ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১

ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে শত বছরের পুরনো নৌকার হাট

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১৬:০৮, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে শত বছরের পুরনো নৌকার হাট

নৌকার হাট। ছবি: জনকণ্ঠ

সাগরপারের কলাপাড়া পৌরশহরের শত বছরের পুরনো নৌকার হাটের পরিধি ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবারে শহরের লঞ্চঘাট সংলগ্ন বিআই ডবি্লউটিএর ভবনের সামনে বসে নৌকা বিক্রির হাট। একসময় প্রতি হাটবারে শত শত নৌকা বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ২০-২২টি। 

নৌকা বেচা-কেনার এ হাটটি এখন বন্ধের শঙ্কায় রয়েছেন নৌকা বিক্রেতারা। নৌকা বাড়িতে বসে তৈরি করে এই হাটে নিয়ে বিক্রি করছেন অন্তত ২০টি পরিবার। এক সময় এতদাঞ্চলের মানুষ পারিবারিক কাজে নদী-খাল পথে যোগাযোগের জন্য নৌকা কিনত। ব্যবহার করত। এখন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে নৌকার ব্যবহার নেই বললেই চলে। তবে শুধুমাত্র মাছ ধরার কাজে ব্যবহৃত হয় এসব নৌকা। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া ছাড়াও এই হাটে তালতলী, আমতলী, রাঙ্গাবালী উপজেলার মানুষ নৌকা কিনতে আসেন বলে স্থানীয়সুত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এখন সর্বোচ্চ ২০ ফুট দীর্ঘ পাঁচ ফুট প্রস্থ নৌকা বেশি কেনা-বেচা হয়ে আসছে। হাটবার ছাড়াও দুএকটি নৌকা বিক্রি হয় কখনও কখনও। তবে বর্ষকালে নৌকার বিক্রি বাড়ে।

সাধারণত চাম্বল, মেহগনি, রেইনট্রি, বাইন জাতীয় দেশি গাছের কাঠ দিয়ে এ নৌকা তৈরি করা হয়। কাঠের মানের উপর নৌকার দাম কম বেশি হয়। কলাপাড়ায় বিক্রি করতে নেয়া নৌকা অধিকাংশ তৈরি হয় বরগুনা জেলার আমতলীর চুনাখালী গ্রামে। অন্তত ৩৫-৪০ কিলোমিটার দুর থেকে এসব নৌকা ভ্যানে কিংবা টমটমযোগে কলাপাড়া নেয়া হয়।

বিক্রেতা রাজিব হাওলাদার জানান, নৌকা তৈরি করছেন তারা বাপ-দাদার আমল থেকে। এটি তাদের পেশা। অন্তত শত বছর ধরে তারা বংশপরম্পরায় এই পেশা ধরে রেখেছেন। জানালেন রাজিব, সপ্তাহে সর্বোচ্চ পাঁচটি নৌকা বিক্রি হয়। একেকটি ছয় থেকে আট হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারেন। ১০-১২ বছর আগে নৌকার চাহিদা যা ছিল তাতে সপ্তাহে ১২-১৩টি নৌকা বিক্রি করতে পারতেন। এখন নৌকার চাহিদা কমে গেছে বলে জানালেন এ বিক্রেতা।

 স্থানীয় বাজারের কাঠ কিনে মিস্ত্রি লাগিয়ে নৌকা করেন। আবার অনেক ক্রেতা ভালো মানের নৌকা তৈরির জন্য বেশি টাকা দিয়ে থাকেন। এই নৌকা তৈরি ও বিক্রির ওপরেই রাজিবের পাঁচ জনের সংসার চলছে। বিক্রেতা জাহিদও জানালেন একই তথ্য। একটি নৌকা তৈরিতে গড়ে দেড়দিন লাগে। আর মজুরি দিতে হয় অন্তত এক-দেড় হাজার টাকা। বর্তমানে যে নৌকা বিক্রি চলে তাকে স্থানীয়রা ডিঙি নৌকা বলেন।

উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ব্রিজ, কালভার্ট হওয়ায় মানুষ এখন সড়কপথে যোগাযোগ করছেন। ফলে নৌকার প্রয়োজন আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এই হাটে যে আকৃতির নৌকা বিক্রি হয় তা দিয়ে এক-দুই জনে নদীতে খালে মাছ ধরতে পারেন। অনেকে আবার বড়শি দিয়ে এ নৌকায় মাছ ধরেন। স্থানীয় নদী ও খালে মাছ ধরার লোকজন এখন এই নৌকার মূল ক্রেতা।

নৌকা তৈরীর মিস্ত্রি রশিদ হাওলাদার জানান, তিনি এখনও বাপ-দাদার নৌকা তৈরির এ পেশায় টিকে আছেন। একেকটি নৌকা তৈরিতে এক-দেড় হাজার টাকা মজুরি নেন। দেড়-দুইদিন লাগে একটি নৌকা বানাতে।
নৌকার হাটের পাশের আন্ধারমানিক নদীতে মাছ ধরেন সালেক হাওলাদার। 

বললেন, ‘প্রায় তিন যুগ মাছ ধরছি নৌকায়। এখনও ধরি।’ পুরনো নৌকাটি পাল্টে একটি নৌকা কেনার জন্য বাজারে এসেছেন। ক্রেতা আজিমপুর গ্রামের দুলাল মোল্লা জানালেন, বাড়ি সংলগ্ন খালে মাছ ধরার জন্য সাত হাজার টাকায় একটি ডিঙি নৌকা কিনেছেন। একেকটি নৌকা দুই বছর টিকে। এরপর নষ্ট হয়ে যায়।

এই হাটের খাজনা আদায়কারীর দেয়া তথ্যে জানা গেল, প্রতি সাত দিনে সর্বোচ্চ ৫০টি নৌকা বিক্রি হয়। বছরে পাঁচ শর মতো। তবে এখন নৌকার কদর অনেক কমে গেছে বলে নিশ্চিত করলেন নিতাই সরকার।
 

এসআর

×