ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

জরুরি ত্রাণ পাঠানোর দাবি

ফের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, শেরপুরে তিন মৃত্যু

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:০৮, ৫ অক্টোবর ২০২৪

ফের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, শেরপুরে তিন মৃত্যু

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় শনিবার জলমগ্ন হয়ে পড়ে বাড়িঘর।

ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের অনেক জেলায় ফের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। শেরপুরে বন্যায় এ পর্যন্ত তিনজন মারা গেছেন। নিখোঁজ রয়েছেন আরও তিনজন। পানিবন্দি হয়ে আছেন প্রায় এক লাখ মানুষ। কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে নদীভাঙন। এক সপ্তাহে এ এলাকায় গৃহহীন হয়েছে অন্তত ৩ শতাধিক পরিবার। বিলীন হয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র।

যশোরে জলাবদ্ধতায় কৃষি ও মৎস্যে ক্ষতি হয়েছে ১২৯ কোটি টাকা। কুষ্টিয়ায় কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। ময়মনসিংহে পানিবন্দি ৩০ হাজার পরিবারের অনেকের ঘরে পানি ওঠায় রান্নার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। অনাহারে, অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। এ অবস্থায় আটকেপড়া লোকজন দ্রুত ত্রাণ পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন। বৃষ্টিতে চাঁদপুর জেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও বাসাবাড়িতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার।
শুক্রবার রাত থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত জেলার নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলা সদরের পানি কিছুটা নেমে গেলেও নি¤œাঞ্চলের অন্তত দেড়শ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাটসহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমন আবাদ, মাছের ঘের ও সবজি আবাদ। পানিবন্দি হয়ে আছে তিন উপজেলার প্রায় এক লাখ মানুষ। এদিকে, পাহাড়ি ঢলে নালিতাবাড়ীতে এক বৃদ্ধ ও নারীর মৃত্যু হয়েছে।

নিখোঁজ হয়েছেন আরও ৩ জন। এ ছাড়া ঝিনাইগাতীতে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে উজান থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এক ব্যক্তির লাশ ভেসে এসেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। নালিতাবাড়ীতে নিহত দুইজন হলেনÑ বাঘবেড় গ্রামের মানিক মিয়ার স্ত্রী ওমিজা খাতুন (৪৫) ও আন্ধারুপাড়া গ্রামের ইদ্রিস মিয়া (৮০)। এ ছাড়া উপজেলার নন্নী অভয়পুর গ্রামের বছির উদ্দীনের দুই ছেলে আবু হাতেম (৩০) ও আলমগীর (১৭)  এবং বাতকুচি গ্রামের মৃত আব্দুল হাকিমের স্ত্রী জহুরা খাতুন (৪৫) নিখোঁজ রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
শুক্রবার বিকেলে উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নের আন্ধারুপাড়া গ্রামে ঢলের পানিতে ডুবে থাকা সড়ক পার হওয়ার সময় ডুবে যান ইদ্রিস মিয়া। পরে স্থানীয়রা খোঁজাখুঁজির পর তার লাশ উদ্ধার করে। এদিকে, ঢলের পানি থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ রয়েছেন উপজেলার বাতকুচি গ্রামের জহুরা খাতুন ও নন্নী অভয়পুর গ্রামের সহোদর দুই ভাই আবু হাতেম ও আলমগীর। নালিতাবাড়ী থানার ওসি বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, নিখোঁজ তিনজনের সন্ধান পেতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 
ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি এবং নালিতাবাড়ীর ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর অন্তত ১০ জায়গায় বাঁধ ভেঙে ও নদীর পাড় উপচে প্লাবিত হওয়া গ্রামগুলোর বিভিন্ন রাস্তাঘাট ও আবাদ তলিয়ে গেছে। জেলার অন্তত ১৮ হাজার হেক্টর জমির আমন আবাদ সম্পূর্ণ ও ১৭ হাজার হেক্টর জমির আমন আবাদ আংশিকসহ ১ হাজার হেক্টর সবজির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি কার্যালয়। এতে অন্তত ৬৫ হাজার ৪০০ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। 
নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর বাঁধ ভেঙে ও নদীর পাড় উপচে পানি যাওয়ায় রামচন্দ্রকুড়া, কাকরকান্দি, নন্নী, পোড়াগাঁও, নয়াবিল, বাঘবেড়, কলসপাড়, মরিচপুরান, যোগানিয়া, রাজনগরসহ ১০টি ইউনিয়ন ও পৌর শহরের তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে উপজেলার প্রায় ৬০০ পুকুর ও ১০ হাজার হেক্টর আমন আবাদ তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে কৃষি ও মৎস্য অফিস। এ ছাড়া শনিবার শ্রীবরদী উপজেলার পাশাপাশি অপর ২ উপজেলা শেরপুর সদর ও নকলা উপজেলার নি¤œাঞ্চলের বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদ রানা বলেন, অবিরাম বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে কয়েকটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের সরিয়ে আনা হচ্ছে। তবে আমাদের কাছে পর্যাপ্ত উদ্ধার সরঞ্জাম নেই। শনিবার সকাল থেকে সেনাবাহিনী উদ্ধারকাজে সহযোগিতা করছে। আমাদের সংগ্রহে পর্যাপ্ত শুকনা খাবার রয়েছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোকে তা সরবরাহ করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, শেরপুরে পাহাড়ি ঢলের পানিতে হাজার হাজার মানুষ আটকা পড়েছে। আটকেপড়া মানুষকে উদ্ধারে নৌকা নিয়ে আসা হচ্ছে। বন্যাকবলিত মানুষের জন্য শুকনা খাবার প্রস্তুত করা হচ্ছে। রাতের মধ্যেই সেগুলো পৌঁছে দেওয়া হবে।
কুড়িগ্রাম ॥ কুড়িগ্রামে ফের বাড়ছে নদ-নদীর পানি। গত ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় ১০০ মিলিমিটারসহ জেলায় ১৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি ধীরগতিতে বাড়লেও তিস্তার পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। ভারি বৃষ্টির কারণে কুড়িগ্রাম শহরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বর, ফায়ার সার্ভিস চত্বর, টাপু ভেলাকোপা, চর হরিকেশ, তালতলা ও রৌমারীপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী জিঞ্জিরাম নদীর পানি দুইকূল ছাপিয়ে রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার ১০টি গ্রামের নিচু এলাকার আমন ও বাদাম খেত তলিয়ে গেছে। এরমধ্যে রৌমারী উপজেলার চর লাঠিয়াল, চান্দারচর, ভন্দুরচর, বড়াইবাড়ী এবং রাজীবপুর উপজেলার বালিয়ামারি, শিবেরডাঙি ও নয়ারচর রয়েছে। 
গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তিস্তা ও ধরলার নিচু এলাকায় প্রায় ৫০০ হেক্টর জমির আমন খেত তলিয়ে থাকায় খেত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। এদিকে, পানি হ্রাস বৃদ্ধির মধ্যে থেমে নেই নদ-নদীর ভাঙন। তিস্তার ভাঙনে রাজারহাটের গতিয়াশাম, চর গতিয়াশাম ও ধরলার ভাঙনে বেগমগঞ্জ, সারডোবসহ কয়েকটি এলাকায় বেড়েছে নদীর ভাঙন। গত এক সপ্তাহে এসব এলাকায় গৃহহীন হয়েছে অন্তত ৩ শতাধিক পরিবার।

