ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১

মণ্ডপে মণ্ডপে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি, নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা

শিল্পীর তুলিতে জাগছে প্রতিমার ত্রি-নয়ন

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:৩৪, ৬ অক্টোবর ২০২৪

শিল্পীর তুলিতে জাগছে প্রতিমার ত্রি-নয়ন

নতুন ও ব্যতিক্রমী আকর্ষণ ধান দিয়ে তৈরিা দুর্গা প্রতিমা

বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান এবং সবচেয়ে বর্ণাঢ্য ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। শরৎ ঋতুতে আবাহন হয় বলেই, দেবীর আরেক নাম শারদীয়। এ উপলক্ষে ম-পগুলো সাজানো হচ্ছে বর্ণিল সাজে। দিন-রাত সমানতালে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পীরা। পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা আগামী ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে। ১৩ অক্টোবর রবিবার বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুর্গোৎসব।

পূজার সময় ঘনিয়ে আসায় শেষ মুহূর্তে দেবীকে সাজিয়ে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা তৈরির মৃৎশিল্পীরা। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। শিল্পীর তুলির টানে জেগে উঠছে প্রতিমার ত্রি-নয়ন। তুলির শেষ টানের অপেক্ষায় শিল্পীরা। পূজা উপলক্ষে চলছে প্রস্তুতি সভা। দেশের বিভিন্ন জেলার পূজার প্রস্তুতি নিয়ে সংবাদ পাঠিয়েছেন স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতারা।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে যাত্রীদের সুবিধার্থে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে সাতটি বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আগামী ১০-১৩ অক্টোবর পর্যন্ত এই বিশেষ ট্রেনগুলো চলবে। নিয়মিত দুই জোড়া ট্রেনের পাশাপাশি এই বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালু করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে। কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা মো. গোলাম রব্বানী জানান, ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে ১০ অক্টোবর রাত ১১টায় কক্সবাজারগামী প্রথম বিশেষ ট্রেনটি ছেড়ে পরদিন সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে কক্সবাজার পৌঁছাবে।

এ ছাড়া ১১-১৩ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিদিন কক্সবাজার থেকে দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে বিশেষ ট্রেনগুলো ছাড়বে রাত ১০টায় কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছাবে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, টানা তিনদিনের সরকারি ছুটির কারণে যাত্রীদের ব্যাপক চাহিদার কথা মাথায় রেখে চারদিনে মোট সাতটি বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
নীলফামারী 
জেলার ছয় উপজেলায় এবার ৮১০টি ম-পে হবে দুর্গাপূজা। এই উৎসব উপলক্ষে ম-পগুলো সাজানো হচ্ছে বর্ণিল সাজে। শনিবার পূজাম-প ঘুরে দেখা যায় শিল্পীর হাতের জাদুতেই দেবী দুর্গার মৃন্ময়ী মূর্তিতে ফুটে তোলা হচ্ছে ত্রি-নয়ন। যাকে হিন্দুশাস্ত্রে বলা হয় দুর্গা মায়ের চক্ষুদান। বলতে গেলে প্রায় সব ম-পে প্রতিমার কাঠামো তৈরি হয়ে গেছে। এখন চলছে রং-তুলির আঁচড় দেওয়ার কাজ। ম-প তৈরি, আলোকসজ্জা ও সাজসজ্জার কাজও চলছে পুরোদমে। গত বুধবার মহালয়ার মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার দেবীর বোধন। পরদিন বুধবার দুর্গা দেবীর ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ ও বিহিতপূজা হবে। 
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তর সূত্র জানায়, এবার ৮১০টি ম-পের মধ্যে ডিমলায় ৭৬টি, ডোমারে ১০৫টি, জলঢাকায় ১৫৮টি, কিশোরীগঞ্জে ১৩৫টি, সদরে ২৬১টি এবং সৈয়দপুরে ৭৫টি। প্রতিটি ম-পের অনুকূলে বিগত সময়ের ন্যায় সরকারিভাবে এবারও ৫০০ কেজি করে  চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সূত্রমতে এ জেলায় গত বছর (২০২৩)  ৮৮৭টি ম-পে- ২০২২ সালে ৮৮০টি ম-পে ও ২০২১ সালে ৮৬৯টি ম-পে হয়েছিল শারদীয় দুর্গোৎসব।
এদিকে পূজা শুরু হওয়ার সময় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করণে হিন্দু কমিউনিটি নেতাদের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে শনিবার দুপুরে বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামানের সভাপতিত্বে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম উপস্থিত ছিলেন। নীলফামারী আনন্দময়ী কালিবাড়ি পূজাম-পের সভাপতি অ্যাড. অক্ষয় কুমার রায় জানান, বিগত বছরের মতো এবারও শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। পূজাম-পগুলো সিসি ক্যামেরায় আওতায় রাখা হচ্ছে। 

