একরামুল করিম চৌধুরী
একরামুল করিম চৌধুরী। নোয়াখালী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। ক্ষমতার অপব্যবহার, টেন্ডার বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকা কামিয়েছেন। অবৈধ উপায়ে এত টাকার মালিক হলেও দেশে দৃশ্যমান বড় কোনো সম্পদ গড়েননি একরাম ও তার পরিবার। অনিয়ম আর দুর্নীতির মাধ্যমে আয় করা হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন বিদেশে। ভিয়েতনামে গড়েছেন ব্যবসা ও সম্পদ। সদর ও সূবর্ণচরÑ এই দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনের এমপি হলেও গত ১৬ বছরে কার্যত নিয়ন্ত্রণ করেছেন গোটা নোয়াখালী।
গত ২ অক্টোবর সাবেক এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে অর্থপাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রকল্পে অনিয়মসহ দেশে-বিদেশে বিপুল অবৈধ সম্পদ গড়ার অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।
দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম জানান, সাবেক এমপি একরামুল করিম চৌধুরী অর্থপাচার, প্রকল্পে অনিয়ম ও অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। ইতোমধ্যে দেশে তার অনেক অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে অনুসন্ধান টিম।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১ অক্টোবর রাতে চট্টগ্রামের খুলশি এলাকা থেকে দুর্দান্ত প্রতাপশালী সাবেক এমপি একরামুল করিম চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরের দিন সকালে নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সাজ্জাদ হোসেন তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নোয়াখালী-৪ আসনের সাবেক এমপি একরামুল করিম চৌধুরী গত ১৬ বছরে নিয়ন্ত্রণ করেছেন গোটা নোয়াখালী। জেলাজুড়ে একরামুল করিমের দুর্নীতি অনিয়ম ছিল ওপেন সিক্রেট। টানা চারবারের এমপি থাকা অবস্থায় টেন্ডার বাণিজ্য, নিয়োগ-বাণিজ্য, চাঁদাবাজি থেকেই কামিয়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকা।
দেশে দেড়শ’ কোটি টাকার সম্পদ ॥ দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, হলফনামায় ৩২ কোটি ৫৯ লাখ টাকার সম্পদের হিসাব দিলেও তিনি আসলে শতকোটির বেশি টাকার সম্পদের মালিক।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে একটি আলিশান ফ্ল্যাট কিনেছেন একরামুল। যার দাম প্রায় ১০ কোটি টাকা।
আর চট্টগ্রামের লালখানবাজার হাই লেবেল রোডে একরামুলের সাড়ে চার কাঠা জমি রয়েছে। যার দাম অন্তত ২০ কোটি টাকা। সেখানে একটি বহুতল ভবন ছিল। সেটি ভেঙে নতুন ভবন তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। এ ছাড়া তিন বছর আগে খুলশী এলাকায় তিনি একটি ফ্ল্যাট কেনেন। যেটি সম্প্রতি দেড় কোটি টাকায় বিক্রি করে দেন। নগরীর এল ব্লকেও আটতলা একটি বহুতল ভবন আছে তার। ভবনটিতে আছে ১৪টি ফ্ল্যাট। যার দাম অন্তত ৩০ কোটি টাকা।
এদিকে নোয়াখালীর কবিরহাটে একরামুল করিমের বাড়িটি পাঁচ একর জায়গাজুড়ে। এখানে আছে হেলিপ্যাড, সুইমিংপুল। পাশে একটি বাগানবাড়িও রয়েছে। জায়গাসহ বাড়িটির দাম অন্তত ২৫ কোটি টাকা। একরামুল নিজে এবং তার পরিবারের সদস্যরা যেসব দামি গাড়ি ব্যবহার করেন, সেগুলোর বাজারমূল্যও কমপক্ষে ২৫ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম বন্দরের ১১ নম্বর জেটিতে কনটেনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করে একরামুল করিমের প্রতিষ্ঠান এঅ্যান্ডজে ট্রেডিং। এখানে তার ব্যবসা অন্তত ৪০ কোটি টাকার। সব মিলিয়ে দেড়শ’ কোটি টাকার বেশি টাকার সম্পদের মালিক একরামুল করিম চৌধুরী। একরামুল ও তার পরিবারের সম্পদ শুধু দেশে নয়, বিদেশেও আছে।
