ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১

এইচএসসি ॥ কলেজে কলেজে আনন্দ উল্লাস

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:২৬, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

এইচএসসি ॥ কলেজে কলেজে আনন্দ উল্লাস

রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের আনন্দ উল্লাস

দেশের সবকটি বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন স্থান অধিকার করেছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের পাঠানো-
চট্টগ্রামে বেড়েছে জিপিএ-৫
উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার পাস করেছে ৭৪ হাজার ১২৫ জন। পাসের হার ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ। গতবার এই হার ছিল ৭৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এ বছর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ১০ হাজার ২৬৯ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। গত বছরের তুলনায় পাসের হার কমলেও বেড়েছে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড ভবনে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এএমএম মুজিবুর রহমান এসব তথ্য জানান।

এবার ছাত্র পাসের হার ৬৭ দশমিক ৭২ এবং ছাত্রী ৭২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৯১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। মানবিকে ৫৭ দশমিক ১১ শতাংশ ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের পাসের হার ৭৩ দশমিক ৫২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ৪ হাজার ৫১০ জন ও ছাত্রী ৫ হাজার ৭৫৯। অপরদিকে কক্সবাজার জেলায় এবার পাসের হার ৬৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙ্গামাটিতে ৬০ দশমিক ৩২ শতাংশ; খাগড়াছড়ি  জেলায় পাসের হার ৫৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ এবং বান্দরবানে পাসের হার ৫৯ দশমিক ৯০ শতাংশ।
যেসব প্রতিষ্ঠানে শতভাগ পাস করেছে ॥ চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষায় ১৩টি কলেজের শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। এর মধ্যে প্রথম অবস্থানে আছে চট্টগ্রাম বন্দর মহিলা কলেজ, দ্বিতীয় অবস্থানে চট্টগ্রাম বন্দর কলেজ, তৃতীয় অবস্থানে ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল এন্ড কলেজ, চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে হালিশহর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, পঞ্চম কাপ্তাইয়ের বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল এন্ড কলেজ, কোয়ান্টাম কসমো কলেজ, বাড়বকু- হাই স্কুল এন্ড কলেজ,  ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ, শলক কলেজ, কাফকো স্কুল এন্ড কলেজ,  সেন্ট্রাল পাবলিক কলেজ, সাউথ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজ এবং বিআইএম ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ।
জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শীর্ষ ১০ কলেজ ॥ চলতি বছর চট্টগ্রামের পাসের হার কমলেও বেড়েছে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংখ্যা। এবার জিপিএ-৫ শীর্ষ অবস্থানে সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ। এ কলেজের জিপিএ ৫  পেয়েছে ১ হাজার ১০৮ জন পরীক্ষার্থী। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ, এ কলেজের জিপিএ ৫  পেয়েছে ৮৭২ জন। তৃতীয় অবস্থানে থাকা চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৪৭ জন, চতুর্থ অবস্থানে থাকা চট্টগ্রাম কলেজে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৪০ জন।

পঞ্চম স্থানে চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ। এ কলেজের জিপিএ-৫  পেয়েছে ৫৭০ জন। ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজের জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৩৫ জন পরীক্ষার্থী। ৭ম অবস্থানে সরকারি কর্মাস কলেজে জিপিএ-৫  পেয়েছে ৪৮৫ জন। অষ্টম অবস্থানে থাকা বাকলিয়া সরকারি কলেজের ৪১৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। নবম অবস্থানে কক্সবাজার সরকারি কলেজ, এ প্রতিষ্ঠানে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৫২ জন। আর দশম অবস্থানে চট্টগ্রাম সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জিপিও ৫ পেয়েছে ৩৩৩ জন।


সিলেট শিক্ষা বোর্ডে শীর্ষে পাসের হার ও জিপিএ-৫ বেড়েছে

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলে অন্য সকল বোর্ড থেকে এগিয়ে সিলেট।  সিলেট বোর্ডে এ বছর পাসের হার ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ, যা বাকি ৯টি শিক্ষা বোর্ড থেকে বেশি। সিলেট শিক্ষা বোর্ডে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে গত বছরের তুলনায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটিই বেড়েছে। এবার সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৮৫ দশমিক ৩৯। যা গত বছরের তুলনায় ১৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি।

