ব্রহ্মপুত্র সেতুর পশ্চিম প্রান্তে জামালপুর অংশে পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় শহররক্ষা বাঁধে ধস
জামালপুর-শেরপুর ব্রহ্মপুত্র সেতুর পশ্চিম প্রান্তে জামালপুর অংশে পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় জামালপুর শহররক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে গত তিনদিনে ২০ মিটার জায়গাজুড়ে ধসে গেছে শহররক্ষা বাঁধের সিসি ব্লক ও রাস্তা। এতে ঝুঁকিতে রয়েছে পুরো বাঁধ এবং জামালপুর-ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়ক। ভাঙনের জায়গাটি স্থানীয়দের উদ্যোগে সুরক্ষার জন্য বাঁশ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। বাঁধটি দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, জামালপুর-শেরপুর ব্রহ্মপুত্র নদের পুরাতন ফেরিঘাট সংলগ্ন সেতুর নিচে জামালপুর-ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কে বর্ষাকালে বড় বড় গর্ত হয়ে ব্যাপক জলাবদ্ধতা হয়। সেই পানি নিষ্কাশনের জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সেখান থেকে ড্রেন ও প্লাস্টিকের পাইপ বসিয়ে শহররক্ষা বাঁধের নিচ দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে ফেলা হয় পানি। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে শহররক্ষা বাঁধের নিচের সেই পাইপ ফেটে ভেঙে যায় গত শনিবার বিকেলে। এতে শহররক্ষা বাঁধ ক্রমাগত ধসে যাচ্ছে। সেখানে বিশাল আকারের গর্ত হয়ে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
সোমবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, শহররক্ষা বাঁধের সিসি ব্লক ও মাটি ধসে পড়া অব্যাহত রয়েছে। এতে করে সেখানে সেতুর দুটি পিলার ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন বলেন, সেতুর পিলারের কাছে পানি নিষ্কাশনের পাইপ ফাটার আগে সেখানে অল্প গর্ত দেখা দেয়। বৃষ্টিতে আস্তে আস্তে গর্ত বিশাল আকার ধারণ করেছে। শহররক্ষা বাঁধ ধসে পড়া অব্যাহত রয়েছে। এই গর্তের কারণে অনেকের বাড়িঘর হুমকিতে আছে। যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা এলাকাবাসী অনেক দুর্ভোগে আছি। বাঁধটি দ্রুত মেরামতের দাবি জানান তিনি।
স্থানীয় হুরমুজ আলী বলেন, সেতুর এই পিলারের আশপাশে এবারের বর্ষায় বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেতুর নিচে বড় ড্রেজার বসিয়ে নদী খননের কাজ করায় সেতু ও নদীর পশ্চিম পাড়ের শহররক্ষা বাঁধ হুমকিতে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, শহররক্ষা বাঁধের ভাঙা অংশটুকু মেরামত না করা হলে ঘরবাড়ি সব নদের মধ্যে চলে যাবে। কোনো উপায় থাকবে না।
ঘরবাড়ি ভেঙে নদের মধ্যে চলে যাচ্ছে। শহরের পাথালিয়া থেকে পুরাতন ফেরিঘাট পর্যন্ত সাড়ে ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বাঁধটি নির্মাণে ব্যয় হয় ৫১ কোটি টাকা। জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নকিবুজ্জামান খান জনকণ্ঠকে বলেন, কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টির কারণে ব্রহ্মপুত্র সেতুর পিলারের কাছে শহররক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। বাজেট করা আছে, দ্রুতই টেন্ডারের মাধ্যমে তা মেরামত করা হবে।
কাপাসিয়া,সংবাদদাতা, কাপাসিয়া, গাজীপুর থেকে জানান, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় শীতলক্ষ্যা নদীর ভাঙনে একটি গ্রামীণ সড়কের ১০০ মিটার বিলীন হয়ে গেছে। গত কয়েকদিনের টানা প্রবল বৃষ্টি ও নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় সড়কটিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে যান চলাচল প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। এতে রানীগঞ্জ, তারাগঞ্জ, নাশেরা গোসাইরগাঁও, ঘিঘাট, একডালা, ডেমরা, ফেটালিয়া, বাড়িগাঁওসহ ৯টি গ্রামের মানুষ, অসুস্থ রোগী ও বৃদ্ধ লোকজন যাতায়াতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীন রানীগঞ্জ-তারাগঞ্জ বেড়িবাঁধটি। সড়কটি দিয়ে কাপাসিয়া ও কালীগঞ্জ উপজেলার প্রায় ১০ হাজার মানুষ চলাচল করে। উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মুচিবাড়ি এলাকার পূর্বপাশ দিয়ে বয়ে গেছে শীতলক্ষ্যা নদী। নদীর পশ্চিমপাড়ে অবস্থিত এই গ্রামীণ সড়কটি। গত সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কটির ১০০ মিটারের বেশি অংশ নদীতে বিলীন হয়েছে। ২০ ফুট প্রস্থের সড়কটির মাত্র কয়েক ফুট অবশিষ্ট রয়েছে। নদীর পানির স্রোত বাড়লে সেটিও যে কোনো সময় বিলীন হয়ে যাবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য খন্দকার আলী নেওয়াজ মঞ্জু বলেন, এলাকার ছয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী চলাচল করে সড়কটি দিয়ে। ভাঙনের কারণে যান চলাচল বন্ধ প্রায়। এসব শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এক কিলোমিটারের পথ যেতে হচ্ছে চার কিলোমিটার ঘুরে। যাতায়াত খরচও তিনগুণ বেড়েছে।
উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার আজিজুর রহমান পেরা বলেন, শীতলক্ষ্যা নদীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। বর্তমানে নদীভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এলজিইডি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এলাকার কয়েক হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম লুৎফর রহমান বলেন, সম্প্রতি শীতলক্ষ্যা নদীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। উপজেলা প্রকৌশলীকে (এলজিইডি) দ্রুত সড়কটি সংস্কারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।