ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৭ আশ্বিন ১৪৩১

গাইনি চিকিৎসক না হয়েও অপারেশন, প্রসূতির মৃত্যু

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ২ অক্টোবর ২০২৪

গাইনি চিকিৎসক না হয়েও অপারেশন, প্রসূতির মৃত্যু

 টাওয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার

গাইনি চিকিৎসক না হয়েও সারোয়ার জাহান নামে এক চিকিৎসক প্রসূতির অপারেশন করায় তার মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় বুধবার বিকেলে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলার চান্দিনা উপজেলার নোয়াবপুর টাওয়ার হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। রাবেয়া আক্তার নামে ওই প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়েছেন ডাক্তার সারোয়ার জাহান। 

জানা গেছে জেলার চান্দিনা  উপজেলার দোল্লাই নবাবপুর বাজারে ‘টাওয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মঙ্গলবার রাতে  রাবেয়া আক্তার নামে এক প্রসূতি নারীর সিজারিয়ান ডেলিভারি করার ৩০ মিনিট ওই প্রসূতির মৃত্যু ঘটে। নিহত রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে রেখেই আত্মগোপান করেন ওই চিকিৎসক সারোয়ার জাহান। ঘটনাটি জানাজানি হলে মুহূর্তের মধ্যেই পুরো হাসপাতাল এলাকাজুড়ে বিক্ষুব্ধ জনতার ভিড় জমে।

নিহত প্রসূতি রাবেয়া আক্তার (৩৪) চান্দিনা উপজেলার গল্লাই ইউনিয়নের পাঁচধারা গ্রামের আশিকুর রহমান আশুর স্ত্রী। এটা তার তৃতীয় সন্তান প্রসব। ১৫ বছর বয়সী বড় কন্যা সন্তান মাকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছে। 

নিহত প্রসূতি রাবেয়া আক্তার এর স্বামী আশিকুর রহমান আশু সাংবাদিকদের জানান, আমরা স্ত্রীর প্রসব ব্যথা হলে মঙ্গলবার রাতে ওই হাসাপাতালে আনি। আমার স্ত্রীর সিজারিয়ান ডেলিভারি করে ডাক্তার সারোয়ার জাহান। কিছুক্ষণ পর আমাকে জানান, আমার স্ত্রীর আরও ওষুধ লাগবে, রক্ত লাগবে। পাঁচ মিনিট পর বলেন, তারাতারি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসেন অন্য জায়গায় পাঠাতে হবে। আমার স্ত্রী কি সমস্যা হয়েছে জানতে আমরা ওটি রুমে প্রবেশ করতে গেলে তারা আমাদের কাউকে ওটি রুমে প্রবেশ করেতে দেয়নি। পরে  আমরা জোর করে ওটি রুমে প্রবেশ করে দেখি আমার স্ত্রীর মুখ ঢেকে রেখেছে তারা। এ সময় ডাক্তারও ছিল না। পরে জানতে পারি ওই ডাক্তার নাকি গাইনি ডাক্তার না। 

বুধবার সাংবাদিকরা ওই হাসপাতালে গিয়ে ৬ জন পরিচালকসহ ডাক্তার সারোয়ার জাহানকেও পায়নি। এ ঘটনার পর ডা. মো. সারোয়ার জাহান আত্মগোপন করার পাশাপাশি মোবাইল ফোন বন্ধ রাখায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায় ৬ জন পরিচালকেরও।

নবাবপুর টাওয়ার হাসপাতাল প্রাইভেট লি. এর সহকারী পরিচালক মো. সোহাগ সাংবাদিকদের জানান, প্রসূতি মারা গেলেও বাচ্চা সুস্থ আছে। বাচ্চাটি পাশর্^বর্তী মেডিনোভা হাসপাতালে ভর্তি আছে। এটি একটি দুর্ঘটনা। এ ঘটনার পর আমরা নিহতের পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করেছি। ডাক্তার প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি আর কিছু বলতে রাজি হননি।

বুধবার রাতে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুর রহমান জানান,ঘটনাটি তদন্তের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি বিভাগের প্রধান ডাক্তার আসমা বেগমকে আহ্বায়ক করে বুধবার ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭-কার্য দিবসের মধ্যে তাদেরকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান হাসপাতালটির লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ। তারা পুনরায় আবেদন করেছে।  
 

শহিদ

×