ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১৭ আশ্বিন ১৪৩১

ভিড় জমাচ্ছেন ভক্তরা

খুলনায় এক মন্দিরে ১৪৭ প্রতিমা

প্রবীর বিশ্বাস, খুলনা অফিস

প্রকাশিত: ২৩:৪৭, ১ অক্টোবর ২০২৪

খুলনায় এক মন্দিরে ১৪৭ প্রতিমা

ডুমুরিয়ার মিকসিমিল বাজার সংলগ্ন খরসংঘ কালার বটতলা সার্বজনীন দুর্গামন্দির

দেবীদুর্গার ১০টি রূপ একই জায়গায় দেখা মিলবে। সঙ্গে রয়েছে ভগবান বিষ্ণুর ১০ অবতারের বর্ণনা; দাতাকর্ণের নিজ পুত্রকে বলিদান; দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ ও রামচন্দ্রের তারকা বধ। এ ছাড়া আছে রাধাকৃষ্ণের ঝুলনযাত্রা, শিব-পার্বতীর অগ্নিসাক্ষীসহ অনেক কিছু। প্রতিমার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রামায়ণ, মহাভারত, গীতা ও পুরাণসহ বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের পৌরাণিক এসব কাহিনী। মূলদুর্গা প্রতিমার সঙ্গে এমন ১৪৭টি মূর্তি করা হয়েছে মন্দিরের ১৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে।

এ সব মিলবে খুলনার ডুমুরিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি মন্দিরে। আয়োজকরা জানিয়েছেন এসব প্রতিমা পূজারী ও দর্শনার্থীদের ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে অনেক কিছু শিক্ষা দেবে। পূজার বেশ কয়েক দিন বাকি থাকলেও এখনই প্রতিদিন দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন এসব দেবদেবী দেখার জন্য।
খুলনা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ডুমুরিয়ার শাহাপুর বাজার অতিক্রম করে মিকসিমিল বাজার সংলগ্ন খরসংঘ কালার বটতলা সার্বজনীন দুর্গামন্দির। সরেজমিনে প্যা-েলের মধ্যে প্রবেশ করতেই দেখা মিলল সারিবদ্ধভাবে দেবদেবীর বিভিন্ন মূর্তি। যেখানে দেবী দুর্গার ১০ রূপের বর্ণনা রয়েছে। আছে কালী, ঊর্ধ্বতারা, ত্রিপুরা, ভূবনস্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, ধোমাবতী, বগলামুখী, মাতঙ্গী ও কমলা দেবী।

এরপর অগ্রসর হলেই চোখে পড়বে শিব-পার্বতীর শুভ পরিণয়ের অগ্নিসাক্ষীর দৃশ্য, হনুমান কর্তৃক জয়মনিকালী উদ্ধার ও ধ্রুবের হরিদর্শন। পাশেই রামায়ণ অবলম্বনে অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে শ্রী রামচন্দ্রে সেই ঐতিহাসিক রাক্ষসী তারকা বধের দৃশ্য। আছে বিশ্বের স্মরণ শয্যাও।
এ ছাড়া রয়েছে পুরাণে বর্ণিত সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলিযুগে ভগবান বিষ্ণুর মৎস্য, কুর্মা, বরাহ, নরসিংহ, বামন, পরশুরাম, রাম, বলরাম, কৃষ্ণ ও কল্কি অবিহিত দশাবতারের কাহিনী। শিল্পীর রং তুলির ছোঁয়ায় ফুটে উঠছে প্রতিমাগুলো। অসমাপ্ত হলেও এসব দেবদেবী দেখতে এখনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন মন্দির অঙ্গনে। যেখানে দেখা মিলবে অবতার শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর ও তার স্ত্রী শান্তি দেবীকে। আর গীতার রাধাকৃষ্ণে ঝুলনযাত্রা যা শিশুদের আকর্ষণ করছে। রয়েছে মহাকাব্য মহাভারত গ্রন্থে উল্লেখিত রাজা হরিশচন্দ্রের নিজ পুত্রের চ-ালকার্য সম্পাদনের গল্প।

আর দনবীর দাতাকর্ণ ও তার স্ত্রী পদ্মাবতী অন্যকে খুশি করতে নিজ পুত্রকে বলিদান এখন লোক হিতৈষীতে মানব সমাজকে আকৃষ্ট করে। এ ছাড়া পঞ্চ পা-ব কর্তৃক দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণের কাহিনী এখনো সনাতন ধর্মালম্বীদের শিউরে তোলে। মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ সরকার বলেন, এবার আমাদের মন্দিরের ১৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দিনটিকে স্মরণ রাখতে ১৪৭টি প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। চারজন ভাস্কর গত তিনমাস ধরে এই প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের কাহিনী অবলম্বনে তৈরি করা হয়েছে এসব প্রতিমা; যা দেখতে এখনই দর্শনার্থীরা ভিড় করেছেন।
আর সভাপতি গৌতম সরকার বলেন, এখানে যে সকল দর্শনার্থী কিংবা পুণ্যার্থী আসবেন তারা মূল দুর্গা প্রতিমার সঙ্গে হিন্দু ধর্মের নানা কাহিনী সম্পর্কে জানতে পারবেন। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা তাদের অনেক পাঠ্যপুস্তকের আলোকে ধারণা পাবে।