নীলফামারীতে দুর্গাপূজা উপলক্ষে মাটির খেলনা তৈরির ধুম। সামনে দুর্গাপূজার মেলা উপলক্ষে খেলনা তৈরির ধূম পড়েছে নীলফামারীর বিভিন্ন পালপাড়ায়। ছোট ছোট খেলনা তৈরির কারিগররা এখন মাটির পুতুল, ব্যাংক, বিভিন্ন ধরনের প্রাণী, ফল, ফুলের টব, ঘুরনি, টমটম গাড়ি ও বাঁশের বাঁশি তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। 
খাগড়াছড়ি 
সারাদেশের মতো আগামী ৯ অক্টোবর থেকে খাগড়াছড়িতেও শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। খাগড়াছড়িতে ৯টি উপজেলায় এবার ৬১টি পূজা ম-পে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে খাগড়াছড়ির অধিকাংশ মন্দিরের প্রতিমার রঙের কাজ শেষ হয়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বলেছেন এবার খাগড়াছড়িতে প্রশাসন ও সকলের সহযোগিতা নিরাপদ ও সুন্দরভাবে পূজা উদযাপন করতে পারবেন তারা। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছেন প্রতিটি ম-পে পর্যাপ্ত পুলিশ থাকবে। সঙ্গে থাকবে মোবাইল টিম এবং সাদা পোশাকে থাকবে গোয়েন্দা নজরদারি।

এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর প্রতিও নজরদারি রাখা হবে। পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি এখানে নানান জাতিগোষ্ঠী নানান সম্প্রদায়ের বসবাস। তাই প্রত্যেক ধর্মের উৎসব পালন হয় একটি অন্যরকম পরিবেশে। বিশেষ করে বড় ধর্মীয় উৎসবগুলোতে মিলন মেলা হয় সকল সম্প্রদায়ের লোকের। এবারও দুর্গাপূজায় প্রচুর লোকের সমাগম হবে বলে আশা করছেন সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকেরা। পূজা আয়োজকরা বলেছেন ইতোমধ্যে তারা পূজার প্রায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। কয়েকটি প্রতিমা বাদে অধিকাংশ প্রতিমার রঙের কাজ শেষ হয়েছে। চলছে ডেকোরেশনের কাজ।

