চিরিরিবন্দর উপজেলার আব্দুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনেই পুকুর
দিনাজপুর চিরিরিবন্দর উপজেলার আব্দুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে নেই কোনো রাস্তা, রয়েছে বিশাল পুকুর। বিদ্যালয়ে প্রবেশের রাস্তা না থাকায় ফটকটি অ-ব্যবহৃত অবস্থায় অনেকদিন ধরে পড়ে আছে। জানা গেছে, উপজেলার আব্দুলপুর ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স সংলগ্ন আব্দুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৩৪ সালে স্থাপিত হয়। স্কুলে বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১শ’ ৪০ জন।
শিক্ষক ও শিক্ষিকার সংখ্যা ৭ জন। দেড় বছর আগে বিদ্যালয়ে বাউন্ডারি ওয়াল ঘিরে একটি ফটক তৈরি করা হয়। কিন্তু সেই ফটক দিয়ে বিদ্যালয়টিতে প্রবেশের জন্য নেই কোনো রাস্তা। তবুও পুকুরের ধারে গেট নির্মাণ করেন উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয়। স্থানীয় একটি এনজিওর কর্মকর্তা মকলেছুর রহমান জানান, রাস্তা নেই, সামনে পুকুর, তারপরও সেখানে স্কুলের প্রধান গেট নির্মাণ করেছে কর্তৃপক্ষ। গেট নির্মাণের দেড় বছর হয়ে গেল, কিন্তু এখন পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ করা হয়নি। তাহলে স্কুলের গেট তৈরি করা হলো কেন ? গেটটি নির্মাণের পর থেকে শুনে আসছি, পুকুরের ওপর দিয়ে রাস্তা তৈরি হবে।
কবে সেই রাস্তা হবে? এখন যার পুকুর সে যদি পুকুরে ওপর রাস্তা নির্মাণ করতে না দেয়, তাহলে অযথা রাষ্ট্রের টাকা দিয়ে গেটটি তৈরি করে কী লাভ হলো? স্কুলের শিক্ষার্থী সুবল দাস বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের প্রধান গেট থাকার পরও, রাস্তা না থাকায় সেটা আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। ইউনিয়ন পরিষদের মাঠের ভেতর দিয়ে ছোট একটি গেট আছে, সেটা দিয়ে আমরা স্কুলে যাই। স্থানীয় যুবক বেলাল হোসেন বলেন, স্কুলের বাউন্ডারি ওয়াল ও গেট নির্মাণের প্রায় দেড় বছর হয়ে গেল, অথচ সেই গেট দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী কেউ প্রবেশ করতে পারে না। কারণ রাস্তা নেই। পুকুরের সামনে লাখ টাকা দিয়ে গেটে বানিয়ে রাখা হয়েছে।
আব্দুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহাবুবর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি সঠিকভাবে কিছু বলতে পারব না। স্কুলের বাউন্ডারি ওয়ালের সঙ্গে গেটের বরাদ্দ ছিল, তখন একসঙ্গে গেটটি নির্মাণ করা হয়। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ময়েনউদ্দিন শাহ বলেন, পুকুরটি তো স্কুলের নামেই রয়েছে। যেখানে গেট নির্মাণ করা হয়েছে, তার সামনের পুকুরে মাটি ভরাট করলেই, যাতায়াতের রাস্তা তৈরি হবে। চিরিরবন্দর উপজেলা প্রকৌশলী মাসুদার রহমান বলেন, প্রায় দেড় বছর আগে বিদ্যালয়টির বাউন্ডারি ওয়াল ও একটি গেট নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়। তখন গেটটি কোথায় হবে তা নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে স্কুলের ঝামেলা হয়।
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানান, পরিষদের মাঠ দিয়ে স্কুলে প্রবেশের জন্য রাস্তা দেবে না। স্কুল কর্তৃপক্ষও ইউনিয়ন পরিষদের সামনে স্কুলের গেট নির্মাণ করবে না। পরে দুই পক্ষ মিলেই সিদ্ধান্ত নেয় যে, পুকুরের জায়গাটা তো স্কুলের, তাই এখানে গেট নির্মাণ করে পরে বরাদ্দ নিয়ে স্কুলের জন্য রাস্তা তৈরি করা যাবে। এখন তারা রাস্তা তৈরি করতে না পারলে, সেটা তাদের ব্যাপার।
চিরিরবন্দর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হাই চৌধুরী বলেন, এ ব্যাপারে এলজিডি অফিসে যাবতীয় তথ্য রয়েছে। আমি সবেমাত্র দুই মাস হলো এখানে যোগদান করেছি। ইতোমধ্যে স্কুলটি পরিদর্শন করেছি এবং প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চেয়েছি, রাস্তা না থাকার পরও সেখানে গেট কেন হলো? প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন পুকুরসহ স্কুলকে জায়গাটা যিনি দান করেছেন, তিনি বর্তমানে পুকুরের দখল ছাড়ছেন না, তাই রাস্তা করা সম্ভব হয়নি।