সিরাজগঞ্জে ব্যস্ত কারিগররা
স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ থেকে জানান, শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি চলছে সিরাজগঞ্জের ম-পে ম-পে। প্রতিমা তৈরিতে কারিগরদের ব্যস্ততা জানিয়ে দিচ্ছে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা।  সেই সঙ্গে ব্যস্ত সময় পার করছেন সিরাজগঞ্জে ভদ্রঘাট পালপাড়ার প্রতিমা তৈরির কারিগররা। তাদের নিপুণ হাতে ফুটে উঠছে দেবী দুর্গার রূপ। সময় অল্প থাকায় প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করতে দিনরাত এক করছেন তারা।

একমাটি ও দো-মাটির কাজ শেষে ধীরে ধীরে আকার পাচ্ছেন দেবী দুর্গা, কার্তিক, গনেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতীসহ অন্যান্য প্রতিমা। বর্তমানে কাদা মাটির কাজ শেষের দিকে, এরপর শুরু হবে রং ও তুলির কাজ। প্রতিটি প্রতিমা তৈরিতে আকারভেদে শিল্পীরা মজুরি নিচ্ছেন ২৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে বর্তমান বাজার দরের সঙ্গে মজুরি কমে যাওয়ায় হতাশ কারিগররা। প্রতিমা কারিগর পলান ও শ্রীকান্ত জানান, প্রতিমা তৈরির ধুম পড়েছে। প্রতিটি বাড়িতেই তৈরি করা হচ্ছে একাধিক দুর্গা প্রতিমা।

কারিগররা রাতদিন প্রায় ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করছে অর্ডার নেওয়া প্রতিমা তৈরি শেষ করতে। এখানে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সমানভাবে কাজ করছে। দেবী মাকে সাজাতে শত ব্যস্ততায়ও যতœসহকারে কাজ করা হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্রী সন্তোষ কুমার কানু  জানান, ধর্ম যার যার উৎসব সবার এই স্লোগানকে সামনে রেখে এবারও সিরাজগঞ্জ জেলায় ৪৯৯টি ম-পে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন প্রতিটি ম-পেই চলছে সাজসজ্জার কাজ। 

বাকেরগঞ্জ 
নিজস্ব সংবাদদাতা বাকেরগঞ্জ বরিশাল থেকে জানান, বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় পরম যতেœ প্রতিমা তৈরি করছেন মৃৎশিল্পের কারিগররা। উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় ৭৫ পূজা ম-পে দুর্গা পূজা উদযাপন হবে। চলছে শেষ মুহূর্তের ঘষামাজা। রং-তুলির আঁচড়ে রাঙিয়ে তোলা হবে দেবী দুর্গাসহ অন্যান্য দেবতাদের প্রতিমা। 
পূজার সময় ঘনিয়ে আসায় ব্যস্ততাও বেড়েছে শিল্পীদের। রাত-দিন কাজ করে গড়ে তুলছেন দেবী দুর্গাসহ দেবতাদের প্রতিমা। তাদের সুনিপুণ কারুকাজে যেন প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে প্রতিমাগুলো। বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, আসন্ন দুর্গা পূজা উদযাপন উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে কাজ করবে।
আগৈলঝাড়া
স্টাফ রিপোর্টার বরিশাল থেকে জানান, অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও বরিশাল বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পূজাম-প আগৈলঝাড়া উপজেলার ১৬২টি ম-পে শেষ সময়ে চলছে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন। সরকারি হিসাব মতে, এ বছর উপজেলায় মোট ১৬২টি ম-পে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। বাকি ছয়টি ম-পে পরে বাসন্তি পূজা এবং তিনটি ম-পে জগদ্ধাত্রী পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার (পিআইও) মোশারফ হোসেন জানান, প্রতি পূজাম-পের জন্য সরকার পাঁচশ’ কেজি করে চাল সহায়তা বরাদ্দ প্রদান করেছে। ইতোমধ্যে বরাদ্দকৃত চাল পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বরাদ্দকৃত চাল ম-পের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের অনুকূলে ডিও লেটার প্রদান করা হবে।

মঙ্গলবার দুপুরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিমা নির্মাণের কাজ শেষ করেছেন মৃৎশিল্পীরা। উপজেলার শিহিপাশা গ্রামের পাল পাড়ার বাসিন্দা শিব শংকর পাল, সুদেব পাল, জয়দেব পাল, সঞ্জয় পালসহ অন্যান্য মৃৎ শিল্পী জানিয়েছেন, অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও প্রতিমার আকার ও আয়তন ঠিক রেখেই প্রতিমা নির্মাণের কাজ শেষ করা হয়েছে।

×