ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩১

ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল

‘কষ্ট করে ধান আবাদ করেছিলাম সব নষ্ট হয়ে গেছে’

সংবাদদাতা, নালিতাবাড়ী, শেরপুর

প্রকাশিত: ১৪:৪২, ১৭ অক্টোবর ২০২৪; আপডেট: ১৪:৪৭, ১৭ অক্টোবর ২০২৪

‘কষ্ট করে ধান আবাদ করেছিলাম সব নষ্ট হয়ে গেছে’

নালিতাবাড়ীর মরিচপুরান ইউনিয়নের বেনিরগোপ গ্রামের ঢলের পানি নেমে যাওয়ার পর পচে গেছে আমন ধানক্ষেত। ছবি: জনকণ্ঠ

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে একটানা র বেশির ভাগ পানি নেমে গেছে। পানি নেমে যাওয়ায় ভেসে উঠছে নিমজ্জিত আমন ধানক্ষেত। প্রায় ১০ দিন পানিতে ডুবে থাকায় পচে নষ্ট হয়েছে নিম্ন এলাকার ১৫ হাজার ১০০ হেক্টর জমির আমন ধানক্ষেত। 

তাই বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। পাশাপাশি ভেসে উঠেছে এসব এলাকার ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটের ক্ষতচিহ্ন। 

এবারের স্মরণকালের পাহাড়ি ঢলের বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ধসে পড়েছে শতশত মাটির কাঁচা দালান, টিনসেড ও আধাপাকা ঘর, ভেসে গেছে শতশত পুকুরের মাছ,ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আমন আবাদের উঠতি ফসল ও নষ্ট হয়েছে সবজিক্ষেত। ইতোমধ্যে ৪৮ হাজার ৫০০ জন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের তালিকা প্রনয়ন করে এসব তথ্য কৃষি মন্ত্রনালয়ে প্রেরন করেছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
 
এদিকে, উঠতি আমন ফসল বিনষ্ট হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। তাদের স্বপ্ন যেন বানের পানিতে ভেসে গেছে। তাই এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ও বানভাসীরা সাময়িক ত্রাণের চেয়ে স্থায়ী পুর্নবাসনের দাবী জানিয়েছেন। 

বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়ি ঢলের পানি ভাটির দিকে নেমে গেছে। সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। ইতিমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরেছেন অনেকেই। 

তবে অধিকাংশ ভুক্তভোগীর বাড়ির ঘরই বন্যার পানিতে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আমন ফসলের মাঠ, মাছের ঘের ও মাটির দালান। পানি কমার সাথে সাথেই দেখা দিয়েছে গো খাদ্য সংকট। ঢলের পানিতে খড়ের গাদা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় গবাদিপশু খাদ্য সংকটে পড়েছে। 

উপজেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যমতে, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ৪ হাজার ৬৮টি ঘর সম্পূর্ণ, ১ হাজার ২০০টি ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বাস্তুহারা এসব পরিবারের সদস্যরা। ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ায় রাত কাটছে তাদের অন্যের বাড়িতে কিংবা অস্থায়ী ছাউনিতে। 

১৫ হাজার ১০০ হেক্টর জমির আমন ধানক্ষেত, ১০৮ হেক্টর জমির শাকসবজি ক্ষেত ও বস্তায় লাগানো আদা চাষ নষ্ট হয়ে প্রায় ১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া উপজেলার ২ হাজার ৮৭৫টি পুকুরের মাছ ঢলের পানিতে ভেসে গেছে। 

উপজেলার আন্ধারুপাড়া গ্রামের ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলাম (৪০) বলেন, আমার বাড়িতে ৩টি মাটির দালান ঘর ছিল। ঢলের পানি এসে ৩টি ঘরই ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে। এখন আমি অন্যের বাড়িতে অনেক কষ্ট করে থাকতেছি। এখন আমার মাথা গুজার ঠাঁই নেই। 

ফকিরপাড়া গ্রামের ভুক্তভোগী আছিয়া বেগম (৭০) বলেন, গাঙ্গে (নদী) আমার ঘরবাড়ি ভাইঙ্গা নিছে গা। অনেক কষ্ট কইরা থাকতাছি। একটা ঘর পাইলে কষ্টডা একটু কমতো। 

বেনীরগোপ গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান ও মুনছুর আলী বলেন, কষ্ট করে যা ধান আবাদ করেছিলাম সব নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষি আবাদই আমাদের উপার্জনের উৎস। ক্ষেতের ধান নষ্ট হয়ে যাওয়া এখন আমাদের দিন চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ জানান, পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ৪৮ হাজার ৫০০ জন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের তালিকা প্রনয়ন করে তাদের তথ্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। 

তাছাড়া কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ও তাদেরকে পুর্ণবাসন করতে সরিষা, ভুট্রা ও বোরো ধানবীজ বিতরণের পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদ রানা জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের পুর্নবাসনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।


 

 এসআর

×