ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১

রাজধানীর ডেমরা

জলাবদ্ধতায় এলাকাবাসীর দুর্ভোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, ডেমরা, ঢাকা

প্রকাশিত: ২১:৪০, ৬ অক্টোবর ২০২৪

জলাবদ্ধতায় এলাকাবাসীর দুর্ভোগ

কয়েকদিনের টানা বর্ষণে ডেমরার বিভিন্ন রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়

গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ডেমরার কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় এলাকাবাসী পড়েছে চরম দুর্ভোগে। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ও অভ্যন্তরীণ পানি নিষ্কাশন খালগুলো দিয়ে বৃষ্টির পানি সরতে না পারায় নি¤œ এলাকাগুলোর পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। রাস্তাঘাটে পানি জমে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের চলাচলে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি। 
ডিএসসিসির ৬৪ ও ৬৫ নং ওয়ার্ডের কোনাপাড়া, মাতুয়াইল, ফার্মের মোড়, মাতুয়াইল মেডিক্যাল সড়ক, ৬৬নং ওয়ার্ডের পূর্বডগাইর গ্রিন সিটি এলাকা, বাদশা মিয়া রোড, ডগাইর নতুনপাড়া, পশ্চিম সানারপাড়, কোদালদোয়া, বামৈল পশ্চিমপাড়া, সাইনবোর্ড, ৬৭নং ওয়ার্ডের পূর্ববক্সনগর, মহাকাশ রোড ও শুকুরশীর বেশকিছু এলাকার রাস্তাঘাটে বৃষ্টির পানি জমেছে। অনেক ঘরবাড়িতেও বৃষ্টির পানি ঢুকেছে।
 ডেমরার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে পানি জমে থাকায় এবং বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হওয়ায় যানবাহন চলাচলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে। নি¤œাঞ্চলসহ অনেক এলাকার বাসিন্দাদের ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় তারা অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। ঘরের মেঝে পানি দিয়ে পুরোপুরি ভরে যাওয়ায় বিছানা, আসবাবপত্র ও অন্যান্য গৃহস্থালির জিনিসপত্র নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ঘরের রান্না, পানি সংগ্রহ এবং শৌচাগার ব্যবহারের মতো মৌলিক কাজগুলোতেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। শিশু ও বৃদ্ধদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে গেছে। ঘরে জমে থাকা পানি থেকে রোগবালাই ছড়ানোর আশঙ্কা  দেখা দিয়েছে। দূষিত পানি পান করা বা খাদ্যদ্রব্যে মিশে যাওয়ার কারণে ডায়রিয়া, কলেরা ও টাইফয়েডের মতো রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে। 
এছাড়া জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে মশার বংশবৃদ্ধির ফলে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ও চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। ড্রেনের দূষিত পানিতে থাকা লেপ্টোস্পাইরা ব্যাকটেরিয়া ত্বকের ছোট ছোট কাটা বা ক্ষত দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে জ্বর, পেশীতে ব্যথা এবং কিডনি বা লিভারের সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া দূষিত পানির সংস্পর্শে ত্বকের বিভিন্ন রোগ যেমন ফাঙ্গাল ইনফেকশন, এলার্জি, র‌্যাশ বা ঘা হওয়া। বৃষ্টির পানির মাধ্যমে চোখে জীবাণু প্রবেশ করে কনজাঙ্কটিভাইটিস বা আই ফ্লুর মতো চোখে প্রদাহ বা সংক্রমণ ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে প্রতিবছরই একই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হয়, কিন্তু কোনো সঠিক সমাধান পাওয়া যায় না। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে অফিসগামী মানুষের পোহাতে হয় নানাবিধ সমস্যা। দূষিত পানির কারণে অনেক ব্যবসায়ী তাদের দোকানপাট খুলতে পারছেন না। 
এলাকাবাসীর দাবি, এই সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান না হলে প্রতিবছরই তাদের এই দুর্ভোগে পরতে হবে।
এ বিষয়ে ৬৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. আবুল কাশেম  দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা প্রতিবারই বৃষ্টির আগে দুশ্চিন্তায় থাকি। একটু ভারি বর্ষণ হলেই ঘরের ভেতর পানি প্রবেশ করে। বিশেষ করে রান্নাঘর পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় রান্না করা তো দূরের কথা, ঘরে থাকাই কষ্টকর হয়ে যায়। বাইরে থেকে খাবার কিনে খেতে হয়, যা আমাদের মতো নি¤œবিত্তদের জন্য অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা  মো. মহিউদ্দিন  দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, আমার ঘর থেকে বের হওয়ার রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। আমার মেয়েকে স্কুলে পাঠাতে সমস্যা হচ্ছে। অনেক জায়গায় বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা পানিতে ভাসতে দেখা যাচ্ছে। দূষিত পানিতে প্রতিনিয়ত চলাচলের কারণে আমার শরীরে চর্ম রোগের দেখা দিয়েছে। স্থানীয় চিকিৎসক মো. আমজাদ ভূঁইয়া বলেন, বন্যার পানিতে থাকা জীবাণু ও দূষিত পদার্থ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করতে পারে। পানিতে দীর্ঘ সময় পা ডুবে থাকলে চর্মরোগ দেখা দিতে পারে।

এ ছাড়া দূষিত পানি পান করলে ডায়রিয়া, আমাশয় ও টাইফয়েডের ঝুঁকি থাকে। ডিএসসিসির ৬৭নং ওয়ার্ডের সদ্য সাবেক কাউন্সিলর ইব্রাহীম খলিল বলেন, আমরা পর্যায়ক্রমে উন্নয়নের কাজ করছিলাম। শেখ হাসিনার পতনের পর আমাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আর ডিএনডির অভ্যন্তর বলে ইরিগেশন এ প্রকল্পকে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন করতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।

×