নগদ টাকা বেড়েছে প্রায় দুইশগুণ ॥ এমপি হওয়ার প্রথম পাঁচ বছরে একরামুল করিম চৌধুরীর নগদ টাকা বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। ২০০৮ সালে তার হাতে নগদ ছিল তিন লাখ ৩৭ হাজার টাকা, যা ২০১৪ সালে বেড়ে হয় পাঁচ কোটি ৩৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এ হিসাবে পাঁচ বছরে নগদ টাকা বাড়ে ১৫৮গুণ। ২০০৮ সালে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার জমা ছিল আট লাখ ৮৬ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয় চার কোটি ৬২ লাখ টাকা। এ হিসাবে এমপি হওয়ার পর ১০ বছরে তার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা বেড়েছে ৫৮গুণ।
হলফনামায় একরামের যত সম্পদ ॥ হলফনামায় তার এমন সম্পদের পরিমাণ ছিল মাত্র ১৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকার। ১০ বছরের ব্যবধানে তার সম্পদের পরিমাণ ফুলে ফেঁপে উঠলেও কমেছে তার ব্যাংক ঋণের পরিমাণ। ২০১৮ সালের হলফনামায় তার ব্যাংক ঋণ চার কোটি ১০ লাখ সাত হাজার ৫৩৯ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। আর ২০০৮ সালে তার হলফনামায় ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ছিল পাঁচ কোটি ৮৫ লাখ ৩৯ হাজার ৭২০ টাকা। এ ছাড়া ২০১৮ সালে দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, একরামুলের অস্থাবর সম্পদের মূল্য এক কোটি ৬০ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে, একরামুল করিম চৌধুরী নিজ নামে দেখিয়েছেন এক কোটি ৩০ লাখ ৫৬ হাজার ২৮০ টাকার কৃষি জমি, ১১ লাখ ২৯ হাজার টাকার অকৃষি জমি, ২৩ কোটি ৭৪ লাখ ৪৯ হাজার ১৪৫ টাকা মূল্যের ভবন, বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট এবং ১১ হাজার টাকার শেয়ার।
অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে একরামুল করিম চৌধুরীর ব্যাংকে জমা রয়েছে দুই কোটি ১৮ লাখ ৩৪ হাজার ৬৮৮ টাকা এবং সঞ্চয়পত্র রয়েছে ৮৩ লাখ ১৪ হাজার টাকার। এ ছাড়া এক কোটি ৩৯ লাখ ৬৩ হাজার ২০২ টাকা মূল্যের গাড়ি, ৯৩ হাজার ৬০০ টাকা মূল্যের স্বর্ণ, তিন লাখ টাকার ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, চার লাখ ১৫ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্র এবং তিন কোটি এক লাখ ৪৮ হাজার ৬৮৮ টাকা ব্যবসায় পুঁজি রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়।
অনিয়ম-দুর্নীতিতে একরামের স্ত্রী শিউলী একরামও ॥ একরামুলের স্ত্রী কামরুন নাহার শিউলি ছিলেন কবিরহাট উপজেলা পরিষদের টানা তিনবারের চেয়ারম্যান। স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে লুটে নিয়েছেন টিআর, কাবিখাসহ বিভিন্ন সরকারি বরাদ্দ। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার সরকারি বরাদ্দ আত্মসাতের বিষয়টি কবিরহাট উপজেলায় ওপেন-সিক্রেট ছিল। এজন্য মাঝে মাঝে স্বামীকেও পাত্তা দিতেন না শিউলী। নিজের টাকায় জেলা শহর মাইজদীর বালুর মাঠ এলাকায় গড়ে তুলেছেন বহুতল ভবন।
২০০৮ সালে একরামের স্ত্রী শিউলীর অস্থাবর সম্পদ ছিল ৭৫ লাখ টাকার ও স্থাবর ৩৬ হাজার টাকার। অথচ ২০১৮ সালে কবিরহাট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময় কামরুন নাহার শিউলী হলফনামায় তিন কোটির বেশি টাকার সম্পদ থাকার কথা উল্লেখ করেন।
