ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১ আশ্বিন ১৪৩১

পদ্মায় পানি বৃদ্ধি

দৌলতপুরে ডুবেছে ৩৪ গ্রাম

নিজস্ব সংবাদদাতা, দৌলতপুর, কুষ্টিয়া

প্রকাশিত: ২১:৪০, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দৌলতপুরে ডুবেছে ৩৪ গ্রাম

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পানিতে ডুবে যাওয়া সড়ক ও নাটোরের লালপুরে ফসলি জমিতে পানি

দৌলতপুরে বৃদ্ধি পেয়েছে পদ্মার পানি। ডুবেছে আবাদি ফসল। বন্ধ রয়েছে চিলমারীর চরের বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কক্ষের পাঠদান কার্যক্রম। নিম্নচাপের প্রভাবে ভারি বৃষ্টি এবং ভারতের উজান থেকে নেমে আসা বৃষ্টির পানিতে ফুলে-ফেঁপে উঠেছে পদ্মার পানি। এর ফলে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়ায় দৌলতপুরের উপজেলার দুই ইউনিয়নের পদ্মার চরের অন্তত ৩৪টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভাঙন ও বন্যার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন তারা। 
পদ্মায় পানি বৃদ্ধির ফলে চিলমারী ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। তলিয়েছে যাতায়াতের রাস্তা। ডুবেছে রামকৃষ্ণপুর, চিলমারী, মরিচা ও ফিলিপনগর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের মাশকলাইসহ আবাদি জমি ও ফসল। এর আগে আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে নদীতে পানি বাড়লেও শেষের দিকে তা কমতে শুরু করে। তবে ফের পদ্মা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে। 
পদ্মায় পানি বৃদ্ধির বিষয়ে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবোর) ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, গত সোমবার সকাল ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিন দিনে নদীতে পানি বেড়েছে ২৯ সেন্টিমিটার। পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত পানি প্রবাহিত হচ্ছিল ১২ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটারে, যা বিপৎসীমার ১ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার নিচে। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন পাবনা ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম। 

রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজ ম-ল জানান, রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চাললের ১৬টি গ্রামের চারপাশে পানি চলে আসায় তারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চরের নিচু এলাকায় বসবাসরত দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষের বাড়িতে পানি ঢুকেছে। পদ্মার চরের প্রায় সব আবাদি জমি তলিয়ে গেছে। এতে মাশকলাই চাষিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে অচিরেই চরের সব গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়বে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
চরে পানিবন্দি হয়ে পড়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রমের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চরের কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। পরিস্থিতির  অবনতি হলে তা পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো এখনো স্বাভাবিক রয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেন। 
চরে তলিয়ে যাওয়া ফসলি জমি ও কৃষি জমির ক্ষতির পরিমাণও আগের তুলনায় বেড়েছে অনেকগুণ। পানিতে তলিয়ে যাওয়া ফসলি জমির বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার নুরুল ইসলাম বলেন, পদ্মায় পানি বাড়ার কারণে এখন পর্যন্ত চার ইউনিয়নের অন্তত ১০০ হেক্টর জমির মাশকলাই ডুবে যাওয়ার খবর পেয়েছি। এবার চরে ২ হাজার ৩২৩ হেক্টর জমিতে মাশকলাইয়ের চাষ হয়েছে। পানি বাড়লে ফসলের আরও ক্ষতি হবে বলে তিনি জানান। 
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ওবায়দুল্লাহ স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। আমরা পানিবন্দি হয়ে পড়া এলাকাগুলোর খোঁজখবর রাখছি।
লালপুরে পানির নিচে ফসল
নিজস্ব সংবাদদাতা, লালপুর, নাটোর থেকে জানান, পদ্মা নদীর পানি আকস্মিক বৃদ্ধি পাওয়ায় লালপুর উপজেলার চরাঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বিঘা ফসল জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে।  বৃহস্পতিবার  ঈশ্বরদী হার্ডিং ব্রিজ পয়েন্টে পানির লেভেল ১৩ দশমিক ৩২ মিটার বলে জানা গেছে। সে অনুযায়ী বর্তমানে লালপুরে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ১ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার ৪১০ হেক্টর আখ, ৪৫ হেক্টর শাকসবজি, ১০ হেক্টর কলা ও ১০ হেক্টর মাষকালাই পানিতে তলিয়ে গেছে।

এ ছাড়া, চরাঞ্চল গোখাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছে শতাধিক গরু মহিষ খামারিরা। সরজমিন দেখা গেছে, গত তিনদিন পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিমতলি, চরজাজিরা, নওশারা সুলতানপুর, চাকলা বিনোদপুর, দিয়াড়শংকরপুর, আরাজি বাকনাই, রসুলপুর ও মোহরকয়ার আংশিকসহ প্রায় ১৮টি চর এলাকা পানিতে প্লাবিত হওয়ায়।  প্রায় সাড়ে তিন হাজার বিঘা ফসলি জমি পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

এ বিষয়ে নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, আগামী পাঁচ থেকে সাত দিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড় বলেন, নদীর পানি কমে গেলে ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে। এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মেহেদী হাসান বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষি অফিস সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।

×