বেগমগঞ্জে ভাঙনে বিলীন হয়েছে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র। ঝুঁকিতে পড়েছে একটি হাইস্কুল। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অন্যান্য উপজেলাতেও কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে। এতে নিচু এলাকার ধান, সবজি ও বাদাম খেতের কিছু ক্ষতি হতে পারে। 
যশোর ॥ দুই দফা টানা বৃষ্টি ও নদ-নদীর পানি প্রবেশ করায় জেলার অভয়নগরে ভবদহ এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতায় কৃষি ও মৎস্য প্রায় ১২৯ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ১ হাজার ৮২৬ হেক্টর জমির ধান ও ১৪৭ হেক্টর জমির সবজি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। ভেসে গেছে ছোট-বড় ৪ হাজার ৯শ মাছের ঘের। পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও ঘের মালিকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, দুই দফা টানা বৃষ্টির কারণে অভয়নগরের ভবদহ অঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়নে ৫৩৩ হেক্টর জমির আমন ধান ও ৪৭ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়েছে। সুন্দলী ইউনিয়নে ৮৩৫ হেক্টর জমির আমন ধান ও ১৯ হেক্টর জমির সবজি পানির নিচে তলিয়ে থাকা অবস্থায় পচতে শুরু করেছে। চলিশিয়া ইউনিয়নে ৬০ হেক্টর জমির আমন ধান ও ২৮ হেক্টর সবজি খেত নষ্ট হয়ে গেছে।

পায়রা ইউনিয়নে ৮৮ হেক্টর জমির আমন ধান ও ১৫ হেক্টর জমির সবজি খেত এখনো পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা পর্যায়ে ১৪ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ও ৫ হেক্টর জমির কাঁচা মরিচ নষ্ট হয়েছে। নওয়াপাড়া পৌর এলাকার ৩১০ হেক্টর জমির আমন ধান ও ২০ হেক্টর জমির সবজি খেতের ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, জলাবদ্ধতার কারণে ভেসে যাওয়া ৪ ইউনিয়নের পুকুর, দীঘি ও খামারের সংখ্যা ১ হাজার ২৫০টি। ক্ষতিগ্রস্ত মাছের ঘেরের সংখ্যা ৩ হাজার ৬৫০টি। যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৯০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, অভয়নগরের ভবদহ অঞ্চলের ৪টি ইউনিয়ন ও নওয়াপাড়া পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতার কারণে কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