টেন্ডার ও চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট ॥ তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত ১৬ বছরে গোটা নোয়াখালী নিয়ন্ত্রণ করেছেন একরামুল করিম চৌধুরী। শুধু টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেই কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন একরাম। নোয়াখালীতে যত সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তার সবকটির ঠিকাদার ছিলেন তার নেতৃত্বে। যেসব কাজের টেন্ডার হতো সেখান থেকে কমপক্ষে ৫-১০ শতাংশ কমিশন নিতেন তিনি। কিছু ক্ষেত্রে বেশিও নিয়েছেন একরাম।
আর পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, এলজিইডি ও পিডব্লিউডি, ডিসি অফিস, বিএডিসির টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে একরামুলের একটি নিজস্ব বাহিনী ছিল। সেই বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন তার ভাগনে রায়হান, চাচাত ভাই নূরুল আমিন রুমি, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাহমুদুর রহমান জাবেদ। এই বাহিনী নোয়াখালীর ফোর লেন প্রকল্প ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার উন্নয়ন কাজ থেকেও চাঁদা নিত। এলাকায় চলাচলকারী চার হাজার সিএনজিচালিত অটোরিক্সা থেকে চাঁদা তুলত তারা।
সিন্ডিকেটে আরও ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সামসুদ্দিন জেহান, জিয়াউল হক লিটন, আব্দুল মমিন বিএসসি, সহসভাপতি আতাউর রহমান মানিক ও মাহমুদুর রহমান জাবেদ ওরফে মামা জাবেদ। গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তারা সবাই এখন আত্মগোপনে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য সাবেক এই এমপি নোয়াখালী জেলা সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজীম প্রধান, সহকারী সুরুজ, জহির মোল্লাদের দিয়ে ওষুধ, হাসপাতাল সরঞ্জামাদি বাইরে বিক্রি করাতেন। সেইসঙ্গে হাসপাতালের যত কেনাকাটা হতো, তাও তাদের দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করাতেন। এ ছাড়া হাসপাতালের এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের মাধ্যমে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট বাণিজ্যও করাতেন সাবেক এমপি একরামুল।
নিয়োগ বাণিজ্য ॥ সাবেক এই এমপির আয়ের আরেকটি বড় উৎস ছিল নিয়োগ বাণিজ্য। জেলা উপজেলায় যত সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ হয়েছে, সেখান থেকে তাকে কমিশন দিতে হয়েছে। চাকরি না পেয়েও অনেককে টাকা দিতে হয়েছে। জানা যায়, পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগে একরাম তার বাহিনীর মাধ্যমে জনপ্রতি কমিশন নিয়েছেন পাঁচ লাখ টাকা। গত ১৫ বছরে যতবার নিয়োগ হয়েছে ততবারই এই বাবদ কমিশন তাকে দিতে হয়েছে। এ ছাড়া নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পদে নিয়োগের বাবদও তিন লাখ টাকা করে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
একরামের পরিবারও দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ॥ একরামের ভাগ্নে কবিরহাট পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক রায়হান। বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে এসে গত পনেরো বছরে তিনি কবিরহাট পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। কবিরহাট পৌরসভায় যেন অনিয়মই নিয়ম। এ সুযোগে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছে জহিরুল। তার স্ত্রী প্রায় কোটি টাকা দামের গাড়ি ব্যবহার করেন। রায়হান গত ১৫ বছরে বাজার ইজারা, টোল আদায়, সিএনজি স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি অব্যাহত রাখেন তার অনুসারীদের দিয়ে। অল্প দরে বাজার ইজারা দেখিয়ে নিজে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা।
