ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১

আমদানি নির্ভর কৃষি পণ্য দেশেই উৎপাদন 

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল

প্রকাশিত: ১৫:৫৩, ৪ অক্টোবর ২০২৪

আমদানি নির্ভর কৃষি পণ্য দেশেই উৎপাদন 

ওষুধ শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে আদার চাহিদা ব্যাপক।

উচ্চমূল্য ও ভেষজ ওষুধিগুণে ভরপুর এবং মসল্লা জাতীয় ফসল আদা। নিত্যদিন রন্ধনশালায় নানা খাবারে স্বাদ বাড়াতে আদার জুড়ি নেই। ওষুধ শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে আদার চাহিদা ব্যাপক। তাই সারাবছর বাজারে ভোক্তার কাছে আদার চাহিদা তুঙ্গে থাকায় বর্তমানে বাজারে আদার মূল্য আকাশ ছোঁয়া।

বাজারে আদার চাহিদা বেশি থাকায় চাহিদা পূরণে দেশের বাহির থেকে আদা আমদানি করতে হচ্ছে। এতে মোটা অংকের টাকা চলে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতে আমদানি নির্ভরতা কমাতে জমিতে কৃষক কম খরচে ভালো ফলনে অধিক লাভের আশায় পতিত, অনাবাদি জমিতে বস্তায় আদা চাষে ঝুঁকছেন। যাদের জমি নেই তারা বাড়ির আশেপাশে, আঙিনায়, গাছতলায় বস্তায় আদা চাষ করে বাড়তি আয় করতে পারেন। এ সফলতার পথ দেখাচ্ছেন কৃষি বিভাগ।

এই সর্বপ্রথম বরিশালের গৌরনদী উপজেলার আধুনা গ্রামে বনজ গাছের নিচে পরিত্যক্ত জমিতে বস্তা পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে আদা চাষ শুরু করা হয়েছে।

ওই গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা মোঃ আল মাসুদের মেহগনি গাছের নিচে ১৫ হাজার বস্তায় উকি দিচ্ছে তরতাজা আদা গাছ। এসব আদাগাছ পরিচর্যায় রয়েছেন দুইজন নারী ও একজন পুরুষ শ্রমিক। প্রতিটি গাছের গোড়ায় দেখা যাচ্ছে আদা। বস্তা পদ্ধতিতে আদাচাষ এলাকায় নতুন হলেও কৃষি বিভাগের সঠিক পরামর্শে বর্ষার কাদা-পানির মধ্যে বস্তার মধ্যে বেড়ে উঠছে আদাগাছ।

স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মাটিতে আদা চাষ করলে মাটির আদ্রতা রক্ষা করা যায়না। পাশাপাশি ঘাসের যন্ত্রণায় মাটি শক্ত হয়ে যায়। ফলে আদার বিস্তারে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে ফলন কমে যায়। আর বর্ষাকালে মাটিতে পানি জমে আদা পঁচে যায়। কিন্তু বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ করলে এ ধরনের কোনো ঝুকি থাকে না। বস্তায় মাটি নরম থাকে ঘাস কম হয়। অন্যদিকে বস্তায় ছিদ্র থাকায় বর্ষাকালে পানি জমেনা। ফলে জমিতে চাষাবাদের চেয়ে বস্তায় আদার ফলন অনেক বেশি হয়।

আধুনা গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা আল মাসুদ জানিয়েছেন, আমদানী নির্ভর যেসব কৃষি পণ্য রয়েছে সেই পণ্যগুলো যাতে দেশেই উৎপাদন করা যায়, এই আগ্রহটা আমার সব সময় ছিলো। বিশেষ করে প্রতিবছর আদা আমদানী করে দেশের প্রচুর পরিমাণ বৈদাশিক মুদ্রা খরচ হয় এবং দামও অনেক বেশি। তাই দেশের প্রচুর পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা যাতে খরচ কম হয়, সেইলক্ষ্যে বস্তায় আদা চাষ শুরু করা হয়েছে। 

তিনি আরও জানান, বর্ষায় আদা চাষ করলে অনেক ক্ষতি হয়। যেকারনে কৃষকরা আদা চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কিন্তু বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত। কারণ অতি বৃষ্টি, খড়াসহ যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুরু হলে বস্তা দ্রæত অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া যায়। ফলে আদা গাছ সুরক্ষিত থাকে। 

চলতি বছর ১৫ হাজার বস্তায় প্রাথমিকভাবে আদাচাষের কথা জানিয়ে উদ্যোক্তা আল মাসুদ বলেন, প্রতি বস্তায় ৬০ থেকে ৭০ টাকা করে খরচ হয়েছে। একেকটি বস্তায় আধা কেজি করে আদার ফলন হলেও খরচ বাদ দিয়ে বেশ লাভবান হওয়া যাবে।

স্থানীয় বাসিন্দা রাহাত হাওলাদার বলেন, বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে। তাই প্রতিদিনই এখানে এসে চাষাবাদ পদ্ধতি শিখছি। আগামীতে আমি নিজেও পরিত্যক্ত জমিতে আদা চাষ করবো। গৌরনদী উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান জানান, আগে দেশে প্রচুর পরিমানে আদা চাষ হতো। বেশ কয়েক বছর ধরে জলবায়ু পরিবর্তনে জমিতে আদা চাষ করতে গিয়ে পচনসহ নানারোগে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষককে লোকসান গুনতে হয়েছে। 

ফলে অনেক কৃষক আদা চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, বস্তা পদ্ধতিতে আদাচাষে আলাদা করে জমির প্রয়োজন হয়না। গাছের নিচে বস্তা কিংবা নেট পদ্ধতিতে চাষ করা যায়। চলতি বছর একজন কৃষি উদ্যোক্তা পরীক্ষামূলক ভাবে আদা চাষ করেছেন। প্রতিনিয়ত তার আদা বাগানে গিয়ে চাষীকে পরামর্শ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

মনিরুজ্জামান আরও জানান, চারিদিকে গাছের ছাঁয়ায় বস্তায় আদা চাষ সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এতে অন্য কৃষকরাও বস্তায় আদা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবেন। বস্তায় আদা চাষ একটি আধুনিক পদ্ধতি। যা ফল বাগানে, পতিত জমিতে, বসতবাড়ির আনাচে কানাচে, এমন কি বাড়ির ছাদে চাষ করা যায়। প্রচলিত চাষাবাদের চেয়ে এ পদ্ধতিতে ফলনও বেশি হয়। নয় থেকে দশ মাসের মধ্যে পরিপক্ক আদা উত্তোলন করা সম্ভব। এতে খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বস্তায় চার থেকে ৪৫০ টাকা নিট লাভ হয়। 

বস্তায় আদা চাষে একদিকে কৃষকরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি দেশের বাজারে আদার ঘাটতি পূরণ হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
 

 এসআর

×