বাগেরহাট পৌরসভায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চাল ও আটা খোলা বাজারে বিক্রির জন্য নিয়োজিত ওএমএস ডিলারদের অধিকাংশ সরকার পরিবর্তনের পর ‘আত্মগোপনে’ চলে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার উপকারভোগী। উপকারভোগীদের সেবা দিতে সীমিত পরিসরে খোলা বাজারে চাল ও আটা বিক্রি করছেন খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মীরা। ভোর হতে না হতেই দীর্ঘ লাইনে কয়েক গুণ মানুষ ভিড় করছেন খাদ্য গুদামের সামনে।
খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাগেরহাট পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে ১০ জন ডিলারের পাঁচটি পয়েন্ট ছিল। এখন সরকারি ছুটির দিন বাদে সপ্তাহের পাঁচ দিন শহরের মুনিগঞ্জ এলাকায় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে খোলা বাজারে চাল ও আটা বিক্রি করা হচ্ছে। লাইনে আগে দাঁড়ানো নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই হট্টগোল হচ্ছে। যা সামাল দেওয়া দিতে বেগ পেতে হচ্ছে।
খোলা বাজারে পণ্য নিতে আসা জোৎস্না বেগম বলেন, ‘ভোর পাঁচটায় এসে দেখি সামনে দীর্ঘ লাইন। দু-ঘণ্টা অপেক্ষা করে ৪ কেজি চাল কিনেছি। তাতে ১০০ টাকা সাশ্রয় হয়েছে।’
হাওয়া বেগম নামে আর এক নারী বলেন, ‘সকালে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের বাড়ি রেখে আসছি, সকালে খাবারও দিতে পারি নাই। এখন বারোটা বাজে। যদি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চাল, আটা দিত আমাদের সুবিধা হতো।’
হারুন মোল্লা নামের আর এক জন বলেন, ‘আমাদের কষ্ট হলেও সঠিকভাবে খাদ্যগুতামে এসে চাল নিতে পারছি। কিন্তু আগে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দিতো, কিন্তু আমরা পেতাম না লাইনে দাঁড়ানোর আগেই বলতো শেষ হয়ে গেছে।’
বাগেরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শাকিল আহমেদ বলেন, “পৌরসভা এলাকায় নিয়োগকৃত ডিলারদের মাধ্যমে ওএমএস কার্যক্রম পরিচালিত হত। পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে ডিলাররা উপস্থিত হয়ে চাল, আটা উত্তোলন করতে পারছেন না। তাই মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে নিজস্ব জনবল দিয়ে ওএমএস কার্যক্রম চলমান রেখেছি। একজন উপকারভোগী প্রতিদিন পাঁচ কেজি আটা ও পাঁচ কেজি চাল কিনতে পারছেন।
তবে উপকারভোগীর সংখ্যা বেড়ে গেলে সেক্ষেত্রে পরিমাণ কমিয়ে সবাইকে আমরা চাল, আটা দিচ্ছি। জনবল কম ও কাজের অভিজ্ঞতা না থাকায় উপকারভোগীদের সামাল দিতে হিমশিস খেতে হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “ওএমএস কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে পরিচালনা করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে জানানো হয়। তাদের সহযোগিতা না পাওয়ায় এই কার্যক্রম ঝুঁকির মধ্যে দিয়েই চালাতে হচ্ছে। প্রতিদিন হাজারের বেশি উপকারভোগী আসছে তাই আমরা তাদের প্রথমে রাস্তার দুপাশে সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড় করিয়ে একটি টোকেন দিচ্ছি। টোকেন যিনি পাচ্ছেন তিনি অবশ্যই চাল ও আটা পাবেন। আমরা কাউকে বঞ্চিত করছি না।”
এর মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ও গর্ভবতী নারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাল, আটা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে খাদ্য কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রণালয় ডিলার নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশোধিত নতুন নীতিমালা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে। সেটি হাতে পেলে নতুন ডিলার নিয়োগে প্রক্রিয়া শুরু করব। ডিলার হতে আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদনপত্র গ্রহণ করে নতুন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হবে।”
এসআর