ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১

সরকার পরিবর্তনের সাথে মাদক সাম্রাজ্যের নেতৃত্বে বদল!

নিজস্ব সংবাদদাতা,ফটিকছড়ি

প্রকাশিত: ১৪:০৮, ৫ অক্টোবর ২০২৪

সরকার পরিবর্তনের সাথে মাদক সাম্রাজ্যের নেতৃত্বে বদল!

ফটিকছড়ি

সরকার  পরিবর্তনের সাথে সাথে ফটিকছড়ির মাদক সম্রাজ্যের নেতৃত্বেরও পরিবর্তন  ঘটেছে। মাদক বিকিকিনির হটস্পট  হিসেবে পরিচিত উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নের হোসেন্ন্যের খীল এলাকায়  বিগত পনেরো বছরের অধিক সময় মাদক বানিজ্যের নিয়ন্ত্রন ছিল স্থানীয় যুবলীগ নেতা জাকির হোসেনের  হাতে। তবে সম্প্রতি দেশে  সরকার বদলের মাথে সাথে এসবকিছুর  নিয়ন্ত্রন চলে যায় বিএনপি নেতার  সন্তান পরিচয় দেয়া ইব্রাহিম ইবুর হাতে। 

এ নিয়ে স্থানীয়রা জানান, এখানকার যুবকদের বড় একটি অংশ  মাদক কারবারের সাথে সম্পৃক্ত। নাম প্রকাশে অনুচ্ছিক এসব ব্যক্তিরা আরো জানান, মুলত  যারা মাদক ব্যাবসায় জড়িত তারা ক্ষমতাসীন দলের   হর্তাকর্তা সেজে  মাদকের মতো অপরাধ মুলক কর্মকান্ডে জড়িত হয়ে থাকে। এতে ছায়া হিসেবে কাজ করে স্থানীয় রাজনীতির কতিপয় "বড় ভাইয়েরা।" 

দাঁতমারা ইউনিয়নের হোসেন্ন্যের খিল এলাকাটি অন্য পাঁচ -দশটি গ্রামের মতো নয়। এখানকার অধিকাং যু্বক কোন না কোন ভাবে মাদকের সাথে সম্পৃক্ত।  এখানে হাত বাড়ালেই  মিলে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন নেশা জাতীয় দ্রব্য। ফটিকছড়ি ছাড়াও আশে পাশের তিন চারটি জেলা -উপজেলা হতে প্রতিদিন  শতশত  কারবারী মাদক কিনতে আসে হোসেন্ন্যের খীলে।  চারিদিকে টিলা বেষ্টিত  হওয়ায় মাদক কারবারীরা এ স্থানটিকে নিরাপদ জোন হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। 

স্থানীয় দাঁতমারা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাথে হোসেন্ন্যের খীলের দূরত্ব  অনধিক এক  কিলোমিটার হলেও পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক। তবে মাঝে মধ্যে ঢাকঢোল পিটিয়ে  অভিযান পরিচালিত হলেও  তা নিয়ে প্রশ্ন  দেখা দিয়েছে। স্থানীয় ভূজপুর থানা ও  দাঁতমারা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের কতিপয় কর্মকর্তার সাথে মাদক কারবারিদের যোগসাজসের  কথাও শোনা যায় হরহামেশা। 

গত ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর জাকিরের নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট হঠাৎ হাওয়া হয়ে যায়। এহেন সুযোগ কাজে লাগিয়ে নয়া সিন্ডিকেট নিয়ে তৎপরতা শুরু করে দেয় বিএনপির  ইব্রাহীম ইবু। পাশাপাশি  মাদক বানিজ্যে বিগত সরকারের আমলে সুবিধা করতে না পারা এ রকম বেশ কয়েকজন ইবুর সাথে সিন্ডিকেট করে মাদক বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে এলাকাবাসীর সাথে কথা হলে তারা নাম প্রকাশ  না করার শর্তে বলেন দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সাথে মাদক কারবারীদের নেতৃত্বেও পরিবর্তন এসেছে। তারা আরো বলেন এতদিন আওয়ামীলীগ-যুবলীগ পরিচয়ে যারা মাদক কারবারে যুক্ত  ছিলেন  তারা  এখন আড়ালে গিয়ে  বিএনপি ঘরনার  ইব্রাহিম ইবুকে সামনে রেখে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া,  হোসেন্ন্যের খীল এলাকাটি ভারত  সীমান্তর্তী  অঞ্চলের সন্নিকটে হওয়ায় এখান থেকে  প্রতিনিয়ত ইয়াবাসহ মাদকের বড় বড় চালান  পাচার  করা হচ্ছে ভারতে।

একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে উত্তর ফটিকছড়ির বাগানবাজার, নলুয়াটিলা, আঁধারমানিক চা বাগান, রামগড় চা-বাগান, মোহাম্মদপুর, করলিয়া, কয়লারমুখ ও পানুয়া সীমান্ত ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামের  সোনাইপুল, মহামুনি, দারোগা পাড়া, বল্টুরাম, বৈষ্ণবপাড়া দিয়ে হোসেন্ন্যের খীলে প্রবেশ করে  মাদক। 

পাশাপাশি কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, কাপ্তাই থেকে আসা ইয়াবার চালানগুলো হোসেন্নের খিল হয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলে যায় বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

এছাড়াও , মাদক সম্রাট ইবু  হোসেন্ন্যের খীল এলাকায় সরকারী রাবার বাগানের জায়গা দখল করে গড়ে তুলেছে বিশাল মাল্টা বাগান। যেখানে দর্শনার্থীদের বেড়ানোর ফাঁকে  নির্বিগ্নে মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছে সে। এই ইবু এক সময় মাদক  বাহনের  কাজ করলেও এখন নিজেই সিন্ডিকেট প্রধান। বর্তমানে মাদক বহনে তার হয়ে  কাজ করে শতাধিক যুবক। তাদের কেউ মাসিক বেতনে, কেউবা যুক্ত কমিশন ভিত্তিতে। 

অন্যদিকে,ইবুর বিরুদ্ধে জেলার বিভিন্ন থানায় রয়েছে মাদকসহ একাধিক মামলা। বিগত কয়েক বছর পূর্বে পুলিশের হাতে সর্বশেষ আটক হলেও কিছুদিন পূর্বে জামিনে ছাড়া পায় সে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইব্রাহিম ইবু  বলেন, আওয়ামীলীগের আমলে বিভিন্ন মামলা দিয়ে আমাকে ও আমার পরিবারকে হয়রানি করা হয়েছে। মাদক কারবারের  সাথে   জড়িত নয় উল্লেখ  করে ইবু আরো বলেন, আমি সৎভাবে জীবন যাপন করি। কোন সময় মাদকের সাথে জড়িত ছিলাম না,এখনো নেই। 

এ ব্যাপারে ভূজপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আরজুন বলেন, 'মাদকের ব্যাপারে পুলিশ বরাবরের মতো জিরো টলারেন্স। কোনো অবস্থাতেই মাদক কারবারিদের ছাড় দেয়া হবেনা। হোসেন্ন্যের খিলের ব্যাপারে  আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। যারা মাদকের সাথে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

ফুয়াদ

×