ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষকের ক্ষতি ৫০ কোটি টাকা

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ফের বন্যা, জলাবদ্ধতা

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:৫৩, ৪ অক্টোবর ২০২৪; আপডেট: ২২:০২, ৪ অক্টোবর ২০২৪

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ফের বন্যা, জলাবদ্ধতা

নালিতাবাড়ীতে পাহাড়ি ঢলে হঠাৎ বন্যায় জলমগ্ন হয়ে পড়ে অনেক ঘরবাড়ি

লঘুচাপের কারণে টানা বৃষ্টিতে নদীর বাঁধ ভেঙে ও পাড় উপচে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফের রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। পানির স্রোতে ভেসে গেছে বেশ ঘর-বাড়ি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ। হাজার হাজার একর জমির উঠতি আমনের ক্ষেত বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পোল্ট্রি ফার্ম। পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও হাঁটুপানি জমেছে। মহল্লার অলিগলির রাস্তা ও বাসাবাড়িতে জলাবদ্ধতায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়রা। খবর নিজস্ব সংবাদদাতা ও সংবাদদাতার।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিন নদীর পানি বেড়ে ফসল নিমজ্জিত হওয়ায় কৃষকের ৪৯ কোটি ৯৪ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মাসকলাই চাষিরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলহানির এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয়দিনে এসব ক্ষতি হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি ঢাকার খামারবাড়িস্থ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়েও পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পানিতে নিমজ্জিত হয়ে জেলায় ১ হাজার ৯৩২ হেক্টর জমির মাসকলাই, ৯ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, ৫ হেক্টর জমির রোপা আউশ, ৪০ হেক্টর জমির বিভিন্ন সবজি ও ৩ হেক্টর জমির চিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৬ হাজার ৮১০ জন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার মাসকলাই চাষিরা। জেলায় মোট ফসলের ২.৭৪ শতাংশ ফসল দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মাসকলাইয়ে ক্ষতির আর্থিক মূল্য ধরা হয়েছে ৪৫ কোটি ৯৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। এছাড়া জেলায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজে ১ কোটি ৭৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা, সবজিতে ২ কোটি ৮ লাখ টাকা, রোপা আউশে ১০ লাখ ৮ হাজার টাকা ও চিনাতে ২ লাখ ২ হাজার ৫০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ক্ষতির পরিমাণ ৪৯ কোটি ৯৪ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ টাকা।  উৎপাদিত ফসলের সম্ভাব্য মূল্য হিসাবে আর্থিক ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে।

ঝিনাইগাতী, শেরপুর ॥ উপজেলায় অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলা পরিষদ চত্বর, সদর বাজারসহ ৪০ গ্রামের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েন  ৫ হাজার মানুষ। পাহাড়ি ঢলে মাছের খামারের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

পাউবোর শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান বলেন, ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের খৈলকুড়া, দীঘিরপাড় ও পূর্ব দীঘিরপাড়সহ নলকুড়া ইউনিয়নের শালচুড়া পলটন মোড় হতে কয়েক জায়গায় ভেঙ্গে মহারশি নদীর বাঁধের ১৫০ মিটার অংশ ভেঙে যাওয়ায় পানি প্রবলবেগে উপজেলা পরিষদ চত্বর ও ঝিনাইগাতী সদর বাজারে ঢুকে পড়ে। পানি কমে গেলে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করা হবে।

নালিতাবাড়ী, শেরপুর ॥ ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার খর¯্রােতা চেল্লাখালী নদীর পানি ২৭.২৮  সেন্টিমিটার ও ভোগাই নদীর পানি ৭.৫৬  সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার এই দুই নদীর পাড় উপচে নদীতীরবর্তী গ্রামের বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্যানুযায়ী শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড করা হয় শেরপুরে ১৭৭ মিলিমিটার এবং নালিতাবাড়ীর দুটি পয়েন্টে ২৫৫ ও ২৬০ মিলিমিটার।

নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদ রানা বলেন, হঠাৎ পাহাড়ি ঢলে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে এলাকার মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঢলের পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ জানা যাবে। আমরা বন্যার্তদের পাশে আছি। তাদের মাঝে জরুরিভিত্তিতে শুকনো খাবার বিতরণসহ উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি।

মাগুরা ॥ তিনদিনের অবিরাম বৃষ্টিতে মাগুরায় কালেক্টরেট এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি  হয়েছে। ফলে, চাকরিজীবী ও জনসাধারণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পানি নিষ্কাশনের  জন্য ড্রেনগুলো টিকমতো কাজ না করায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও হাঁটুপানি জমে রয়েছে। শহরের কলেজপাড়া, সাহাপাড়া, কাউন্সিল পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে, জেলার শ্রীপুরের খামারপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়াতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে, শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জেলার অন্যতম বৃহৎ শিক্ষাপীঠ খামারপাড়া মাধ্যমিক  বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের মাঠে থেকে পানি নিষ্কাশনের কোনো পথ না থাকায় এবং বিদ্যালয়ের মাঠ নিচু হওয়াতে বৃষ্টি হলে আশপাশের পানি এসে এই বিদ্যলয়ের মাঠে জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টিতে বিদ্যালয়ের মাঠে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকাতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছে।

হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ ॥ অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হালুয়াঘাট পৌরশহরসহ উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে উপজেলার ভুবনকুড়া, জুগলী, গাজিরভিটা, হালুয়াঘাট সদর, নড়াইল, বিলডোরা, ধারা, ধুরাইল, শাকুয়াই ইউনিয়নসহ ১২টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বন্যার পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। ফলে, শত শত পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। শতাধিক হেক্টর আমনের ক্ষেত তলিয়ে গেছে।

ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল ॥ টানা বৃষ্টিতে ভূঞাপুর পৌরসভার মহল্লাগুলোর রাস্তায় জলাবদ্ধাতায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে পৌরবাসী। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এ জলাবদ্ধতা বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। শুক্রবার পৌর শহর সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে ঘাটান্দি মহলার অধিকাংশ বাসায় পানি জমেছে। কারো কারো বাসার ঘরে হাঁটুপানি। প্রায় সব রাস্তা তলিয়ে গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলার মাঠে হাঁটুপানি জমেছে। ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা মিশ্রিত পানি দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। জনদুর্ভোগ ও ভোগান্তি নিরসনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই পৌর কর্তৃপক্ষের।

ভূঞাপুর পৌরসভার প্রকৌশলী সুকমল রায়ের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে ভূঞাপুর পৌরসভা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ফাহিমা বিনতে আখতার বলেন, কয়েকদিন আগে পৌর কর্তৃপক্ষ থেকে শহরের বিভিন্ন ড্রেন পরিষ্কার করা হয়। যেহেতু টানা বৃষ্টি, তাই জলাবদ্ধতা হয়েছে।

কেরানীগঞ্জ ॥ কলাতিয়া ইউনিয়নের নিশানবাড়ি এলাকায় শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রায় দুই বছর ধরে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতিতে নিশানবাড়ি এলাকার শতাধিক মানুষ। শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে মানুষ। কারো কারো থাকার ঘরে হাঁটুপানি, কারো চুলায় পানি, কারো টিউব-অয়েল পানির নিচে।

 

 

 

×