ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৭ আশ্বিন ১৪৩১

গতিপথ পরিবর্তন, হুমকিতে পরিবেশ

ডাহুক নদে পাথর তোলার মচ্ছব 

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড়

প্রকাশিত: ২১:৪০, ২ অক্টোবর ২০২৪

ডাহুক নদে পাথর তোলার মচ্ছব 

তেঁতুলিয়ার ডাহুক নদে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের মহোৎসব চলছে

তেঁতুলিয়া উপজেলার ডাহুক নদে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের মচ্ছব শুরু হয়েছে। সরকারি জমিতে এসব পাথর উত্তোলন করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগের কয়েক নেতা। শেখ কামালসহ ওই নেতাদের বিরুদ্ধে ডাহুক নদের আশপাশে থাকা ব্যক্তি মালিকানার জমিতেও জোর করে সন্ত্রাসী কায়দায় পাথর উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। পাথর উত্তোলনের ফলে ডাহুক নদ বিলুপ্ত হওয়ার হুমকিতে পড়েছে।

অন্যদিকে এলাকায় বিরাজ করছে থমথমে পরিবেশ। ভারতে উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশে ১৪ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে আবার ভারতে প্রবেশ করে করোতোয়া নদীর সাথে মিলিতি হয়েছে তেঁতুলিয়ার ডাহুক নদ। প্রবাহমান এই নদের নিচে রয়েছে হাজার কোটি টাকার সম্পদ পাথর। দীর্ঘকাল থেকে পানির নিচে ডুবে পাথর উত্তোলন করে কর্মসংস্থান করছেন হাজার হাজার পাথর শ্রমিক। এই নদের উত্তরাংশে হারাদিঘি বালাবাড়ি এলাকায় ডাহুকের খাস জমি এবং নিরীহ মালিকদের জমি জবর দখল করে পাথর উত্তোলন করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধক্ষ্য এবং বর্তমান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শেখ কামাল।

গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচনও করেন তিনি। সরকারি নিষেধাজ্ঞা সত্বেও আওয়ামী সরকারের প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ১৫ বছর ধরে প্রভাব খাটিয়ে পাথর উত্তোলন করলেও শেষের দিকে এই এলাকায় পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবার পর স্থানীয় জমির মালিক ও পাথর ব্যবসায়ীরা পাথর উত্তোলন শুরু করলে শেখ কামাল আবারও দখল করে নেয় ওই পাথর কোয়ারী।

অভিযোগ উঠেছে শুধু নদীতেই নয় আশপাশের নিরীহ মানুষের জমি দখল করে পুরনো কায়দায় আবার পাথর উত্তোলন শুরু করেছেন ওই নেতা। ভূমিহীনদের পত্তনকৃত সম্পত্তিতেও আইন অমান্য করে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার পাথর আরোহণ করা হলেও বিশাল অঙ্কের রাজস্বও হারাচ্ছে সরকার। অন্যদিকে প্রবহমান ডাহুক নদও বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয়রা বলছেন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রতাপশালী এই নেতা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে ডাহুক নদে পাথর উত্তোলন করেছেন। শুধু নদীতেই নয় সাধারণ নিরীহ মানুষের জমি জোর করে দখল করে পাথর উত্তোলন করেছেন। নদটি এখন হুমকির মুখে পড়েছে। অন্যদিকে সময় বদলালেও এখনো তার দাপটে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার দাবি জানিয়েছেন তারা।

লালগজ ও হারাদীঘি গ্রামের আব্দুর রহিম ও আব্দুর রহমান জানান, ২০০৩ ও ০৪ সালে ডাহুক নদের পাড়ে সরকার তাদের  প্রায় তিন একর  খাস জমি কৃষি আবাদ করার জন্য ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেয়। সেই জমিতে তারা কৃষি করতে পারছেন না। আওয়ামী ওই নেতা এই জমিতে জোর করে পাথর উত্তোলন করছে। বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো লাভ হচ্ছে না। হারাদী ঘী গ্রামের খোরশেদ আলম জানান, ১৭ বছর থেকে আমরা কেউ কিছু বলতে পারিনি। এদের  তা-বে অনেক মানুষ নিঃস্ব হয়েছে। বিএনপির কিছু নেতার ছত্রছায়ায় আবারও তারা তা-ব শুরু করেছে। আমরা সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের বিচার চাই। 
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ কামাল বলেন নিজের জমিতেই পাথর উত্তোলন করছেন তিনি। রহমান ও রহিমের জমি পাথর উত্তোলনের জন্য ডিড করে নেওয়া আছে। ডাহুক নদে পাথর উত্তোলন করছেন না তিনি।  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি বলেছেন ডাহুক নদের ওই এলাকায় সরকারি জমি এবং নদের গতিপথ আটকে পাথর উত্তোলন বন্ধের জন্য আমরা আপাতত মাইকিংসহ নানা রকম উদ্যোগ নিয়েছি। তার পরেও বন্ধ না করলে আমরা আইন প্রয়োগ করব।

×