়েছেন। দেড় থেকে দু’
লাখ টাকা আয় করেন নার্সারি থেকে। চারা কেনা বেচার পর আবার সবজি
আবাদ করবেন নবেম্বর থেকে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম ও
মোস্তাফিজার রহমান জানান, বগুড়াতে প্রতিবছরই সবজির চারা উৎপাদনের
নার্সারির সংখ্যা বাড়ছে। আগে সনাতন পদ্ধতিতে সাধারণ মাটির বেডে
কৃষকরা বীজ ফেলে চারা উৎপাদন করতেন। এখন এতে সমন্বিত হচ্ছে
আধুনিক পদ্ধতি। বৈরী অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে যেমন ছোট ধরনের শেড তৈরী
করছেন কৃষকরা তেমনি আধুনিক পদ্ধতির পলি শেডে কোকোপিটের
মাধ্যমে চারা উৎপাদন করছেন। একারণে চারার গুনগত মানও বাড়ছে। কৃষক ও
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন বগুড়া থেকে এখন প্রায় ৪০/৪৫ টি জেলায়
সবজি নার্সারির চারা যাচ্ছে। আর এর চাহিদা বাড়ার কারণ শুধু গুনগত
মানই নয়। একদিকে কৃষকরা জমি তৈরী করছেন অন্যদিক জমি তৈরীর শেষেই
চারা লাগাতে পারছেন। এতে দ্রুত ফলন আসায় কৃষকরা যেমন সময় সাশ্রয়
করছেন তেমনি আগাম শীতকালীন সবজি বিক্রি করার লক্ষ্য পুরণ হলে লাভও
বেশি আসছে। কৃষকরা জানালেন জুলাইয়ের পর থেকে তারা নার্সারিতে
বীজ বপন দেয়া ফেলা শুরু করেন। এক মাসের মধ্যে চারা হলে তাদের বেচা কেনা
শুরু হয়। চলে নবেম্বর পর্যন্ত। অবার তারা একই জমিতে সবজি আবাদ করতে
পারছেন। কৃষি বিভাগের হিসাব অসুযায়ি জেলার ১২ উপজেলার মধ্যে
সারিয়াকান্দি ছাড়া অন্য উপজেলা গুলোতে সবজি চারার নার্সারি কমবেশি
রয়েছে। তাদের নিবন্ধন অনুযায়ি শাজাহানপুর উপজেলায় নার্সারি রয়েছে
৭৮টি। এর পরেই গাবতলি, বগুড়া সদর ও আদমদিঘীতে বেশি নার্সরি রয়েছে।
নিবন্ধিত সবজি নার্সারি ২৩৬টি হলেও সব মিলিয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়ায়
সবজি নার্সারি রয়েছে ৩৮৭টি বলে জানালে উপ-সহকারী প্রকৌশলী
আব্দুর রহিম। অপর দিকে শাজাহানুরের উপসহকারী প্রকৌশলী জানান বাড়ির
সামনে ছোট একখন্ড জমি থাকলেও সেখানে সবজির নার্সরি গড়ছেন
কৃষকরা। শাজাহানপুরের শাহানগর খোট্টাপাড়া দুরুলিয়া কামারপাড়া
চুপিনগরসহ ৭/৮টি এলাকায় প্রতি বছরই বাড়ছে সবজি নার্সারির
সংখ্যা। শাহানগর গ্রুপ নার্সারি মালিক সমিতির মোঃ উজ্জল ও শাহানগর
সবিজ নার্সারি মালিক সমিতির আমজাদ হোসেনও জানালেন একই কথা।
কৃষকরা এখন সনতান পদ্ধতির নার্সরির সঙ্গে আধুনিক পদ্ধতির সমন্বয় করার
এগিয়ে চলছে বগুড়ার সবজির চারা উৎপাদনেরর নার্সারি। বগুড়া কৃষি
সম্প্রসরাণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোঃ মতলবুর রহমান জানান কৃষকরা
নার্সারিতে একই মৌসমের ৩/৪ দফায় চারা তৈরী করে। বগুড়া থেকে দেশের
৪০/৪৫টি জেলায় সবজির চারা সরবরাহ হচ্ছে এবং এটি উৎপদনে
গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করছে। তিনি আরো জানান এ ধরনের সবজির
নার্সারি জেলায় ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।