ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

প্রতিদিন খরচ হয় ১৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ

নিবন্ধনহীন ব্যাটারি রিক্সায় সয়লাব ঠাকুরগাঁও শহর

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ২১:৪৯, ৯ অক্টোবর ২০২৪

নিবন্ধনহীন ব্যাটারি রিক্সায় সয়লাব ঠাকুরগাঁও শহর

 নিবন্ধনহীন ব্যাটারিচালিত এসব যান অবাধে চলাচলের কারণে শহরে যানজট লেগেই থাকে

সয়লাব বললেও ভুল হবে না। এ যেন অবৈধ যানবাহনের সুনামি চলছে ঠাকুরগাঁও শহরে। যে সড়ক দিয়েই যান, সেখানেই অটোরিক্সার উৎপাত। হাজারো অটোরিক্সার চাপে নাস্তানাবুদ ঠাকুরগাঁওবাসী। ঘর থেকে বেরোলেই এদের সঙ্গে মোকাবিলা করে পা টিপে টিপে চলতে হয়। বিশেষ করে শিশু-নারী ও বয়স্করা প্রতিদিন এসব যানবাহনের প্রভাবে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এসব দেখার যেন কেউ নেই। 
জেলার বিআরটির তথ্য মতে, জেলার ৫টি উপজেলায় ৩০ হাজারের ওপরে নিবন্ধনহীন ব্যাটারি চালিত এসব যান অবাধে চলাচল করছে। আর এই অবৈধ যানবাহন থেকে প্রতি মুহূর্তে ঘটছে দুর্ঘটনা। যারা চালক তাদের অধিকাংশের বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর। অপ্রাপ্ত বয়স্করাই এসব যানবাহনের প্রধান চালক। কারণ এদেরকে মালিকপক্ষ নামেমাত্র মজুরি প্রদান করে। এসব চালক বেকার তাই পেটের ধান্ধায় এই যানবাহনগুলোতে তারা সওয়ার হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ এদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

কারণ এসব যানবাহনের মালিক উঠতি কিছু ধনী লুটেরা শ্রেণির লোক। একজন ট্রাফিক পুলিশ কর্মরত অবস্থায় জানান, কি করব । জনগণ প্রতিরোধ করলে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হতে পারে। তাকে পাল্টা প্রশ্ন করা হলে প্রত্তুত্তরে বলেন, উপর ওয়ালারাই এ ব্যাপারে কোনো কথা বলছে না। আমরা ছোট চাকুরে, বেশি কিছু বললেই পানিশমেন্ট হবে। 
বিআরটির তথ্য অনুযায়ী আরও জানা যায়, থ্রি হুইলার পাগলু যানগুলোর কিছু রেজিস্ট্রেশন থাকলেও এখন তা বন্ধ হয়ে গেছে। এগুলো ডিজেল চালিত। এরাও একই কায়দায় চলে। ওই সূত্র হতে আরও জানা যায়, শহরের আনাচে-কানাচে ব্যাটারি চালিত থ্রি হুইলারে বৈধ-অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে চার্জ করা হয়। এভাবে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ অবৈধভাবে ব্যবহার হচ্ছে। ফলে সরকার রাজস্ব হতে যেমনি বঞ্চিত হচ্ছে তেমনি রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ধ্বংস করছে এক ধরনের অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী।

এই অবৈধ ব্যাটারি চার্জের বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট বিভাগের উদ্যোগে শক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। ঠাকুরগাঁও পৌরসভা জানায়, শহরে মাত্র ৫শ’ ব্যাটারি চালিত থ্রি হুইলারকে তারা নিবন্ধন দিলেও এখন এর সংখ্যা কয়েক হাজার। যা তাদের পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। 
বিদ্যুৎ বিতরণ ও বিক্রয় কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, শুধু রাস্তার দুর্ভোগ বাড়ানো নয়, বিদ্যুতের ওপরও প্রভাব ফেলছে এসব অবৈধ অটোরিক্সা। এগুলোর ব্যাটারির চার্জ দিতে প্রতিদিন দেড় হাজার মেগাওয়াট  বিদ্যুৎ খরচ হয়। অথচ ঠাকুরগাঁওয়ে প্রতিদিনের বিদ্যুৎ চাহিদাই ৩০ মেগাওয়াট। 
সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড থেকে চৌরাস্তা মোড় মাত্র এক কিলোমিটারের পথ। কিন্তু রিক্সা বা অটোরিক্সায় এই সামান্য পথ পাড়ি দিতেই সময় যাচ্ছে কমপক্ষে আধা ঘণ্টা। কখনো কখনো তারও বেশি। এ ছাড়া আর্টগ্যালারি থেকে গোবিন্দনগর (আড়ৎ), চৌরাস্তা থেকে সত্যপীরব্রিজসহ অধিকাংশ সড়কেই অটোরিক্সার রামরাজত্ব। রাস্তার দুই পাশজুড়েই গাড়ি আর গাড়ি। তা ছাড়া যেখানে সেখানে থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানোর কারণেও যানজট প্রকট আকার ধারণ করছে।

ট্রাফিক পুলিশ কার্যালয় জানায়, ঠাকুরগাঁও শহরে বর্তমানে ১৫ ট্রাফিক পুলিশ রয়েছেন। তারা শহরের গুরুত্বপূর্ণস্থানসহ শহরজুড়ে যানজট নিরসনের কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু স্বল্প এই লোকবলে বিশাল এই কাজটি করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক বিভাগকে। 
ঠাকুরগাঁও ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (সার্জেন্ট) জানান, শহরকে যানজটমুক্ত রাখতে ট্রাফিক পুলিশ দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, যানজটমুক্ত শহর করার জন্য শহরের মধ্যভাগে প্রধান সড়কটি সিঙ্গেল থেকে ডিভাইডার ওয়ানওয়ে রোডে উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু অটোরিক্সার কারণে মানুষজন সেই চার লেনের সুফল পাচ্ছে না। ঠাকুরগাঁও পৌরসভার নবনিযুক্ত প্রশাসক মোস্তফা শাহিন বলেন,  শহরকে যানজটমুক্ত রাখতে এবং অবৈধ অটো যানবাহন নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।

×