গত মৌসুমে আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলেও এবার জলাবদ্ধতার কারণে তা সম্ভব হবে না। কারণ ৭ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা আমন ধানের মধ্যে ১ হাজার ৮২৬ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হতে শুরু করেছে। 
দৌলতপুর, কুষ্টিয়া ॥ অতিবৃষ্টির কারণে ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ব্যাংগাড়ী মাঠের কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে। মরিচ, মাষকলাই ও টমেটোসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল নষ্ট হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন এলাকার কৃষক। বধ্যপানি নিষ্কাশনের জন্য কয়েক বছর আগে ড্রেনেজ ব্যবস্থা চালু করা হলেও সংস্কারের অভাবে তা এখন ভরাট হয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকলে ফসলের ক্ষতি হতো না বলে দাবি কৃষকদের। তবে, কর্তৃপক্ষ বলছে, বরাদ্দ পেলে ক্যানেল সংস্কার করা হবে।
দৌলতপুর উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের সীমান্ত সংলগ্ন ব্যাংগাড়ীর মাঠ সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের জন্য খ্যাত। এ মাঠে চলতি মৌসুমেও বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করা হয়েছে। অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় মাঠের কয়েক হাজার হেক্টর জমির এসব ফসল নষ্ট হয়ে কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। উঠতি ফসল মরিচ, মাষকলাই, টমেটো ও তুলাসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল পানিতে তলিয়ে আছে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকলে কৃষকরা তাদের মূল্যবান ফসল রক্ষা করতে পারত বলে জানিয়েছেন দৌলতপুর কৃষি কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পেলে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে ক্যানেলটি সংস্কার করার আশ^াস দিয়েছেন দৌলতপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আব্দুল হান্নান।
হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ ॥ অবিরাম বর্ষণ ও ঢলে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের প্রায় সবকটিই প্লাবিত হয়েছে। দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান, সবজি খেত ও ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। পানিবন্দি হয়ে আছে প্রায় ত্রিশ হাজার পরিবার। ঘরের মধ্যে পানি ঢোকার কারণে রান্নার কাজও ব্যাহত হচ্ছে। অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে তারা। বন্যাকবলিত মানুষেরা সেখানে দ্রুত ত্রাণ সামগ্রী পাঠানোর জোর দাবি জানান। 
শনিবার উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হালুয়াঘাট পৌর শহরের মিশন স্কুল রোড, হালুয়াঘাট-নালিতাবাড়ি সড়কের পাগলপাড়া, জয়িতা মহিলা মার্কেট, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, খাদ্য গুদাম ও থানাসহ বিভিন্ন জায়গা তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া, গাজিরভিট ইউনিয়নের গুমুরিয়া, বোরাঘাট ও দর্শা নদীর তীর ভেঙে গিয়ে আশপাশ এলাকার ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। 
এ বিষয়ে হালুয়াঘাট পৌর প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) জান্নাত বলেন, ইতোমধ্যে পৌরসভার পক্ষ থেকে দুইটি আশ্রয়ণ কেন্দ্রে খাদ্য পাঠানো হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আলাল উদ্দিন জানান, ত্রাণ হিসেবে ৫০০ জনের মধ্যে শুকনা খাবার, ১০ টন চাল ও ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। 
মাগুরা ॥ চারদিনের অবিরাম বৃষ্টিতে মাগুরা পৌর এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় জনসাধারণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পৌরসভার ড্রেনগুলো ঠিকমতো পানি নিষ্কাশন করতে না পারায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে, যাতায়াকারীদের হাঁটু পানি ভেঙে যাতায়াত করতে হচ্ছে। পৌর এলাকার কলেজপাড়া, কাউন্সিলপাড়া, হাসপাতাল, সাহাপাড়া কাউন্সিলপাড়া, ভায়না, ভিটাসাইর এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকাতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। 
চাঁদপুর ॥ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। টানা বৃষ্টিপাতে জেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও বাসাবাড়িতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। চলতি বছর ২৭ মে জেলায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ২৫৭ মিলিমিটার। শনিবার সকাল থেকে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। শহর ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ সড়কে জলাবদ্ধতা।

বিশেষ করে শহরের নাজিরপাড়া, মিশন রোড আশ্রম এলাকা, প্রফেসরপাড়া, মমিনপাড়া, গুয়াখোলা, চিত্রলেখা মোড়, পালপাড়া, আলিমপাড়া, আদালতপাড়া, রহমতপুর আবাসিক এলাকা, গাজী সড়ক, মাদ্রাসা সড়কে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এসব এলাকার বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে মুষলধারে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। থেমে থেমে সারারাত বৃষ্টি ও বজ্রপাত অব্যাহত ছিল। সন্ধ্যার পর থেকে শহরের সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল কমে যায়। অনেকেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বাসাবাড়িতে চলে যায়।
চাঁদপুর আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক শাহ্ মো. শোয়েব বলেন, শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৫০ মিলিমিটার এবং সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা হিসাবে এ বছর জেলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ২৭৭ মিলিমিটার। এর আগে ২৭ মে জেলায় ২৫৭ মিলিমিটার সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছিল।

×