ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

খানাখন্দে ভরা সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল

মদনপুর ও জয়দেবপুর

প্রকাশিত: ২১:০০, ৪ অক্টোবর ২০২৪

খানাখন্দে ভরা সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল

মদনপুর-জয়দেবপুর সড়ক বেহাল। ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন

মদনপুর-জয়দেবপুর (ঢাকা বাইপাস) এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে মদনপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে নয়াপুর বাজার হয়ে রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার এলাকা সবচেয়ে বেশি গর্ত খানাখন্দ। এতে সড়কে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। একটু বৃষ্টি হলেই খানাখন্দে পানি জমে রাতেরবেলা চালক যাত্রীদের জন্য মরণফাঁদে পরিণত হয়।

প্রায় সময় বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় যানবাহন খানাখন্দে পড়ে উল্টে যাচ্ছে। এতে যাত্রীরা আহত হচ্ছেন এবং সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বড় বড় খানাখন্দের কারণে অনেক সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে পরিবহনের চালক যাত্রীরা। জরুরি ভিত্তিতে সড়কের গর্ত খানাখন্দ মেরামত করার জোর দাবি জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। শুক্রবার সকালে নয়াপুর এলাকায় গিয়ে খানাখন্দের কারণে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। টানা কয়েকদিন বৃষ্টির কারণে খানাখন্দে পানি জমে থাকায় সড়কে চলাচলরত যানবাহন ধীরগতিতে চলছে। এতে প্রায়ই সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট দুর্ঘটনা।

জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মদনপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু হয়েছে জয়দেবপুর সড়ক এশিয়ান হাইওয়ে। মহাসড়ক দিয়েই চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা থেকে পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যান, লরি, ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস, সিএনজি অটোরিক্সাসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, - মাস ধরে অসংখ্য বড় বড় গর্ত খানাখন্দের সৃষ্টি হলেও কর্তৃপক্ষ মেরামত করছে না।

নয়াপুর বাজারের ঔষধ ব্যবসায়ী মাসুদ মিয়া বলেন, মাস ধরে সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে পিচ ঢালাই, ইট-সুরকি বের হয়ে এসেছে। গর্তগুলো রাতেরবেলা মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গর্ত খানাখন্দগুলো মেরামত না করায় প্রায়ই ছোট-বড় যানবাহন উল্টে যাচ্ছে। যে কোনো সময় বড় ধরনের সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। সড়কের কাভার্ডভ্যান চালক সোহেল রানা বলেন, খানাখন্দের কারণে সড়ক দিয়ে চলাচল করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এসব গর্তে অনেক সময় গাড়ি আটকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে রাতেরবেলায় খানাখন্দগুলো বিপজ্জনক অবস্থায় থাকছে। জরুরিভিত্তিতে সড়কের খানাখন্দ গর্তগুলো মেরামত করার দাবি জানাচ্ছি। অটোরিক্সা চালক মাসুম মিয়া জানান, কয়েক মাস ধরে সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে আছে। এসব গর্তে গাড়ি পড়ে কয়েকবার দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম এবং যাত্রীরাও আহত হয়েছে। সড়কটি সংস্কারের জন্য এখনো কেউ এগিয়ে আসেনি।

মদনপুর এলাকার বাসিন্দা কাউসার বলেন, সড়কের আশপাশে স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সড়ক দিয়ে শিক্ষার্থীরাও ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন। খানাখন্দের কারণে সড়কে প্রায় সময় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে যাত্রীরা নানা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

বিষয়ে সড়ক জনপথ (সওজ) বিভাগের নারায়ণগঞ্জ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী সাহানা ফেরদৌস  সড়কের খানাখন্দের সৃষ্টি হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, রাস্তাটি আমার অধীনে না। এটি হচ্ছে ঢাকা বাইপাস প্রকল্পের অধীনে। তাদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি এবং মিটিংও করেছি। তারা বলেছে তাদের টিম সংস্কারের জন্য কাজ করছে।

রাজবাড়ীতে কিমি মহাসড়কে দুর্ভোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাজবাড়ী থেকে জানান, দৌলতদিয়া-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ৫কিলোমিটার ফোর লেন রাস্তার একপাশে অসংখ্য খানাখন্দ। অযোগ্য হয়ে পড়েছে যানবাহন চলাচল। ভারি বৃষ্টিতে দুর্ভোগের মাত্রা দ্বিগুণ হয়েছে। ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে যানজট মুক্ত রাখার জন্য মহাসড়কের ৫কিলোমিটার রাস্তার  ফোর লেন করা হয়। কিন্তু কাজের মান নিম্নমানের হওয়ার কারণে মহাসড়কের এই ৫কিলোমিটার রাস্তা অধিকাংশ সময় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। বিন্দুমাত্র কাজে আসছে না এই ফোর লেন রাস্তা। রাজবাড়ী সড়ক বিভাগ মাঝেমধ্যে জরুরিভাবে মেরামতের কাজ করে। কিন্ত কাজের মান নিম্নমানের হওয়ায় সপ্তাহ না  যেতেই পুনরায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়।