তারা প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতায় এবারও সুন্দর ও উৎসব মুখরভাবে পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসবটি পালন করতে পারবে বলে আশা করছেন। এই উৎসবে মহানন্দে শামিল হন এখানকার পাহাড়ি-বাঙালি হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ খ্রিস্টান সবাই। শহর ছাপিয়ে গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ে এই উৎসবের আড়ম্বর আমেজ। 
এদিকে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে জেলা সদরে পূজাম-পগুলোর প্রস্তুতির কাজ পরিদর্শন করেছেন খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান ও পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল। এ সময় তারা জেলা সদরে ক’টি পূজাম-পে যান এবং পূজা উদযাপন কমিটির সঙ্গে মতবিনিময়সহ পূজার সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেন ও পূজাম-প পরিদর্শন করেন। পূজাম-প পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, সুষ্ঠুভাবে পূজা আয়োজনে সব রকমের প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রস্তুতি সভা করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহকে  প্রয়োজনীয় দিকনিদের্শনা প্রদান করা হয়েছে, কাজ করছে মনিটরিং টিম। সুসম্প্রীতি বজায় রেখে পূজার সকল আনুষ্ঠানিকতা সফলভাবে সম্পন্ন হবে বলে তিনি  আশা প্রকাশ করেছেন। 
ঝালকাঠি ॥ সদর উপজেলার শেখেরহাট ইউনিয়ন পরিষদে নিরাপদ পরিবেশে আসন্ন দুর্গাপূজা উদযাপনে সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতাদের সঙ্গে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টায় ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের সহায়তায় এবং ইউকে-এর এফসিডিওর অর্থায়নে মাল্টিপার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরাম (এমএএফ) সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতাদের সঙ্গে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারহানা ইয়াসমিন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন অফিস-ইন-চার্জ, মো. শহীদুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. আনোয়ার হোসেন আনু, এমএএফ সদস্য আনিসুর রহমান তাপু, জেলা বিএনপির মহিলা দলেল সম্পাদক শাকিনা আলম লিজা, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ডেপুটি ডিরেক্টর হাফিজুর রহমান, সাংবাদিক মানিক রায় ও অলোক সাহা, ভারপ্রাপ্ত শেখেরহাট ইউপি চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ ছিলেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন এমএএফ দপ্তর সম্পাদক কেএম জুয়েল। সভায় এমএএফের পক্ষে সঞ্চালনা করেন মো. মিজানুর রহমান মুবিন।

সভায় পূজা উদযাপন কমিটির হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা ইউনিয়নভুক্ত এলাকার মসজিদের ইমাম, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও স্থানীয় সুধীজন উপস্থিত ছিলেন। ঝালকাঠি জেলার মধ্যে শেখের হাট ইউনিয়নে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের আধিক্য রয়েছে অন্যান্য জায়গার তুলনায়। এখানে ১০টি পূজাম-প হবে, তাই শেখেরহাট ইউনিয়নকে কেন্দ্র করে এই উদ্যোগ গ্রহণ করে এমএএফ ঝালকাঠি।
প্রধান অথিতির বক্তব্যে ফারহানা ইয়াসমিন, বলেন, ‘৫ আগস্টের পর আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে একটু চিন্তিত। আমরা মনে করি, এখনই দেখানোর সময় যে আমরা সাম্প্রদায়িক জাতি। আমরা যেন বর্তমান সময়কে কেন্দ্র করে আমাদের সাহায্যের হাতটি আরেকটু বেশি বাড়িয়ে দেই।’ তিনি পূজার আগে সব মন্দির ঘুরে দেখার কথাও বলেন। অফিস-ইনচার্জ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের পুলিশের দিক দিয়ে সব ধরনের সতর্কতা ও সহযোগিতা থাকবে। যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে সেই মর্মে সার্বিক সহযোগিতার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ একই সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবকদের গলায় কার্ড ঝুলানোর আহ্বান জানান শহীদুল ইসলাম।
মাদারীপুর 
৫ উপজেলায় এ বছর ৪৩২টি ম-পে চলছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি। প্রতিমা শিল্পীরা মাটির কাজ শেষ করে  এখন রং তুলির আচরে ফুটিয়ে তোলা হবে প্রতিমার অবয়ব। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে প্রতিমা দো-মাটির কাজ। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও যৌথ বাহিনীর পক্ষ থেকে পূজা নির্বিঘœ করতে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে মন্দির ও পূজাম-পগুলোতে চলছে সাজসাজ রব। এ বছর রাজৈর উপজেলায় ২৫১ পূজাম-পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়াও শিবচরে ৪৪, কালকিনিতে ২২, ডাসারে ৪৩ ও সদরে ৭২ ম-পে পূজা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

