নদী খননের সময় মরিচ্চাপ নদীর ওপরের বাঁকড়া সেতু ভেঙে পড়ে যায়
নদী খননের সময় মরিচ্চাপ নদীর ওপরের বাঁকড়া ব্রিজটি ভেঙে পড়ে প্রায় ২ বছর আগে। এলজিইডি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মধ্যে রশি টানাটানিতে দুই বছর পার হলেও অপসারণ বা সেখানে নতুন কোনো ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে তিনটি উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। সাতক্ষীরার মরিচ্চাপ নদী খননের সময় ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ভেঙে পড়ে বাঁকড়া ব্রিজটি।
এ ব্যাপারে এলজিইডি সাতক্ষীরার নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান বলেন, ‘সেতুটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর নির্মাণ করেছে। সেটি ভেঙে পড়ার পর অপসারণ করার কথাও তাদের। কিন্তু আজ পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর সেতু অপসারণ বা জনসাধারণের চলাচলে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ বিষয়ে জেলা সমন্বয় কমিটির সভায়ও বিষয়টি আলোচিত হলেও কোনো সুফল মেলেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্রিজটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর নির্মাণ করলেও পরবর্তীতে ওই সড়কটি এখন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন। ভেঙে পড়ার দুই বছর পরও সরকারি এ দুইটি সংস্থার সমন্বয়হীনতার কারণে ব্রিজটি অপসারণ বা চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এই ব্রিজটি নির্মাণ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। কথা ছিল সেতুর নিচ দিয়ে নদীর জোয়ার-ভাটা প্রবাহিত হবে। কিন্তু এখন সেতুর ওপর দিয়ে নদীর জোয়ার-ভাটা হচ্ছে।
পুরুষেরা হাঁটুর ওপর কাপড় কাছা মেরে কোনোরকমে ব্রিজ পার হলেও নারী, শিশু ও বয়স্করা পড়ছেন বিপাকে। এলাকার শত শত শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে দেবে যাওয়া ব্রিজটি দিয়ে। ফলে বর্ষা মৌসুমে সাধারণ মানুষ চলাচলে ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিন সাতক্ষীরা, দেবহাটা, কালীগঞ্জ, আশাশুনি, পাইকগাছাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঁচ-ছয় হাজার মানুষ এ সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত করে আসছেন। কিন্তু মাঝখানের বড় অংশ দেবে যাওয়ায় তাদের এখন ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। তবে ভারী গাড়ি চলাচল করতে পারছে না। ভারী যানবাহন যাতায়াত করতে হচ্ছে ৮-১০ কিলোমিটার ঘুরে।
আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নের বাঁকড়ায় মরিচ্চাপ নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্যরে ব্রিজটি নির্মাণ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। এরপর মরিচ্চাপ নদী খননের সময় ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ব্রিজটি ভেঙে পড়ে। এলাকাবাসী জানান, সেতু নির্মাণের আগে মরিচ্চাপ নদী আশাশুনির বুধহাটা ও শোভনালী ইউনিয়নকে বিভক্ত করে রেখেছিল। ডিঙি নৌকা দিয়ে নদী পার হয়ে মানুষ আশাশুনি সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করতেন। কোনো খেয়ানৌকা কিংবা ঘাট না থাকায় প্রচ- ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হতো।
স্থানীয়দের দাবির মুখে বুধহাটা ইউনিয়নের দক্ষিণে কুন্দুড়িয়া ও শোভনালী ইউনিয়নের উত্তরে বাঁকড়াকে সংযুক্ত করে এ ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। নদী খননের পর হঠাৎ করে ২০২২ সালের ৪ জুলাই সেতুটি মাঝ বরাবর দেবে বসে ভেঙে যায়।
বাগেরহাটে দুর্ভোগে ১৩ গ্রামের মানুষ
স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট থেকে জানান, বাগেরহাটে অন্যতম বৃহৎ বাদোখালী বিল। সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ, কাড়াপাড়া ও যাত্রাপুর ইউনিয়নের প্রায় ৭ হাজার একর জমি নিয়ে এই বাদোখালী বিল। বিলে ছোট-বড় ৩৭টি খাল আছে। রয়েছে বিলসংলগ্ন পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্লুইস গেট। ১৩টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষের জীবিকা নির্ভরশীল এ বিলের ওপর।
কিন্তু মাছ চাষের নামে অধিকাংশ খাল জবরদখল, অকেজো স্লুইস গেট এবং খাল ভরাটের ফলে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে পানি নিষ্কাশনের পথ। ফলে বর্ষা মৌসুমজুড়ে জলাবদ্ধ থাকে এ বিলসহ আশপাশের এলাকা। এতে কৃষিকাজ মারাত্মক ব্যাহত হওয়ায় হাজার হাজার চাষি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা মোল্লা মনিরুজ্জামান। এ বিলে চার একর জমিতে দুই যুগের বেশি সময় ধরে মাছ চাষ ও ঘেরের পাড়ে সবজি উৎপাদন করে ৪ জনের সংসার নির্বাহ করেন। তিন-চার বছর ধরে তার আয়ের উৎস বন্ধ হওয়ার পথে। বিলসংলগ্ন পানি উন্নয়ন বোর্ডের চারটি স্লুইস গেট অকেজো।
সরেজমিনে জানা গেছে, কাটাখাল, মুক্তারের দাঁড়া, সাচিবুন, ১ নম্বর স্লুইস গেটের খালসহ প্রায় সব খালের কিছু কিছু অংশ প্রভাবশালীরা দখল করে মাছ চাষ করছেন। অবশিষ্ট অংশে দুইপাড়ের বাসিন্দারা নেট-পাটা, বোটা ও পানির নিচে গাছের ডাল পুঁতে দিয়ে মাছ ধরার জন্য ‘কুমোড়’ করে রাখায় পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া বিলের পানি নামার জন্য বিভিন্ন খালের মুখে থাকা চারটি স্লুইস গেট নষ্ট রয়েছে। এতে ঠিকমতো পানি নামতে পারে না। ফলে জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন কৃষকরা।
শেখ হারুন অর রশীদ ও সিদ্দিক শেখ নামে অপর দুই কৃষক বলেন, বাদোখালী বিলকে কেন্দ্র করে এখন যে জলাবদ্ধতা, তা আগে ছিল না। কিন্তু খালগুলো দখল হয়ে যাওয়া এবং নাব্য হারানোয় পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয়েছে। স্লুইস গেট চারটি সচল এবং খালগুলো দখলমুক্ত করে খনন করলে এ অবস্থা থাকবে না। শুকনো মৌসুমেও চাষাবাদের জন্য পর্যাপ্ত পানি পাবেন এলাকার কৃষক। এসব সমস্যা সমাধানে তারা জেলা প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সালমা বেগম নামে এক নারীর ১৮ শতাংশ জায়গা রয়েছে এ বিলে। তিনি বলেন, সারাবছর যদি পানি জমে থাকে, তাহলে মানুষ আবাদ করবে কীভাবে আর সংসারইবা কীভাবে চলবে।
জেলায় বেশ কিছু স্লুইস গেট অচল রয়েছে স্বীকার করে বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মাদ আল বিরুনী বলেন, এগুলো সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে স্লুইস গেট সংস্কার করা হবে।
বাগেরহাটের নবাগত জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসান বলেন, নদী-খাল দখলের বিষয়ে আমরা খোঁজ নিচ্ছি। সরকারি খাল দখলদারদের বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।