ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১ আশ্বিন ১৪৩১

খানা-খন্দে, বড় বড় গর্তে পানি জমে দুর্ভোগ বেড়েছে

দিনভর বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা, যানজট

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৫২, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দিনভর বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা, যানজট

দু’দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় দুর্ভোগে নগরবাসী।

দিনব্যাপী বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এ ছাড়া ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বেশিরভাগ সড়কে খানা-খন্দ ও বড় বড় গর্তে বৃষ্টির পানি জমে দুর্ভোগ বেড়েছে, তীব্র হয়েছে যানজট। এতে অফিসগামী ও অফিসফেরত মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। পাশাপাশি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষকে বৃষ্টিতে ভিজেই বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
সাগরে লঘুচাপের প্রভাবে গত বুধবার বিকেল থেকেই ঢাকায় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এর তীব্রতা আরও বাড়তে থাকে। তাই দিনব্যাপী বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় বলে স্থানীয়রা জানান।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার সপ্তাহে শেষ কর্মদিবস থাকায় সকাল থেকে বিভিন্ন সড়কে গাড়ির চাপ বেশি দেখা গেছে। এর মধ্যে দিনব্যাপী বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন সড়কে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।

অনেক স্থানে বৃষ্টির পানিতে সড়ক ডুবে থাকতে দেখা গেছে। মূল সড়ক ও বিভিন্ন অলি-গলিতে পানি থাকায় সড়কে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। এতে স্কুল-কলেজ ও অফিসগামী মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। বৃষ্টিতে ভিজেই অনেকেই বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
এ ছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন সড়কে খানা-খন্দ ও বড় বড় গর্তের কারণে বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, মানিকনগর, টিটিপাড়া, গোপীবাগ, টিকাটুলী, নারিন্দা, স্বামীবাগ ও দয়াগঞ্জসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়কে বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে এসব এলাকায় সড়কে কাঁদামাটি একাকার অবস্থা তৈরি হয়েছে। খানা-খন্দ ও বড় বড় গর্তের কারণে তিন মিনিটের সড়কে অতিক্রম করতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগছে বলে যাত্রীরা জানান।
রাজধানীর কমলাপুর এলাকায় মনির নামের এক যাত্রী জনকণ্ঠকে বলেন, ‘ঢাকা শহরের মধ্যে সবচেয়ে বাজে রাস্তা হলো মানিকনগর-টিটিপাড়া-মুগদা সড়কে। বড় বড় গর্তের কারণে স্বাভাবিক সময়ে এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকতে হয়। আর বৃষ্টি হলে তো কথাই না। এক-দুই ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়। বৃহস্পতিবার যাত্রাবাড়ী থেকে দুপুর ১২টায় কমলাপুরের উদ্দেশে বাসে উঠি। কমলাপুরে আসতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লেগেছে। এর মধ্যে মানিকনগর থেকে টিটিপাড়া পর্যন্ত সড়কে অতিক্রম করতে এক ঘণ্টা সময় শেষ। অথচ এ সড়কটি তিন মিনিটের পথ নয়।’ এভাবে ঢাকার বেশির ভাগ সড়কের এই বেহাল অবস্থা বলে জানান।
একই অবস্থা রাজধানীর গোপীবাগ সড়কটির। গুলিস্তান বঙ্গভবনের মোড় থেকে শুরু করে ইত্তেফাক মোড় হয়ে টিকাটুলীর রাজধানীর সুপার মার্কেটের মোড় পর্যন্ত সড়কটি বেহাল অবস্থা। খানা-খন্দ সড়কে বৃষ্টির পানি জমে একাকার অবস্থা। সড়কে বড় গর্তের কারণে এক মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করতে আধাঘণ্টা সময় লাগে বলে যাত্রীরা জানান।
সাইফুল ইসলাম নামে যাত্রাবাড়ীর এক যাত্রী জনকণ্ঠকে বলেন, ‘গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে আগে রাস্তা দিয়ে হাঁটা যেত। এখন বৃষ্টি হলেই রাস্তা কাঁদামাটির একাকার অবস্থা তৈরি হয়। এ ছাড়া যানজটের তো অবস্থা খারাপ। এক মিনিটের পথ গোপীবাগ সড়ক অতিক্রম করতে আধাঘণ্টা সময় লেগে যায়। এই সড়কে ওয়াসা ও বিদ্যুতের লাইন বসানোর সময় গর্ত করা হয়েছিল। এখনো সড়কটি বেহাল অবস্থা। বৃষ্টি হলেই এই সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি।
বৃহস্পতিবার বৃষ্টিতে রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে রাজধানীর মালিবাগ, মৌচাক, রাজারবাগ, কাকরাইল, শান্তিনগর, রামপুরা ও মগবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে মৌচাক মোড় থেকে মগবাজার ওয়্যারলেস পর্যন্ত সড়কে পানিতে তলিয়ে যায়। এ সড়কটি স্বাভাবিক অবস্থাতেই যানজটপ্রবণ। পানি জমার প্রভাবে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।
সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়তে দেখা গেছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষকে। রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী কলেজের শিক্ষার্থী ফয়সাল জানান, যানজটের কারণে মৌচাক মোড়ে নেমে গেছি। কিন্তু গাড়ি থেকে নেমেই দেখি পুরো সড়ক পানির নিচে। এ অবস্থায় পায়ের জুতা খুলে সড়ক পার হয়ে ফুটপাতে উঠেছি। মাঝে আরও কয়েক দফা পানিতে নামতে হয়েছে।
বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়া বিভিন্ন সড়কে দেখা দেয় তীব্র যানজট। এই সুযোগে রিক্সাচালকরা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করে। বাধ্য হয়ে অনেককেই ভিজে ভিজে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। যাত্রীদের অভিযোগ সুযোগ পেয়ে রিক্সাচালকরা দ্বিগুণ ভাড়া দাবি করছেন। মগবাজার মোড় থেকে বাংলামোটরে রিক্সার স্বাভাবিক ভাড়া ২০ টাকা। সকালে যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় চালকরা ৩০ টাকাও দাবি করছেন। বাংলামোটর অংশে পানি জমায় ভাড়া ৪০ টাকা চাচ্ছেন রিক্সাচালকরা।
কবির নামে এক যাত্রী জানান, আমার অফিস হাতিরপুলে। সাধারণত মগবাজার থেকে রিক্সায় বাংলামোটরে যাই। এরপর সড়ক পার হয়ে হেঁটে অফিসে যাই। অফিস টাইমে তারা ৩০ টাকা ভাড়া দাবি করে। কিন্তু আজ (বৃহস্পতিবার) ৪০ টাকার কমে কেউ যাবে না।

×