ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১

পাহাড়ি ঢল ও বন্যা

নেত্রকোনায় ৫৭২ কোটি টাকার ক্ষতি

নিজস্ব সংবাদদাতা, নেত্রকোনা

প্রকাশিত: ২৩:১৮, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

নেত্রকোনায় ৫৭২ কোটি টাকার ক্ষতি

বন্যায় বিধ্বস্ত কলমাকান্দা-বরুয়াকোনা সড়ক

জেলার পাঁচটি উপজেলায় সাম্প্রতিক বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে কৃষি, মৎস্য এবং গ্রামীণ অবকাঠামো খাতে অন্তত ৬৬৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলো হচ্ছে কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, পূর্বধলা, বারহাট্টা (আংশিক) ও নেত্রকোনা সদর (আংশিক)। 
জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক বন্যা এবং পাহাড়ি ঢলে পাঁচটি উপজেলার অন্তত ২৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে অন্তত ১৩১টি গ্রাম। এর মধ্যে কোনো কোনো গ্রাম থেকে বন্যার পানি এখনো নামেনি। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন রোপা আমন ও সবজি চাষিরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নূরুজ্জামান জানান, পাঁচ উপজেলার অন্তত ২০ হাজার ৯০৯ হেক্টর জমির রোপা আমন ধানের খেত সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়েছে। এতে ৭০ হাজার ৩৭৮ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতির পরিমাণ ৩০১ কোটি টাকা। অন্যদিকে সবজি নষ্ট হয়েছে ১৬০ হেক্টর জমির। এতে ৫ হাজার ৩২০ কৃষকের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৩ কোটি টাকা। 
এদিকে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহজাহান কবীর জানান, বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে পাঁচ উপজেলার অন্তত ১ হাজার ৭৩০টি পুকুর এবং মৎস্য খামার ডুবে গেছে। আর এতে ভেসে গেছে প্রায় ৮ কোটি টাকার মাছ। এ ছাড়াও গ্রামীণ অবকাঠামো, বিশেষ করে রাস্তাঘাট এবং ব্রিজ-কালভার্টেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম।

এ কর্মকর্তা বলেন, এলজিইডির আওতাধীন প্রায় ২শ’ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক এবং বহু ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর্থিক হিসেবে ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ২৫০ কোটি টাকা। রাস্তাঘাটের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কলমাকান্দা উপজেলায়। ওই উপজেলার কলমাকান্দা-বরুয়াকোনা সড়কসহ অসংখ্য গ্রামীণ সড়ক চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। 
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, জেলার সকল দপ্তরকে বন্যার ক্ষতি নিরূপণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত চিত্র হাতে আসলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও মৎস্য চাষিদের পুনর্বাসন করা হবে। পাশাপাশি গ্রামীণ অবকাঠামোরও দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। 

ঝিনাইগাতীতে ভেসে গেছে ৭০ কোটি টাকার মাছ
সংবাদদাতা, ঝিনাইগাতী, শেরপুর থেকে জানান, শেরপুরে পাহাড়ি ঢলের পানিতে ভেসে গেছে ৭ হাজার পুকুরের মাছ। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন ৫ হাজার মৎস্য চাষি। এদের ভাগ্যে জুটেনি সরকারি কোনো সাহায্য সহযোগিতা। 
ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধারদেনা ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শত শত মৎস্য চাষি লাভবান হওয়ার আশায় মাছ চাষ করে। কিন্তু গত ৩ অক্টোবর জেলার সীমান্তের মহারশি, সোমেশ্বরী, ভোগাই ও চেল্লাখালি নদীর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিতে যায় শেরপুর সদর, ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী, নালিতাবাড়ী ও নকলা উপজেলার ৭ হাজার পুকুরের মাছ। এতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৭০ কোটি টাকা। 
জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে ৫ হাজার মৎস্য চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বেসরকারিভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে। পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে মাছের ক্ষতি হওয়ায় জেলায় আমিষের চাহিদা মেটাতে কঠিন হবে বলে জানা গেছে। শেরপুর জেলায় প্রতি বছর আমিষের চাহিদা ৩২ টন। উৎপাদন হতো ৩৫ টন। উৎপাদিত মাছ জেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরে রপ্তানি করা যেত।

তবে মৎস্য চাষিরা ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে চাহিদা মেটাতে কঠিন হবে। ঘাগড়া সরকার পাড়া গ্রামের মৎস্য চাষি জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ২০২৩ সালে পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে তাদের যে পরিমাণের ক্ষতি সাধিত হয়েছে সে ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। 
সুরিহারা গ্রামের মৎস্য খামারি সুরুজ মিঞা জানান, তার ৫৬ একর জমির প্রজেক্টের প্রায় ২ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। সে এখন দিশেহারা। বন্দভাটপাড়া গ্রামের মৎস্য খামাড়ি উজ্জ্বল মিয়া জানান তার ১০ একর প্রজেক্টের ২০ লাখ টাকার মাছ ভেসে যায়। দাড়িয়ারপাড় গ্রামের সুলতান মিয়ার ১০ একর প্রজেক্টের ২০ লাখ টাকা মাছ ভেসে গেছে। কালিবাড়ী গ্রামের হাজি আশরাফ আলীর ২০ একর প্রজেক্টের ১ কোটি টাকার মাছ ভেসে যায়। একই গ্রামের গোলাম মোস্তফার ১০ একর প্রজেক্টের ২০ লাখ টাকার মাছের ক্ষতি সাধিত হয়। এর মধ্যেই আবারও পাহাড়ি ঢলের পানিতে তাদের পুকুরের সমস্ত মাছ ভেসে গেছে। এখন তারা দিশেহারা।

সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য খামারিরা পায়নি কোন সরকারি সাহায্য সহযোগিতা। জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা প্রণব কুমার কর্মকার বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে খামারিদের ক্ষতির তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া গেলে চাষিদের পুনর্বাসন করা হবে।

×