লালমাটিয়ার কলাকেন্দ্র গ্যালারিতে রবিবার আলিঙ্গনে মিলছুট শীর্ষক প্রদর্শনীর ছবি দেখছেন দর্শনার্থীরা
প্রকৃত অর্থে শিল্প সৃজনের নির্দিষ্ট কোনো ফর্ম বা কাঠামো নেই। তাই কখনো শিল্পীর কল্পিত ভুবনের ভাবনা থেকে শিল্পকর্মের সৃষ্টি হয়। বাস্তবতার সঙ্গে কল্পনার জগৎকে জুড়ে দিয়েও সৃজিত হয় শিল্প। আবার এই দুই কাঠামোর বাইরে শুধুই চারপাশের চেনা জগৎ থেকে শিল্পের আবির্ভাব ঘটে। আপন অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির শিল্পিত বুননে শিল্প সৃষ্টির পথে ধাবিত হন শিল্পী। তেমনই দুই শিল্পী মাসুদা খাতুন জুঁই ও জাফরিন গুলশান। এই শিল্পীদ্বয় জীবনবোধের সঙ্গে অভিজ্ঞতার মেলবন্ধনে ছবি এঁকেছেন।
গড়েছেন স্থাপনাশিল্প। চিত্রকর্ম ও স্থাপনাশিল্পের সমন্বিত সেসব শিল্পকর্ম নিয়ে লালমাটিয়ার কলাকেন্দ্র গ্যালারিতে চলছে প্রদর্শনী। নিরীক্ষাধর্মী এই শিল্পায়োজনটির শিরোনাম ‘আলিঙ্গনে মিলছুট’। প্রদর্শনীটির কিউরেট করেছেন খ্যাতিমান শিল্পী লালা রুখ সেলিম।
মাসুদা খাতুন জুঁই এবং জাফরিন গুলশানের শিল্প সৃষ্টির সূত্র একই রকম হলেও প্রকাশের ধরনটি ভিন্ন। উভয়ের কাজের মাঝে রয়েছে আপন পরিবেশ থেকে উদ্ভূত ভাবনা, উপলব্ধি ও সংবেদনশীলতা। রয়েছে সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি এবং জীবনবোধ ও চিন্তার প্রতিফলন। সেই সুবাদে জাফরিন ক্যানভাসে মেলে ধরেছেন যাপিত জীবন ও ভাবনাপ্রসূত নানা বিষয়কে। অ্যাক্রেলিক ও জলরং মাধ্যমে আঁকা ছবির সঙ্গে গড়েছেন স্থাপনাশিল্প। এভাবে তিন মাধ্যমের আশ্রয়ে গড়েছেন শিল্পকর্ম। তার চিত্রকর্মে আপন অভিজ্ঞতাজাত নারীত্ব ও মাতৃত্বের প্রকাশের উল্টোপিঠে ব্যক্তিগত ভাবনার প্রকাশ ঘটেছে।
দৈনন্দিন জীবনের প্রাত্যহিক ঘটনাবলিকে ক্যানভাসে মেলে ধরেছেন নিজস্ব রং ও ঢঙে। জাফরিনের রেখাচিত্রে শিল্পীর স্বতঃস্ফূর্ত ছটফটে স্বভাব স্পষ্ট। নিজের জীবন, ঘটে যাওয়া ঘটনা, এসে যাওয়া ভাবনা, অস্বস্তি কিংবা ভালোলাগাÑএমন নানাবিধ বিষয় তাকে উদ্বুদ্ধ করেছে শিল্প সৃজনে। পারিপার্শ্বিকতা, সমাজ, রাজনীতি সবকিছুর মধ্য দিয়ে জারিত হয়ে তার ভাবনা সুসংবদ্ধ হয়ে উপস্থাপন করেছে বৃহত্তর পরিসরকে। এভাবেই জাফরিনের শিল্পযাত্রা এগিয়েছে ব্যক্তি থেকে সমষ্টির পানে।
অন্যদিকে মাসুদা খাতুন জুঁই শিল্প সৃজন করেছেন পারিপার্শ্বিক জীবননির্ভর বহির্মুখী ভাবনা থেকে। তিনি খুঁটিয়ে দেখেছেন আশপাশের মানুষের হেঁটে যাওয়া, খেটে খাওয়া জনতার সংগ্রাম ও জীবনধারণের ভঙ্গিকে। মানুষের এই অবয়বের মাঝে শিল্পী খুঁজে ফেরেন অস্তিত্ব নির্বাহের আখ্যান। তাই তো শ্রমজীবী মানুষের পরিধেয় কাপড় থেকে শুরু করে আসবাবপত্র, গাঁটরি ও বোচকার ব্যবহারে গড়েছেন স্থাপনাশিল্প। শুধু কি তাই? টেবিল-চেয়ার, মশারি, আলনা ও কাপড়ের থলেও হয়ে উঠেছে তার শিল্প সৃষ্টির অনুষঙ্গ। স্থাপনাশিল্পের জলরংয়ের ছোঁয়ায় এঁকেছেন মানুষের মুখচ্ছবি থেকে নারীত্ব।
চিত্রকর্ম ও স্থাপনাশিল্প মিলে অধর্শতাধিক শিল্পকর্মের সমন্বয়ে সেজেছে এই শিল্পায়োজন। আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। প্রতিদিন বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।