ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১ আশ্বিন ১৪৩১

বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ

পর্যটনের বিকাশে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার তাগিদ

আজাদ সুলায়মান

প্রকাশিত: ২৩:৩১, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পর্যটনের বিকাশে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার তাগিদ

বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের কোল ঘেঁষে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল শৈবাল, প্রবাল ও উপল। এগুলো সেই এরশাদ আমলের তৈরি। প্রথমদিকে এগুলো জনপ্রিয়তার শীর্ষে থেকে লাভ করতে পারলেও দিনে দিনে লোকসানে গড়িয়েছে। এখন পর্যটকরা এগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তারা এগুলোর চেয়ে আশপাশের হোটেল-মোটেলগুলোতে বেশি ছোটে। কেন এগুলোর বেহাল দশা?

প্রশ্ন করা হলে একজন পর্যটকের সোজা উত্তরÑসেই কবেকার মান্ধাতার আমলে তৈরি করা মোটেলগুলোতে থাকার উপায় নেই। খাট ভাঙা, ছারপোকার উপদ্রব, উটকো গন্ধ ও জরাজীর্ণ অবকাঠামোর দরুন মানুষ যেতে চায় না। শুধু কক্সবাজার নয়, দেশের অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রেরও একই দশা। এ ছাড়া বিগত ৫ ব্ছরে তৈরি করা হয়নি হাতে নেওয়া পর্যটনের মাস্টার প্ল্যান। এমন দৈন্যদশায় কী করণীয় সেটাও জানে না পর্যটন করপোরেশন। তারা শুধু অজুহাত দেখান টাকা নেই, পয়সা নেই, সংস্কার করব কিভাবে? ভবিষ্যতে যদি বিদেশী বিনিয়োগ আসে তাহলে হয়ত কিছু করা সম্ভব।

পর্যটন করপোরেশন তিন যুগ ধরে এমনই আশার আলোর অপেক্ষায় রয়েছে। সরকার নিয়ন্ত্রিত পর্যটন করপোরেশনের এমন বেহাল দশার মধ্যেই আজ শুক্রবার দেশে পালন করা হচ্ছে বিশ্ব পর্যটন দিবস। প্রতিবারের মতো এবারও গতানুগতিক দিবসটি পালন করা হচ্ছে র‌্যালি, সেমিনার, লাইভ কুকিং শো, বক্তৃতা আর একটি কালচারাল অনুষ্ঠানের। এর বাইরে কিছুই নেই পর্যটন করপোরেশনের। দেশের সরকারি- বেসরকারি হোটেল, মোটেল ও এয়ারলাইন্সগুলো কিছুটা ডিসকাউন্ট প্যাকেজ ঘোষণা ছাড়া আর তেমন কিছুই নেই এবারও।

এমনকি ছাত্র- জনতার গণঅভ্যুত্থানের আগে-পরে দেওয়া বিদেশীদের ভ্রমণ সতর্কতার নোটিস বহাল থাকাবস্থায় পালন করা হচ্ছে এবারের বিশ্ব পর্যটন দিবস। জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা ১২৭০ মিলিয়ন।যা ১৯৫০ সালে ছিল মাত্র ২৫ মিলিয়ন। এ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে-এ বছর প্রায় ১৩৯ কোটি ৫৬ লাখ ৬০ হাজার পর্যটক সারাবিশ্ব ভ্রমণ করবেন। বিগত ৬৭ বছরে বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে ৫০ গুণ। 
এমন একটি সম্ভাবনাময় শিল্প বিশ্বব্যাপী বিকশিত হলেও বাংলাদেশে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত ও ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের মতো আকর্ষণীয় স্পট থাকার পরও বাংলাদেশ সেটাকে বাণিজ্যিকভাবে বিশ্বব্যাপী ছড়াতে পারেনি। খুব নিকট ভবিষ্যতেও যে পারা সম্ভব হবে তেমন সম্ভাবনাও ক্ষীণ। তারপরও বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আজ দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব পর্যটন দিবস। দিবসটি উপলক্ষে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব নাসরীন জাহান বলেছেন, তিনি বলেন, দেশের মোট জিডিপির শতকরা ৩.০২ শতাংশ আসে এ শিল্প থেকে।

জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২-এ পর্যটন শিল্পের ১২টি উপখাতের উল্লেখ রয়েছে। এ শিল্পের সার্বিক উন্নয়নে ট্যুরিজম মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের তরুণ প্রজন্মসহ পর্যটন শিল্পের নিবিড় এবং টেকসই উন্নয়নে দেশের জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে ‘পর্যটন সপ্তাহ’ ও ‘পর্যটন মাস’ উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

দেশের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্যে পরিণত করতে আরও নতুন নতুন উদ্যোগ নেওয়া হবে। পর্যটন শুধু এককভাবে সরকারের কাজ নয়। জনসাধারণ এর মূল অংশীদার। 
তাই পর্যটন শিল্পের বিকাশে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

×