ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১

জৌলুস হারাচ্ছে শত বছরের নৌকার হাট

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ২১:৫৮, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

জৌলুস হারাচ্ছে শত বছরের নৌকার হাট

লঞ্চঘাট সংলগ্ন বিআইডব্লিউটিএর ভবনের সামনে নৌকা বিক্রির হাট

সাগরপারের কলাপাড়া পৌরশহরের শত বছরের পুরনো নৌকার হাটের পরিধি ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবারে শহরের লঞ্চঘাট সংলগ্ন বিআইডব্লিউটিএর ভবনের সামনে বসে নৌকা বিক্রির হাট। এক সময় প্রতি হাটবারে শত শত নৌকা বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ২০-২২টি। নৌকা বেচা-কেনার এ হাটটি এখন বন্ধের শঙ্কায় রয়েছেন নৌকা বিক্রেতারা। নৌকা বাড়িতে বসে তৈরি করে এই হাটে নিয়ে বিক্রি করছেন অন্তত ২০টি পরিবার। একসময় এতদাঞ্চলের মানুষ পারিবারিক কাজে নদী-খাল পথে যোগাযোগের জন্য নৌকা কিনত। ব্যবহার করত।

এখন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে নৌকার ব্যবহার নেই বললেই চলে। তবে শুধু মাছ ধরার কাজে ব্যবহৃত হয় এসব নৌকা। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া ছাড়াও এই হাটে তালতলী, আমতলী, রাঙ্গাবালী উপজেলার মানুষ নৌকা কিনতে আসেন বলে স্থানীয়সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এখন সর্বোচ্চ ২০ ফুট দীর্ঘ পাঁচ ফুট প্রস্থ নৌকা বেশি কেনা-বেচা হয়ে আসছে। হাটবার ছাড়াও দু’একটি নৌকা বিক্রি হয় কখনো কখনো। তবে বর্ষাকালে নৌকার বিক্রি বাড়ে।
সাধারণত চাম্বল,  মেহগনি,  রেইনট্রি, বাইন জাতীয় দেশী গাছের কাঠ দিয়ে এ  নৌকা তৈরি করা হয়। কাঠের মানের ওপর  নৌকার দাম কম-বেশি হয়। কলাপাড়ায় বিক্রি করতে নেওয়া নৌকা অধিকাংশ তৈরি হয় বরগুনা জেলার আমতলীর চুনাখালী গ্রামে। অন্তত ৩৫-৪০ কিলোমিটার দূর থেকে এসব নৌকা ভ্যানে কিংবা টমটমযোগে কলাপাড়া নেওয়া হয়।
বিক্রেতা রাজিব হাওলাদার জানান, নৌকা তৈরি করছেন তারা বাপ-দাদার আমল থেকে। এটি তাদের পেশা। অন্তত শত বছর ধরে তারা বংশপরম্পরায় এই পেশা ধরে রেখেছেন। জানালেন রাজিব, সপ্তাহে সর্বোচ্চ পাঁচটি নৌকা বিক্রি হয়। একেকটি ছয় থেকে আট হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারেন। ১০-১২ বছর আগে নৌকার চাহিদা যা ছিল তাতে সপ্তাহে ১২-১৩টি নৌকা বিক্রি করতে পারতেন। এখন নৌকার চাহিদা কমে গেছে বলে জানালেন এ বিক্রেতা। স্থানীয় বাজারে কাঠ কিনে মিস্ত্রি লাগিয়ে নৌকা করেন।

আবার অনেক ক্রেতা ভালোমানের নৌকা তৈরির জন্য বেশি টাকা দিয়ে থাকেন। এই নৌকা তৈরি ও বিক্রির ওপরই রাজিবের পাঁচ জনের সংসার চলছে। বিক্রেতা জাহিদও জানালেন একই তথ্য। একটি নৌকা তৈরিতে গড়ে দেড়দিন লাগে। আর মজুরি দিতে হয় অন্তত এক-দেড় হাজার টাকা। বর্তমানে যে নৌকা বিক্রি চলে তাকে স্থানীয়রা ডিঙি নৌকা বলেন। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ব্রিজ, কালভার্ট হওয়ায় মানুষ এখন সড়কপথে যোগাযোগ করছেন।

ফলে নৌকার প্রয়োজন আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এই হাটের খাজনা আদায়কারীর দেওয়া তথ্যে জানা গেল, প্রতি সাত দিনে সর্বোচ্চ ৫০টি নৌকা বিক্রি হয়। বছরে পাঁচশ’র মতো। তবে এখন নৌকার কদর অনেক কমে গেছে বলে নিশ্চিত করলেন নিতাই সরকার।

×