গত বছর পাসের হার ছিল ৭১ দশমিক ৬২। গত কয়েকবছর   সিলেটে জিপিএ কম থাকলেও এ বছর রেকর্ড ৬ হাজার ৬৯৮ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিলে ১ হাজার ৬৯৯ শিক্ষার্থী।  সিলেট শিক্ষা বোর্ডে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় ৮৩ হাজার ১৫৬ জন অংশ নিয়ে ৭১ হাজার ১২ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। সিলেট বোর্ডের অধীনে এইচএসসির ফলাফলে সব সূচকে এগিয়ে আছেন ছাত্রীরা। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা, পাসের হার এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে এগিয়ে রয়েছেন মেয়েরা। 
সিলেট শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক অরুণ চন্দ্র পাল জানান, প্রথমে বন্যা ও পরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসির সবগুলো বিষয়ের পরীক্ষা এবার নেওয়া সম্ভব হয়নি। 

রাজশাহী বোর্ডে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে জিপিএ-৫

রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে গত বছরের তুলনায় এবার দ্বিগুণের বেশি এইচএসসি পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এ বোর্ডে এবার পাসের হারও বেড়েছে। এবার রাজশাহী বোর্ডে ৮১ দশমিক ২৪ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. অলীউল আলম তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এইচএসসির পরীক্ষার ফল ঘোষণা করেন। ঘোষিত ফল অনুযায়ী, বোর্ডে এবার পাসের হার ৮১ দশমিক ২৪ শতাংশ।

এবার এ বোর্ডে ছাত্রদের পাসের হার ৭৬ শতাংশ আর ছাত্রীদের ৮৭ শতাংশ। গত বছর পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ফলাফল নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. অলীউল আলম বলেন, ‘এবার ফলাফল আগের বছরের তুলনায় ভালো হয়েছে। এটা ধরে রাখতে আমরা চেষ্টা করব।’
এদিকে রাজশাহী বিভাগের আট জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ ৮৯ দশমিক ১২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন রাজশাহী জেলায়। আর সর্বনি¤œ ৭৪ দশমিক ৭১ শতাংশ পাসের হার নওগাঁয়। এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৭৭ দশমিক ৩১ শতাংশ, সিরাজগঞ্জে ৭৫ দশমিক ৯১ শতাংশ, নাটোরে ৭৮ দশমিক ৪২ শতাংশ, পাবনায় ৮১ দশমিক ৪৭ শতাংশ, বগুড়ায় ৮৪ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং জয়পুরহাটে ৭৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছেন। বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর বিভাগের আট জেলার ৭৪১টি কলেজের পরীক্ষার্থীরা ২০৩টি কেন্দ্রে পরীক্ষা দেয়।

এবার ৩৫টি কলেজের শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছেন। তবে ১২টি কলেজ থেকে কেউই পাস করতে পারেননি। গত বছর কোনো পাস না করা কলেজের সংখ্যা ছিল চারটি। শতভাগ ফেল করা এসব কলেজের ব্যাপারে শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এদের বিরুদ্ধে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। শুধু তালিকাটা আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠাতে পারি। তারা ব্যবস্থা নিতে পারে।’ 


