পিরোজপুর সদরে নূরানী গেট এলাকায় বুধবার রাতে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে যায়
জেলা সদরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রাইভেটকার খালে পড়ে দুটি পরিবারের চার শিশুসহ ৮ জন নিহত হয়েছেন।
বুধবার রাত সোয়া ২টার দিকে সদর উপজেলার নাজিরপুর সড়কের নূরানী গেট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতদের মধ্যে এক পরিবারের চারজন হলেন- শেরপুর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের ভীমগঞ্জ রঘুনাথপুর গ্রামের নাজির উদ্দিনের ছেলে মো. মোতালেব হোসেন (৩৮), তার স্ত্রী সাবিনা (৩০), তাদের কন্যাসন্তান মুক্তা (১২) ও ছেলে শোয়াইব (৪)। আরেক পরিবারের চারজন হলেন- নাজিরপুরের হোগাবুনিয়া এলাকার মৃত আসাদ মৃধার ছেলে শাওন (৩২), তার স্ত্রী আমেনা বেগম (২৫), শিশুসন্তান শাহাদাত (১০) ও আব্দুল্লাহ (৩)।
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসীম বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বুধবার রাত সোয়া ২টায় খালে গাড়ি পড়ে যাওয়ার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এর পর পিরোজপুর ফায়ার স্টেশনের একটি ইউনিট রাত আড়াইটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যে আরও একটি ইউনিট সেখানে গিয়ে যুক্ত হয়। গাড়িতে থাকা মোট ৮টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, সবাই মারা গেছেন।
এদিকে নিহতের পরিবারকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসন। নিহত শাওনের খালাতো ভাই মুরাদ জানান, শাওন ও মোতালেব ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। রাতে শাওনের বাড়ি পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার হোগলাবুনিয়া এলাকায় কুয়াকাটা থেকে প্রাইভেটকারে করে যাচ্ছিলেন। রাত ২টার দিকে সদর উপজেলার পিরোজপুর-নাজিরপুর সড়কের নূরানী গেটে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খালে পড়ে যায় গাড়িটি। পরে স্থানীয়রা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে তারা গাড়িতে থাকা ৮ জনকে উদ্ধার করে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক ৮ জনকেই মৃত ঘোষণা করেন।
পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক আসিফ হোসেন জানান, রাত সাড়ে ৩টার দিকে ৮ জনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মুকিত হাসান খান জানান, প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৮ জন নিহত হয়েছে। নিহত মো. শাওন ও মোতালেব সেনাবাহিনীর বেসামরিক চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ছিলেন।
শেরপুরে মাতম ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর থেকে জানান, পিরোজপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শেরপুরের একই পরিবারের ৪ জনের মৃত্যুতে ওই পরিবারসহ গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্বজনরা।
জানা যায়, মোতালেব হোসেন সেনাবাহিনীতে চাকরির সুবাদে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন। দুদিন আগে মোতালেব হোসেন ও পিরোজপুরের বাসিন্দা তার বন্ধু শাওন তাদের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কুয়াকাটা বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাইভেটকারটি খালে পড়ে গেলে গাড়িতে থাকা ৮ জনই পানিতে ডুবে মারা যায়। শাওন নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন।
এদিকে ওই খবর মোতালেবের শেরপুরের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে বসে আহাজারি করছেন মোতালেবের বৃদ্ধ বাবা-মা ও একমাত্র বোন। তাদের সান্ত¦না দিচ্ছেন স্বজনরা।
নীলফামারীতে নারীসহ নিহত ২ ॥ স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী থেকে জানান, জেলায় পৃথক দুই সড়ক দুর্ঘটনায় নারীসহ দুইজন নিহত হয়েছে। বুধবার রাত আটটার দিকে নীলফামারী শহরের পাঁচমাথা মোড়ে ও রাত সাড়ে ৯টার দিকে সৈয়দপুর বাইপাস সড়কের সুখীপাড়া এলাকায় দুর্ঘটনা দুইটি ঘটে। এসময় সৈয়দপুর বাইপাস সড়ক দুই ঘণ্টা অবরোধ করে এলাকাবাসী। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
জানা যায়, নিহত সৌরভ হোসেন প্রান্ত (২৭) নীলফামারী পৌর শহরের সবুজপাড়ার রবিউল আলম লালুর ছেলে। বুধবার রাতে মোটরসাইকেলে করে বন্ধুসহ বাসস্ট্যান্ড মোড়ের দিকে যাচ্ছিল। এসময় শহরের পাঁচমাথা মোড়ে পৌঁছালে সামনে থাকা একটি ট্রাককে ওভারটেক করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যায়। এসময় অপরদিক থেকে আসা ১০ চাকার পাথর বোঝাই ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।
অপরদিকে রাত সাড়ে ৯টার দিকে সৈয়দপুর বাইপাস সড়কের সুখীপাড়ায় মাইক্রোবাসের ধাক্কায় রেহেনা বেগম (৬০) নামে একজন পথচারী নিহত হন। নিহত রেহেনা স্বামীর সঙ্গে সৈয়দপুর উপজেলা শহরের সুখীপাড়া ভাড়া বাসায় থাকতেন। তাদের বাড়ি দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার রানীরবন্দরে। প্রকাশ, এর আগে একইদিন বুধবার বিকেলে নীলফামারী-জলঢাকা সড়কের টেংগনমারী ব্রিজ এলাকায় দেলোয়ার হোসেন (৬৫) ও ডোমার-ডিমলা সড়কের পাঙ্গা ময়নুলের মোড় এলাকায় রোজিনা বেগম (৪০) সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়।
গোপালগঞ্জে নিহত ১ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা গোপালগঞ্জ থেকে জানান, বৃহস্পাতিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মান্দারতলায় বাস ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেল চালক শিবু সরকার (৪০) নিহত হয়েছেন। তার বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বোড়াশী গ্রামে। তার পিতার নাম অভিমান্যু সরকার। আহত আরোহী স্বপন বিশ্বাস সাবেক ইউপি মেম্বার।