শান্তিপূর্ণভাবে পূজা সফল ও নির্বিঘেœ সম্পন্ন করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের পূজারী ও সুশীল সমাজের নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা মতবিনিময় সভার আয়োজন করে প্রশাসন। ম-পের তালিকা করে চলছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অনুদান বরাদ্দের কাজ। অধিক গুরুত্বপূর্ণ ম-পগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা এবং কম গুরুত্বপূর্ণ ম-পগুলোতে পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করবে বলে গোয়েন্দা বিভাগ থেকে জানা গেছে। এবার প্রতিটি পূজাম-পে সিসি ক্যামেরা বসানো বাধ্যতামূলক করেছে প্রশাসন। 
নওগাঁ 
এ বছর জেলায় ৭৫৮টি ম-পে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে নওগাঁ পৌরসভা এলাকায় ম-পের সংখ্যা ৫৮টি বলে জানান জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মাধব কর্মকার। এছাড়া সদর উপজেলায় পৌরসভাসহ) ১২২টি, মহাদেবপরে ১৫০টি, বদলগাছীতে ১০২টি, মান্দায় ১০৩টি, পতœীতলায় ৮২টি, নিয়ামতপুরে ৫৮টি, আত্রাইয়ে ৪৬টি, রানীনগরে ৩৪টি, ধামইরহাটে ৩০টি, সাপাহারে ১৮টি এবং পোরশায় ১৩টি ম-পে পূজার প্রস্তুতি চলছে। পূজা উৎসবকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে মন্দিরগুলোতে চলছে সাজসজ্জার প্রস্তুতি।

ইতোমধ্যে খড়, কাঠ, সুতা আর মাটি দিয়ে দুর্গাসহ নানা প্রতিমার কাঠামো তৈরি শেষে এখন চলছে প্রতিমায় রং দেওয়ার কাজ। শিল্পী নিপুণ হাতে রং তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলছেন দেবী দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিকসহ নানা প্রতিমা। পুরুষদের পাশাপাশি প্রতিমা তৈরির কাজে সহায়তা করছেন বাড়ির নারী শিল্পীরাও। তবে প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম বাড়ার কারণে বেড়েছে প্রতিমার দামও।
আগামী ৯ অক্টোবর থেকে ৫ দিনব্যাপী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় শিল্পী ছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে আগত শিল্পীরা এখানে এসে প্রতিমা তৈরি ও রং তুলির কাজ করছেন। অন্যদিকে প্রতিমার পাশাপাশি বাদ্যযন্ত্র ঠিক ও তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছে ঢাকঢোল, কাঁশি ও বাঁশির কারিগররা। নওগাঁ পুলিশ সুপার মো. কুতুব উদ্দিন জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ দৃষ্টি রাখছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তিন স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে এজন্য তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
পিরোজপুর 
আসন্ন দুর্গাপূজায় পিরোজপুরের ৭টি উপজেলায় ৪৫৮টি মন্দিরে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে। শনিবার দুপুরে শহরের বিভিন্ন পূজাম-প পরিদর্শন করেছেন পুলিশ সুপার খাঁন মুহাম্মদ আবু নাসের। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. মুকিত হাসান খাঁন, সদর থানার ওসি আব্দুস সোবাহান, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদর সাধারণ সম্পাদক দোলা গুহ। পূজাম-প পরিদর্শন শেষে পুলিশ সুপার জানান, জেলার ৭টি উপজেলায় সুষ্ঠু সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।

আমাদের জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে আমরা সতর্ক অবস্থায় আছি। ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোতে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিযুক্ত করা হয়েছে। কেউ যদি কোন নাশকতা করার চেষ্টা করে তবে আমরা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আইগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে কাউকে কোনো রকম ছাড় দেয়া হবে না। নাজিরপুর উপজেলায় ১১৯টি, সদর উপজেলায় ৬০টি, খান্ডারিয়া উপজেলায় ৬০টি, নেছারাবাদ উপজেলায় ১০১টি, মঠবাড়িয়া উপজেলায় ৭০টি, কাউখালী উপজেলায় ২৫টি এবং ইন্দুরকানী উপজেলায় ২৩টি ম-পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
ঘিওর, মানিকগঞ্জ
বর্ণাঢ্য ধর্মীয়, সামাজিক ও সাস্কৃতিক উৎসবে মেতে উঠবে সারা দেশের মতো মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে। ঘিওরে ৭৬টি মন্দিরে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। পঞ্জিকা মতে, এবার দুর্গা দেবীর দোলায় আগমন এবং দেবীর ঘোটকে গমন। শরৎকালে দেবতাদের হয়ে অসুরকে ধ্বংস করার লক্ষে পৃথিবীতে দুর্গার আগমন ঘটে। শরৎকালে  দেবীর এ পুজাকে বলা হয় অকাল বোধন। প্রতিমা কাঠামোতে খড় এবং মাটি লাগানোর কাজ শেষ। রং এবং তুলির কাজ প্রায় শেষের দিকে। প্রতিমার চোখ, হাতের আঙ্গুল, মুখমন্ডল, তৈরিসহ প্রতিটি কাজের জন্য ভিন্ন কারিগর রাতদিন নিরলশ পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