দিনাজপুর বোর্ডে বেড়েছে পাসের হার
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৪ হাজার ২শ’ ৯৫ জন। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মীর সাজ্জাদ আলী স্বাক্ষরিত পরিসংখ্যানে এসব তথ্য জানানো হয়। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, চলতি বছর দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড থেকে ৬শ’ ৬৫টি কলেজের ১ লাখ ১৩ হাজার ৭শ’ ৯৯ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে ৮৬ হাজার ৯শ’ ৫৪ জন পাস করেন। এবারে এই বোর্ডে ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কেউই পাস করতে পারেনি। শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৫টি। 
বেড়েছে শতভাগ অকৃতকার্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ॥ দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড থেকে দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এবার সার্বিক ফলাফল ভালো। গত বছর বোর্ডে পাসের হার ছিল ৭৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ, সেখানে এবার ৭৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৬ হাজার ৪শ’ ৫৯ জন, এই সংখ্যা এবার ১৪ হাজার ২শ’ ৯৫ জন। এবারে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৫টি। যেখানে গত বছরে এই সংখ্যা ছিল ১৩টি। তবে এবার শূন্য শতাংশ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২০টি। যেখানে ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৬টি।
যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে কেউই পাস করেননি ॥ এবারে ৬শ’ ৬৫টি কলেজের মধ্যে ২০টি কলেজের কেউই পাশ করতে পারেননি। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৬৩ জন। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- লালমনিরহাট জেলার আদিতমারি উপজেলার গন্ধমরুয়া স্কুল ও কলেজ, নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার বাগডোকরা নিমোজখানা হাই স্কুল ও কলেজ, কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার গোপালপুর এমএল হাইস্কুল ও কলেজ, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সনকা আদর্শ কলেজ, ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার গগর কলেজ, হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদার হাইস্কুল ও কলেজ, রংপুর সদর উপজেলার আর্কেডিয়া ইন্টারন্যাশনাল কলেজ, লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার সোনারহাট স্কুল ও কলেজ, একই উপজেলার শিয়ালখোওয়া কলেজ, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর লক্ষ্মীপুর হাইস্কুল ও কলেজ, ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার রতœাই বাগুলাবাড়ী হাইস্কুল ও কলেজ, গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার ফকিরহাট মহিলা কলেজ, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কদমসুল হাটস্কুল ও কলেজ, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মোড়লহাট জনতা স্কুল ও কলেজ, রংপুর জেলার গঙ্গাচরা উপজেলার বড়াইবাড়ী কলেজ, কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার শৌলমারী এমআর স্কুল ও কলেজ, লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার দুহুলী এসসি হাইস্কুল ও কলেজ, লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ, একই জেলার আদিতমারি উপজেলার নামুরি হাইস্কুল এবং কলেজ ও ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল ও কলেজ।
শীর্ষে রংপুর ॥ এইচএসসি পরীক্ষার প্রাপ্ত ফলাফলে বিভাগের ৮টি জেলার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে রংপুর জেলা। এই জেলার পাসের হার ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ আর জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪ হাজার ৮শ’ ৬৫ জন। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে নীলফামারী জেলা। এই জেলার পাশের হার ৮১ দশমিক ৩৯ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৭শ’ ৮৮ জন। তৃতীয় অবস্থানে থাকা গাইবান্ধা জেলার পাসের হার ৭৬ দশমিক ৮০ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৪শ’ ৯৮ জন। ফলাফলে চতুর্থ হয়েছে দিনাজপুর জেলা। এই জেলায় পাসের হার ৭৬ দশমিক ৪১ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ হাজার ১শ’ ১০ জন।

৭৬ দশমিক ২৯ শতাংশ পাশের হার ও ৬শ’ ৬ জন জিপিএ-৫ পেয়ে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে লালমনিরহাট জেলা। ষষ্ঠ অবস্থানে ঠাকুরগাঁও জেলার পাশের হার ৭৬ দশমিক ১১ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ১শ’ ৫ জন। কুড়িগ্রাম জেলার অবস্থান সপ্তমে। এই জেলার পাশের হার ৭৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯শ’ ৩ জন। সবশেষ অবস্থান তথা অষ্টম স্থানে থাকা পঞ্চগড় জেলার পাসের হার ৬৭ দশমিক ৯২ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪শ’ ২০ জন।


ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে ফল বিপর্যয়

ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় বড় ধরনের ফল বিপর্যয় ঘটেছে। পাশের হার ও জিপিএ ফাইভ এর ক্ষেত্রে দেশের অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডের তুলনা পিছিয়ে পড়েছে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। শিক্ষা নগরী বলে খ্যাত খোদ ময়মনসিংহ জেলা শিক্ষা বোর্ডে অবস্থান দ্বিতীয়। এনে ক্ষুব্ধ ও হতাশ ময়মনসিংহের শিক্ষাবিদরা। ময়মনসিংহের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম আব্দুর রফিক জানান, ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের এমন ফল বিপর্যয় কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন কোটা নিয়ে আন্দোলন ও কিছু এলাকায় বন্যা সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এমন ফল বিপর্যয় হয়েছে।  মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড ময়মনসিংহের অধীনে অনুষ্ঠিত উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি)-২০২৪ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল ৭৭ হাজার ৬২১ জন পরীক্ষার্থী যার মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৪৯ হাজার ০৬৯ জন, পাশের হার ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৭০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৮২৬ জন, গত বছর (২০২৩ এ) পেয়েছিল ৩ হাজার ২৪৪ জন। 
এবার ময়মনসিংহে শতভাগ পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫টি, শতভাগ অনুত্তীর্ণ ৪টি। গত চার বছরের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, পরীক্ষায় পাশের হার ক্রমহ্রাসমান। ২০২১ সালে যেখানে পাশের হার ছিল ৯৫ দশমিক ২১ শতাংশ, ২০২২ সালে ৮০ দশমিক ২২ শতাংশ, ২০২৩ এ ৭০ দশমিক ৪৪ শতাংশ, এই বছর  (২০২৪) তা ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশে নেমে এসেছে।ময়মনসিংহ জেলার তিনটি প্রতিষ্ঠানের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সরকারি আনন্দমোহন কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল ১ হাজার ০৬৪ জন, পাশের হার ৮৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪৬৪ জন।