একাধিক সূত্র জানায়, পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রায় তিন বছরের বেতন বকেয়া রয়েছে। কিন্তু প্রত্যেক সন্ধ্যায় তার আয়োজনে বসতো মদের আসর। গত ১৫ বছর কবিরহাট প্রেস ক্লাবের সভাপতি পদ আঁকড়ে ছিলেন। কবিরহাট উপজেলার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেকে ১০ পার্সেন্ট করে কমিশন আদায় করতেন।
এদিকে অন্যায় অনিয়মে পিছিয়ে ছিলেন না মেয়রের আপন ছোট ভাই কবিরহাট পৌরসভা আওয়ামী লীগের সদস্য মামুনুল হক মামুন। চলতি বছরের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে একজন সম্ভাব্য প্রার্থী ছিলেন। মামুন তার ভাইয়ের প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে করতেন তদবির। অনেক অসহায় মানুষের থেকে সে হাতিয়ে নেন মোটা অঙ্কের অর্থ। কিন্তু অনেকের কাজ না হলেও তিনি আর টাকা ফেরত দেননি। অসহায় মানুষ ভয়ে মুখ খুলতে পারেনি। মেয়র পরিবারের দখলে রয়েছে কবিরহাট বাজারের অনেক খাস জায়গা।
এমপি থাকার সময় নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের নামে রাস্তা, বাজার ও স্কুল করেন একরামুল। কবিরহাটের ধানসিঁড়ি ইউনিয়নে তাঁর স্ত্রীর নামে হয় ‘শিউলি একরাম উচ্চ বিদ্যালয়’, সুবর্ণচরের চরক্লার্ক ইউনিয়নে ‘একরামুল করিম বাজার’ এবং চরজুবলি ইউনিয়নে ‘একরাম নগর’। পূর্ব চরবাটা ইউনিয়নে হয় ‘শিউলি একরাম বাজার’। এ ছাড়া, চরক্লার্কে ‘শাবাব চৌধুরী ঘাট’ ও চরজব্বর ইউনিয়নে ‘শাবাব নগর’ বানান তিনি। মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে ডেস্টিনি কলেজের নাম বদলে করা হয় ‘একরামুল করিম চৌধুরী কলেজ’। তবে গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এসব স্থাপনার নাম পাল্টে দিয়েছেন স্থানীয়রা।
একরামুলের ছেলের নানা কাহিনী ॥ বাবার অঢেল সম্পদের কারণে শুরু থেকে বেপরোয়া ছিলেন সাবাব। নানা অপকর্মের কারণে দেশব্যাপী আলোচিত সমালোচিত ছিলেন। ২০১৮ সালের জুন মাসে রাজধানীর মহাখালীতে সাবাবের গাড়ির ধাক্কায় সেলিম ভূঁইয়া নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। পরে ৩০ লাখ টাকায় এ ঘটনা সমঝোতার অভিযোগ ওঠে নোয়াখালী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালে কবিরহাট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময় মায়ের প্রতিপক্ষ প্রার্থী আলাবক্স তাহের টিঠুর অনুসারীদের ওপর গুলি চালানো হয় সাবাবের নেতৃত্বে।
এতে টিটুর ৫ অনুসারী গুলিবিদ্ধ হন। সাবাব ২০২৪ সালে সূবর্ণচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তাৎক্ষণিক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম অভিযোগ করেন, বাবার ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ফল বানচাল করে সে আমার জয়কে ছিনিয়ে নেয়। ওই ফল প্রত্যাখ্যান করে তিনি লিখিত অভিযোগ করেন।
একরামুল করিম ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট) আসনে ওবায়দুল কাদের ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বিপক্ষে নির্বাচন করেন। ভোট পান ৩৪ হাজার। তখনই আলোচনায় আসেন তিনি। তবে ক্ষমতা পোক্ত করেন ২০০৮ সালে। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নোয়াখালী-৪ আসনে সেবার এমপি হন তিনি। এর পর থেকে তাকে আর পেছন ফিরে থাকতে হয়নি। এই আসনে চারবার এমপি হন।