রং এবং তুলির ছোয়ায়  প্রতিমার রুপ ও সৌন্দয্য  আনার কাজ নিয়ে শিল্পীরা মহা ব্যস্ত। ষষ্ঠীতে দেবীর আমন্ত্রন ও অধিবাস,সপ্তমীতে আগমন, অষ্টমীতে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়।  নারীর মধ্যেই  দেবী দুর্গার শক্তি আছে। তাই নারীদের মায়ের দৃষ্টিকোন থেকে একজন কুমারীকে  দেবীর আসনে বসিয়ে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। অষ্টমী ও নবমী তিথির সন্ধি স্থলে সন্ধি পূজা করা হয়।  শেষে দশমী পূজা। 
ঘিওর লোকনাথ মন্দিরের মন্টু পাল তার সাগরেদদের নিয়ে প্রতিমা গড়ার কাজে ব্যস্ত। মাটির ভাস্কর্য্য তৈরিতে তারা পারদর্শী। নরম কাঁদা মাটি দিয়ে শৈল্পিক ছোঁয়ায় তিল তিল করে তুলেছেন দশভুজ্য দুর্গাদেবীর প্রতিমা। একই সঙ্গে গনেশ, কার্তিকসহ অন্যান্য প্রতিমার। মন্টু পাল দুর্গাদেবীর মুখাকৃতি রাগান্বিত করলেও, কৃতিম হাসির মাঝে তা নিখুতভাবে ফুঁটিয়ে তুলেছেন। ১০ হাতে দুর্গা ত্রিসূল দিয়ে বধ করছেন যমদুত অশুরকে।

আর ১০ হাতে দুর্গার ১০ চক্র লীলা ভঙ্গীতে নতুনন্ত আনার চেষ্টা করছেন শিল্পীরা। লীলা এবং গুনের বিষয়টি অত্যন্ত নিখঁতভাবে ধরা হয়েছে। শরৎকালে  দুর্গোৎসবে আনন্দ এখন থেকেই ভক্তরা প্রহর গুনছে  মাহেন্দ্রক্ষনের। ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের মনে সাজ সাজ রব। এ সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের ছেলে মেয়েরা মাতৃত্ব বন্দনায় অপার মহিমায়  বিভিন্ন রং এ সাঁজে। ঘিওর উপজেলা পূজা উৎযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক সুব্রত কুমার শীল গোবিন্দ্র জানান, ব্যাপক আনন্দ উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে ঘিওরে সকল সম্প্রদায়ের লোকজন একত্রিত হয়ে শারদীয় উৎসবে আনন্দ করে। পূজা উৎযাপন কমিটির উদ্যোগে একটি টিম সার্বক্ষনিক মন্দিরগুলো পরিদর্শন করবে। ইতোমধ্যে আমরা ৭টি উপজেলার মন্দিরের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করেছি। 
মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার বশির আহম্মেদ জানান, শারদীয় দুর্গোৎসবে আইন শৃঙ্খলা সুন্দর ও  স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রতিটি মন্দিরে পুলিশ, আনসার মোতায়ন করা হবে। মোবাইল টিম সার্বক্ষনিক মন্দিরগুলো পরিদর্শন করবে। ইতোমধ্যে শহরের এবং উপজেলার সব মন্দিরগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

×