সরকারি মুমিনুন্নেসা মহিলা কলেজ এর পরীক্ষার্থী ছিল ৯৯৭, পাশের হার ৯৭ দশমিক ১৮ শতাংশ, জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬৫৬ জন এবং  শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল ১ হাজার ২৭২, পাশের হার  ৯৭.৭২, জিপিএ ৫ পেয়েছে ৭৪০ জন। ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এবারে তুলনামূলক ভালো ফলাফল করেছে।


কুমিল্লা বোর্ডে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে 

কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে এবার এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে  সম্মিলিত  পাসের হার ৭১ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা বিগত ৪ বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ। গত বছর পাসের হার ছিল ৭৫ দশমিক ৩৯। তবে এবার বেড়েছে জিপিএ-৫। এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭ হাজার ৯২২ জন। গত বছর জিপিএ-৫ ছিল ৫ হাজার ৬৫৫ জন। এ বছর সার্বিক ফলাফলে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে আছে। এ বছর ১ লাখ ১২ হাজার ৩১২ পরীক্ষার্থীর মধ্যে  ৭৯ হাজার ৯০৫ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান  প্রফেসর ড. মো. নিজামুল করিম বোর্ড মিলনায়তনে এ ফল ঘোষণা করেন। 
বোর্ডের চেয়ারম্যান জানান, এ বছর কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন কুমিল্লা, বি-বাড়িয়া, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ ৬টি জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শতভাগ পাস করেছে ১০টি প্রতিষ্ঠান। শূন্য পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৪টি।  সার্বিক ফলে পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে আছে মেয়েরা। মেয়েদের মধ্যে ৪ হাজার ৯৫৪ জন জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। ছেলেদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৯৬৮ জন।

মেয়েদের শতকরা পাসের হার ৭৩ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং ছেলেদের ৬৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ।  সংবাদ সম্মেলনে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর  ড. মো. আসাদুজ্জামান, সচিব প্রফেসর নূর মোহাম্মদ এবং উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ হাবীবুর রহমান ও মোহাম্মদ শহিদুল ইসলামসহ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
বরিশালে এবারেও মেয়েরা এগিয়ে

এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ এর সংখ্যা বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে গত বছরের চেয়ে বেড়েছে। বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকী জানান, ২০২৩ সালে যেখানে গড় পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৬৫, সেখানে এবার গড় পাসের হার ৮১ দশমিক ৮৫।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর অরুণ কুমার গাইন মঙ্গলবার দুপুরে জানিয়েছেন, বিগত দিনের চেয়ে এবার ফলাফল অনেক ভালো হয়েছে। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৩ হাজার ৯৯৩ জন, আর এবারে পেয়েছে ৪ হাজার ১৬৭ জনে। এ ছাড়া বিগত দিনের ধারাবাহিকতায় এবারেও ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা ভালো ফলাফল করেছে। যেখানে পাসের হারের ব্যবধান ১১ দশমিক দুই শতাংশ।

অপরদিকে ফলাফল ও জিপিএ-৫ এর দিক থেকে এবার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে রয়েছে। এ বছর বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মোট ২ হাজার ২৯২ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৩৪৩ জন মেয়ে ও মাত্র ৯৪৯ জন ছেলে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
২১ কলেজে শতভাগ পাস ॥ এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ২১টি কলেজের সবাই শতভাগ পাস করেছে। তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকী জানান, বোর্ডের ৩৪২টি কলেজের ৬৬ হাজার ৮৭ শিক্ষার্থীরা ১৩৭টি কেন্দ্রে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।