গত ঈদুল আযহার পূর্বে  দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ফোর লেনের ৫কিলোমিটার রাস্তা মেরামত করে রাজবাড়ী সড়ক বিভাগ। কিন্তু সেই সময় জরুরিভাবে কাজ করলেও রাস্তার অর্ধেক অংশ বাকি রেখে উন্নয়ন কাজ শেষ করে। এতে যানবাহন চালকদের দুর্ভোগ আরও বৃদ্ধি পায়। অটোরিক্সা চালক রেজাউল বলেন, রাস্তায় অসংখ্য খানাখন্দ থাকার কারণে ঝুঁকি নিয়ে উল্টা পথে যেতে হয়। তিনি বলেন, অসংখ্য খানাখন্দ থাকায় গাড়িগুলো অকেজো হয়ে পড়ে। মাঝেমধ্যে এই রাস্তা মেরামত করা হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কিছু দিনের মধ্যে পুরোনো রূপে ফিরে আসে। রাজবাড়ী সড়ক বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী রাজস খান বলেন, দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে মহাসড়কের ৫কিলোমিটার রাস্তার একপাশে অসংখ্য খানাখন্দের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ভারি বৃষ্টির কারণে রাস্তার একপাশে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। তবে বৃষ্টির মৌসুম শেষ হলে দ্রুত মহাসড়কের ক্ষতিগ্রস্ত এই রাস্তাটুকু মেরামত করা হবে।

বাউফল-লোহালিয়া সড়ক বেহাল

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, পটুয়াখালী থেকে জানান, বাউফল উপজেলার সঙ্গে জেলা শহরের যোগাযোগের মাধ্যম লোহালিয়া-কালাইয়া সড়কটি খানাখন্দে ভরা। ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এই সড়কের প্রায় কিলোমিটারই বেহাল। এরমধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। দ্রুত সড়ক সংস্কার করার দাবি জানিয়েছেন যাত্রী, পথচারী যানবাহন চালকরা। পথচারী স্থানীয়রা জানান, জেলা শহরে যোগাযোগের প্রধান সড়কপথ লোহালিয়া-কালাইয়া সড়ক। গলাচিপা দশমিনা থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী পণ্যবাহী পরিবহনও এই সড়কে চলাচলে করে। গুরুত্বপূর্ণ, ব্যস্ততম সড়কে প্রতিদিন হাজার হাজার পরিবহন চলাচল করে। দীর্ঘদিন মেরামত সংস্কার না হওয়ায় বাউফলের পূর্ব বাহির দাশপাড়া থেকে পূর্ব নওমালা পর্যন্ত ৮কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিং উঠে গেছে। সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ। এতে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা পটুয়াখালী জজ আদালতের আইনজীবী মোহাম্মাদ আলী বলেন, সড়কে খানাখন্দে ভরা। খুবই ভয়াবহ অবস্থা। প্রায়ই এই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। তারপরেও পেশাগত কারণে ঝুঁকি নিয়ে এই পথে চলাচল করি।

পটুয়াখালী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সায়েম আহমেদ বলেন, সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার হয় না। যার কারণে সড়কের কোনো অস্তিত্ব নেই। পুরো সড়কের কার্পেটিং উঠে গেছে। বৃষ্টি হলেই সড়ক পরিণত হয় ডোবা-নালায়।

উপজেলা এলজিইডির উপ-প্রকৌশলী আলী ইবনে আব্বাস জানান, সড়কটির বেহাল দশার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। আশা করি কম সময়ের মধ্যে সংস্কার কাজ শুরু হবে।

বাঘায় কাদা-পানিতে একাকার সড়ক

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, বাঘায় একটি গ্রামীণ সড়ক এখন দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এলাকাবাসীর কাছে। বৃহস্পতিবার উপজেলার চকরাজাপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় এমন সড়কে স্থানীয়দের চলাচলের দুর্ভোগ। স্থানীয়রা জানান, সামান্য বৃষ্টি হলেই কাদা-পানিতে একাকার হয়ে যায় সড়কটি। তখন আর চলাচলের উপায় থাকে না।

জানা গেছে, উপজেলার খায়েরহাট হালিম মাস্টারের বাড়িসংলগ্ন পদ্মা নদীর ক্যানেলের উপর খেয়াঘাট নৌকায় পার হয়ে এক কিলোমিটার কাঁচা সড়কের অবস্থান। সড়ক বেয়ে চকরাজাপুর পাকা সড়কে উঠতে হয়। এই সড়ক পার হতে গিয়ে অনেক দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। সড়কে পদ্মা সংলগ্ন মধ্যচকরাজাপুর, কালীদাসখালী, লক্ষ্মীনগর, দাদপুর, উদপুর, পলাশী ফতেপুর, নিচফতেপুর পলাশীসহ আটটি চরের ২০ হাজার মানুষ চলাচল করেন। একটু বৃষ্টি হলেই কাদায় পরিণত হয়। আটটি চরের মানুষ কয়েকবার সড়কটি পাকাকরণের জন্য বিভিন্ন স্থানে আবেদন করেও কোনো সুরাহা হয়নি।

ফলে তাদের কাদার মধ্যেই চলাচল করতে হয়। রাস্তাটি পাকাকরণের দাবি জানিয়েছেন চরবাসী। কালীদাসখালী চরের অটোচালক মোহাম্মদ আবু আলী বলেন, একটু বৃষ্টি হলে এই সড়ক দিয়ে যাওয়া যায় না। সামান্য বৃষ্টি হলে কাদায় সড়ক একাকার হওয়ায় তখন আর অটো বের করা যায় না। অটো না চালালে সংসারও চলে না। স্থানীয় কৃষক আজগর আলী শেখ বলেন, মাঠে আমার জমি আছে। এই জমির আবাদ বাড়িতে আনতে গেলে কাদার মধ্যে দিয়ে চলাচল করতে হয়।  বিষয়ে চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবলু দেওয়ান বলেন, সড়কটির বিষয়ে আমি নিজেও কয়েকবার বিভিন্নস্থানে আবেদন করেছি।

×