যার মধ্যে ২১টি কলেজের সব শিক্ষার্থীরাই পাস করেছেন। আর এর মধ্যে সর্বোচ্চ ঝালকাঠি জেলায় সাতটি, বরিশাল জেলায় পাঁচটি, ভোলা জেলায় চারটি ও পটুয়াখালী জেলায় তিনটি করে কলেজের সবাই পাস করেছে। বাকি দুটি জেলায় একটি করে কলেজের পরীক্ষার্থীরা শতভাগ পাস করেছে।

বগুড়ায় মেয়েরা জিপিএ-৫ পেয়েছে বেশি
এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে বগুড়ার কলেজগুলোতে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের জিপিএ-৫ প্রাপ্তি ও পাসের হার দুুুটোই বেড়েছে। জেলায় মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭ হাজার ১০২ জন শিক্ষার্থী।  জেলায় এবার মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২৬ হাজার ৫৩৮। এর মধ্যে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা জিপিএ-৫ পেয়েছে বেশি। পাসের হারের ক্ষেত্রেও একই ধারা বজায়  থেকেছে।

জেলায়  জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা ৩ হাজার ৮২৭ ও ছেলেদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ হাজার ২৭৫ জন। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক এনামুল হক তথ্যাটি নিশ্চিত করেছেন। অপরদিকে জেলার প্রতিষ্ঠিত ও নামি কলেজগুলো থেকে এবারও জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে ভালো ফলাফলও অর্জিত হয়েছে।
নাটোরে পা দিয়ে লিখে আলিম পাস করল রাসেল
নিজস্ব সংবাদদাতা,  নাটোর ॥ দুই হাত নেই। ডান পা নেই, বাঁ পা রয়েছে, তাও আবার স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক ছোট। পায়ের আঙুলের ফাঁকে কলম রেখে আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা অদম্য প্রতিবন্ধী রাসেল মৃধা এবার আলিম পরীক্ষায় পাস করেছে। সিংড়া উপজেলার শোলাকুড়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে এ বছর আলিম পরীক্ষায় জিপিএ-৩ দশমিক ২৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে রাসেল।

রাসেল মৃধা সিংড়া পৌর শহরের শোলাকুড়া মহল্লার দিনমজুর আব্দুর রহিম মৃধার ছেলে। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মাওলানা মো. মোতাররফ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অভাব-অনটনের মাঝেও রাসেলের পড়াশোনার প্রতি আলাদা স্পৃহা দেখে তার দরিদ্র বাবা-মা হাল ছাড়েননি। সে এর আগে জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষা ও দাখিল পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে বলেও জানান তিনি।
যশোর বোর্ডের এক ধাপ উন্নতি

এইচএসসি পরীক্ষার ফলে গত বছর তলানিতে নেমে যাওয়া যশোর বোর্ড এবার এক ধাপ ওপরে উঠেছে। তবে জিপিএ-৫ প্রাপ্তি সামান্য বাড়লেও কমেছে পাসের হার। এ বছর (২০২৪) যশোর বোর্ডে পাসের হার ৬৪ দশমিক ২৯ ভাগ; জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার ৭৪৯ শিক্ষার্থী। গত বছর  (২০২৩) যশোর বোর্ডে পাসের হার ছিল ৬৯ দশমিক ৮৮ ভাগ; জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৮ হাজার ১২২ জন শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার প্রকাশিত ফলাফলে যশোর বোর্ডের এ চিত্র উঠে এসেছে। বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, ইংরেজিতে অনুত্তীর্ণের হার বেড়ে যাওয়ায় বোর্ডের সার্বিক ফলাফলে এর প্রভাব পড়েছে। 
যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মর্জিনা আক্তার বলেন, এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অবতীর্ণরা করোনা মহামারির সময় ২০২০ ও ২০২১ সালে ৯ম ও ১০ম শ্রেণিতে অধ্যয়ন করেছে। তখন শ্রেণিকক্ষে তাদের পাঠদান সম্ভব না হওয়ায় তাদের ইংরেজিতে দুর্বলতা রয়ে গেছে। যা এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।

পরীক্ষার্থীদের ৩১ শতাংশ ইংরেজিতে অনুত্তীর্ণ হয়েছে। এই প্রভাব পড়েছে সার্বিক ফলাফলে। আগামীতে বোর্ডের ফলাফল ভালো করার জন্য তারা পদক্ষেপ নেবেন।

×